০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৯ বছরে ২৯ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০ হাজার

সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনার আতুরঘর। আর যানবাহনগুলো ঘাতক-দৈত্য। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে সুস্থ দেহে ঘরে ফিরে আসা দায়। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছে, কেউ বরণ করছে পঙ্গুত্ব, আবার কেউ হারাচ্ছে মূল্যবান জীবন। গত নয় বছরের পরিসংখ্যান রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। শুধু এই সময়ে প্রাণ ঝরেছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ৯ বছর ধরে বাংলাদেশের সড়কে ঘটা দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের তথ্য সংগ্রহ করছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে তারা দুর্ঘটনার আদ্যোপান্ত সংগ্রহ করে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থাটির প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সড়কে ছোট-বড় ২৮ হাজার ৯৮৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৫০ হাজার ৪৮২ জন মানুষের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০১৪ সালে। সে বছর ৮ হাজার ৫৮২ জন মানুষ মারা যান। সবচেয়ে কম মানুষ মারা গেছে ২০১৬ সালে ৪ হাজার ১৪৪ জন। গতবছর মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৮৯ জনের।

এছাড়া ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৮৬০, ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬৪৫, ২০১৫ সালে ৫ হাজার ৩ জন, ২০১৩ সালে ৫ হাজার ১৭২ ও ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫ হাজার ৮৬০ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮৯২ জন।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯ বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৮ হাজার ৯৮৪টি। আর একই সময়ে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশের বেশি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিবারের বাধার পরও যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে মোটরসাইকেল কেনেন ব্যাংক কর্মকর্তা আরমান হোসাইন। জুলাইয়ে উত্তরার একটি সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

আরমান বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরায় আসতে হয় প্রতিদিন। যাতায়াতে সুবিধার জন্য মোটরসাইকেল কিনি। কিন্তু সড়কে নেমে দেখি, সবাই বেপরোয়াভাবে চলে। গত জুলাইয়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাস ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। বিমানবন্দরের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। বাইকের স্পিড কম থাকায় খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। তবু এখন পরিবারের সদস্যরা খুবই চিন্তা করে। বাইক বিক্রি করেও দিতে বলেছে কেউ কেউ।

এমন ঘটনা আমাদের নিত্যসঙ্গী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে যান হিসেবে মোটরসাইকেল জনপ্রিয় হয়েছে বাংলাদেশে। ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কের বেহাল দশা, অপেশাদার সড়ক, দ্রুতগতি ও কম গতির যান একই সঙ্গে চলাচল করাসহ একাধিক কারণে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।

নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৬ সাল থেকে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেশি বাড়ায় সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও বেড়েছে। যেহেতু মোটরসাইকেল তরুণ প্রজন্মের বাহন, দুর্ঘটনায় তরুণদের মৃত্যুও হচ্ছে বেশি।

এদিকে পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩ হাজার ২৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৩ হাজার ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি।

গত বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২৯১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আর চলতি বছর একই সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩ হাজার ২৫৯টি। অর্থাৎ, দুর্ঘটনা বেড়েছে ৪২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

পুলিশের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সংখ্যা ছিল ৫৪৩।

এছাড়া গত বছরের প্রথম সাত মাসে ২ হাজার ২১১ জন মানুষ সড়কে নিহত হলেও চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫ জনে। অর্থাৎ, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে ৪০ শতাংশ।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে যেসব বিষয় শনাক্ত হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে যে সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও নেই।

‘সড়ক নিরাপদ করতে যেসব উপাদান দরকার, তার মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া কিছু হয় না। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে গতি বাড়ছে। কিন্তু গতি নিরাপদ করতে যেসব কাজ করা দরকার সেগুলো হচ্ছে না।’

সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন না হলে কোনোভাবেই কমবে না দুর্ঘটনা। এই আইন বাস্তবায়নের অভাবে বিপজ্জনক ওভারটেকিং করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা তো রয়েছেই। এছাড়া মাদকসেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে সড়কে কমছে না দুর্ঘটনা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সরকার এটি কার্যকর করেনি। আইনটি পাস হওয়ার পরপরই এটি পরিবর্তনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা দুই দফায় ধর্মঘট ডাকে। শ্রমিকদের দাবি আইনটির অধীনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য করতে হবে এবং জরিমানার টাকা কমাতে হবে। সেই থেকে কাগজে-কলমে আটকে আছে আইনটি।

আইনের বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ চেয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, আইন তো আছে। সেটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনের সাজা বা অন্য কিছুকে আপাতত গুরুত্ব না দিয়ে আইনের বাস্তবায়ন শুরু করা প্রয়োজন। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে অল্প টাকা জরিমানা হোক, দু’এক বছর সাজা হোক। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন চাই।

তবে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বিআরটিএকে আরও বেশি ডিজিটাল করা ও নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার প্রয়োজন বলে মনে করেন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, সারাদেশেই সড়ক বাড়ছে। যানবাহন বাড়ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখনো সেকেলে রয়ে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এস শিকদার

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

৯ বছরে ২৯ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০ হাজার

প্রকাশিত : ০২:১৩:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অক্টোবর ২০২১

সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনার আতুরঘর। আর যানবাহনগুলো ঘাতক-