পদ্মা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি ফরিদপুর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শনিবার ২১ আগষ্ট সকালে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলা সুলতান মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন পদ্মার পানি আরো বাড়বে।
পানি বৃদ্ধির ফলে ফরিদপুরের সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থ চ্যানেল, চরমাধবদিয়া ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ২০ গ্রাম এবং সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়ায় সেখানকার কমপক্ষে ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকায় পদ্মার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষের মাঝে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। পানি প্রবেশের কারণে ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ধান ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানির কারণে অনেক রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় ফরিদপুরের সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী দুটি ইউনিয়ন নর্থ চ্যানেল ও ডিক্রিরচরের অধিকাংশ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, হঠাৎ করেই পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশকিছু গ্রাম ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিনই প্রাবিত হওয়া গ্রামের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের তরফ থেকে এবং জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে গ্রামের মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিরোগ বেড়েছে। তার ইউনিয়নে ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। চরাঞ্চলের গোটা এলাকায় পানিতে প্লাবিত হওয়ায় গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এদিকে হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলায়। ফলে এসব উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ছে।
পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চরভদ্রাসন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মাসুম রোজা। এ সময় তিনি জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে প্রাবিত গ্রামগুলোয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পানিবন্দি মানুষের জন্য শুকনো খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইউএনও মাসুম রেজা বলেন, এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে খুব দ্রু এমপি ডাঙ্গী ও বালিয়া ডাগী ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করবে। যার কারণে আমরা এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবার ও ওযুধের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তা ছাড়া পানিবন্দি এসব মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে সদরপুর উপজেলায়ও পদ্মার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে প্রাবিত হয়ে পড়েছে চর নাসিরপুর ও নারিকেল বাড়ি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ চর নাসিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আক্কাস আলী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি প্রবেশ করে অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, যেসব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তাদের জন্য আমরা শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছি। আর বন্যা পরিস্থিতি যদি খারাপের দিকে যায় সেজন্য আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করছি। তা ছাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ মাখছি। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হলে খুব দ্রুত পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে।