০৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নৃংশসভাবে বড় ভাইকে খুন করে নিজেই মামলার বাদি

খুনি নিজেই বাদী হয়ে বড় ভাইয়ের খুনের বিচার চেয়েছেন। কিশোরগঞ্জে জমিজমা নিয়ে বিরোধ এবং নেশা করতে বাধা দেওয়ায় আপন বড় ভাই স্বপন মিয়াকে (৩৮) নৃশংসভাবে খুন করে মোঃ রিপন মিয়া(৩৫)। পরে নিজেই হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্বপন মিয়া যখন খুন হন তখন তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা ছিলেন। স্বামীকে হারানোর তিন দিন পর তিনি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই জানায়, ভিকটিমের আপন ছোট ভাই তাকে এসিড মেরে পানিতে ডুবিয়ে ঘাড় ভেঙ্গে হত্যা করে। রিপন মিয়াই পরবর্তীতে ভাই হত্যায় বাদী হয়ে এজাহারে ০৩ জনকে সন্দিগ্ধ আসামী করে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
পিবিআই’র তদন্তে জানা যায়,স্বপন মিয়ার চার ভাই ও এক বোন। ভাইদের মধ্যে ভিকটিমের বড় ভাই খোকন মিয়া (৪০) সৌদি প্রবাসি। ভিকটিম স্বপন মিয়া স্থানীয় বাজারে চা বিক্রেতা। সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ রিপন মিয়া ভিকটিমের আপন ছোট ভাই। রিপন মিয়া পূর্বেই মালয়েশিয়া প্রবাসি ছিল।

ঘটনার ২ থেকে ৩ বছর পূর্বে মোঃ রিপন মিয়া মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসে। করোনার কারনে উক্ত আসামী বিদেশে না যেতে পেরে বাড়ীর পাশে মাছের খামারসহ কৃষি জমি আবাদ করতো। ভিকটিমের সবার ছোট ভাই সোহেল মিয়া (৩১)একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। খুনের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ জেলা পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেনের তত্ত্বাবধানে মোঃ রিপন মিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আপন বড় ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে রিপন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামীকে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। শনিবার কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন রিপন মিয়া। ঘটনার সঙ্গে আরও পাঁচজনের সংশ্লিষ্টতার কথা আদালতকে জানান আসামি। এই খুনের ঘটনায় আরও তিন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পিবিআই।

পিবিআই জানায়, গ্রেফতারকৃত রিপন মিয়া নিয়মিতভাবে তার পরিচিত কয়েকজন বন্ধুর সাথে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করতো। এছাড়া স্বপন মিয়া এর সাথে তার ছোট ভাই আসামী মোঃ রিপন মিয়ার পারিবারিক বিভিন্ন কারনসহ পৈতৃক জমিজমা বন্টন নিয়ে বিরোধ ছিল। ছোট ভাইকে নেশা করতে স্বপন মিয়া বাধা দিত। নেশার বিষয়টি মাকে ভিকটিম নিয়মিতভাবে জানানোর কারণে ছোট ভাই মোঃ রিপন মিয়া স্বপন মিয়ার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। নিজ বাড়ী হতে নতুন রাস্তা নির্মানের খরচ নিয়ে বড়ভাইর ক্ষিপ্ত ছিল রিপন।

এসব বিরোধের জেরে গত ২৫ জুলাই রাত ১০ টার দিকে মোঃ রিপন মিয়াসহ তার পূর্ব পরিচিত অপরাপর আসামী আব্দুর রফ, ইমান আলী, সবুজ, বুলবুল আলম (আলকাছ) মিয়ার পুকুর পাড়ে বসে স্বপন মিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী রিপন মিয়ার দেওয়া ২শ টাকায় ২৬ জুলাই ইমান আলী এবং বুলবুল ভৈরব বাজার বাইন্নাপট্রি থেকে এসিড কিনে আনে। ওইদিন রাত ১২ টার দিকে এসিডের বোতলসহ আসামীরা গ্রামের লতিফ মাকের্টের ভিতরে অবস্থান করে।

ভিকটিম স্বপন মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে লতিফ মার্কেটের সামনে আসলে আসামীরা সবাই ঘিরে ধরে এবং বুলবুল ও সবুজ পিছন থেকে গামছা দিয়ে নাকে মুখে প্যাছিয়ে ধরে। ইমান আলী ও আব্দুর রব স্বপনকে জোড় করে বিভারটেক গাড়ীতে উঠিয়ে ফেলে। গাড়ীতে ওঠার পর ছোট রাজাকাটা কবর স্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্বপন মিয়া বাঁচার জন্য কৌশলে উক্ত আসামীগণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে চলন্ত বিভারটেক থেকে লাফ দিয়ে দৌড় দিলে আসামী ইমান আলী তার হাতে থাকা এসিডের বোতল স্বপন মিয়ার নাকমুখ লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে। উক্ত এসিড ভিকটিক স্বপন মিয়ার চোখ, মুখ ও নাকে লাগলে ভিকটিম স্বপন মিয়া বাঁচার জন্য জোরে চিৎকার দিতে দিতে দৌড়ে পাশে বিলের পানিতে লাফ দেয়।

ভিকটিম পানিতে লাফ দিয়ে পরার সাথে সাথে উপরোক্ত পাঁচজন আসামী বিলের পানিতে লাফ দিয়ে ধরে ফেলে। আসামীরা স্বপনকে পানির নিচে চাপ দিয়ে ধরে রাখে। এসময় আসামী রিপন, ইমান আলী এবং আব্দুর রব ভিকটিমের হাত পা জোর করে ধরে রাখে এবং আসামী বুলবুল এবং সবুজ মিয়া মাথা ধরে জোর করে ঘাড় ভেঙ্গে ফেলে। এতে তার তাৎক্ষনিক মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে আসামীরা ভিবারটেকের ড্রাইভারের সহযোগিতায় লাশ বিল থেকে উঠিয়ে ভিবারটেকে তোলে। ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমের লাশ ৫০ থেকে ৬০ গজ দূরে নিয়ে একটি কালভাটের নিচে রেখে আসে। ঘটনার দুই দিন পরে ২৮ জুলাই ভিকটিমের লাশ কালবাটের নিকট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় ভৈরব থানায় হত্যা মামলা রুজু হলে কিশোরগঞ্জ পিবিআই ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

জনপ্রিয়

সীমান্তে বিএসএফের পুশইনকৃত ১৬ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করলো বিজিবি

নৃংশসভাবে বড় ভাইকে খুন করে নিজেই মামলার বাদি

প্রকাশিত : ১২:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

খুনি নিজেই বাদী হয়ে বড় ভাইয়ের খুনের বিচার চেয়েছেন। কিশোরগঞ্জে জমিজমা নিয়ে বিরোধ এবং নেশা করতে বাধা দেওয়ায় আপন বড় ভাই স্বপন মিয়াকে (৩৮) নৃশংসভাবে খুন করে মোঃ রিপন মিয়া(৩৫)। পরে নিজেই হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্বপন মিয়া যখন খুন হন তখন তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা ছিলেন। স্বামীকে হারানোর তিন দিন পর তিনি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই জানায়, ভিকটিমের আপন ছোট ভাই তাকে এসিড মেরে পানিতে ডুবিয়ে ঘাড় ভেঙ্গে হত্যা করে। রিপন মিয়াই পরবর্তীতে ভাই হত্যায় বাদী হয়ে এজাহারে ০৩ জনকে সন্দিগ্ধ আসামী করে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
পিবিআই’র তদন্তে জানা যায়,স্বপন মিয়ার চার ভাই ও এক বোন। ভাইদের মধ্যে ভিকটিমের বড় ভাই খোকন মিয়া (৪০) সৌদি প্রবাসি। ভিকটিম স্বপন মিয়া স্থানীয় বাজারে চা বিক্রেতা। সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ রিপন মিয়া ভিকটিমের আপন ছোট ভাই। রিপন মিয়া পূর্বেই মালয়েশিয়া প্রবাসি ছিল।

ঘটনার ২ থেকে ৩ বছর পূর্বে মোঃ রিপন মিয়া মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসে। করোনার কারনে উক্ত আসামী বিদেশে না যেতে পেরে বাড়ীর পাশে মাছের খামারসহ কৃষি জমি আবাদ করতো। ভিকটিমের সবার ছোট ভাই সোহেল মিয়া (৩১)একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। খুনের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ জেলা পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেনের তত্ত্বাবধানে মোঃ রিপন মিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আপন বড় ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে রিপন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামীকে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। শনিবার কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন রিপন মিয়া। ঘটনার সঙ্গে আরও পাঁচজনের সংশ্লিষ্টতার কথা আদালতকে জানান আসামি। এই খুনের ঘটনায় আরও তিন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে পিবিআই।

পিবিআই জানায়, গ্রেফতারকৃত রিপন মিয়া নিয়মিতভাবে তার পরিচিত কয়েকজন বন্ধুর সাথে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করতো। এছাড়া স্বপন মিয়া এর সাথে তার ছোট ভাই আসামী মোঃ রিপন মিয়ার পারিবারিক বিভিন্ন কারনসহ পৈতৃক জমিজমা বন্টন নিয়ে বিরোধ ছিল। ছোট ভাইকে নেশা করতে স্বপন মিয়া বাধা দিত। নেশার বিষয়টি মাকে ভিকটিম নিয়মিতভাবে জানানোর কারণে ছোট ভাই মোঃ রিপন মিয়া স্বপন মিয়ার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। নিজ বাড়ী হতে নতুন রাস্তা নির্মানের খরচ নিয়ে বড়ভাইর ক্ষিপ্ত ছিল রিপন।

এসব বিরোধের জেরে গত ২৫ জুলাই রাত ১০ টার দিকে মোঃ রিপন মিয়াসহ তার পূর্ব পরিচিত অপরাপর আসামী আব্দুর রফ, ইমান আলী, সবুজ, বুলবুল আলম (আলকাছ) মিয়ার পুকুর পাড়ে বসে স্বপন মিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী রিপন মিয়ার দেওয়া ২শ টাকায় ২৬ জুলাই ইমান আলী এবং বুলবুল ভৈরব বাজার বাইন্নাপট্রি থেকে এসিড কিনে আনে। ওইদিন রাত ১২ টার দিকে এসিডের বোতলসহ আসামীরা গ্রামের লতিফ মাকের্টের ভিতরে অবস্থান করে।

ভিকটিম স্বপন মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে লতিফ মার্কেটের সামনে আসলে আসামীরা সবাই ঘিরে ধরে এবং বুলবুল ও সবুজ পিছন থেকে গামছা দিয়ে নাকে মুখে প্যাছিয়ে ধরে। ইমান আলী ও আব্দুর রব স্বপনকে জোড় করে বিভারটেক গাড়ীতে উঠিয়ে ফেলে। গাড়ীতে ওঠার পর ছোট রাজাকাটা কবর স্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্বপন মিয়া বাঁচার জন্য কৌশলে উক্ত আসামীগণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে চলন্ত বিভারটেক থেকে লাফ দিয়ে দৌড় দিলে আসামী ইমান আলী তার হাতে থাকা এসিডের বোতল স্বপন মিয়ার নাকমুখ লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে। উক্ত এসিড ভিকটিক স্বপন মিয়ার চোখ, মুখ ও নাকে লাগলে ভিকটিম স্বপন মিয়া বাঁচার জন্য জোরে চিৎকার দিতে দিতে দৌড়ে পাশে বিলের পানিতে লাফ দেয়।

ভিকটিম পানিতে লাফ দিয়ে পরার সাথে সাথে উপরোক্ত পাঁচজন আসামী বিলের পানিতে লাফ দিয়ে ধরে ফেলে। আসামীরা স্বপনকে পানির নিচে চাপ দিয়ে ধরে রাখে। এসময় আসামী রিপন, ইমান আলী এবং আব্দুর রব ভিকটিমের হাত পা জোর করে ধরে রাখে এবং আসামী বুলবুল এবং সবুজ মিয়া মাথা ধরে জোর করে ঘাড় ভেঙ্গে ফেলে। এতে তার তাৎক্ষনিক মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে আসামীরা ভিবারটেকের ড্রাইভারের সহযোগিতায় লাশ বিল থেকে উঠিয়ে ভিবারটেকে তোলে। ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমের লাশ ৫০ থেকে ৬০ গজ দূরে নিয়ে একটি কালভাটের নিচে রেখে আসে। ঘটনার দুই দিন পরে ২৮ জুলাই ভিকটিমের লাশ কালবাটের নিকট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় ভৈরব থানায় হত্যা মামলা রুজু হলে কিশোরগঞ্জ পিবিআই ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।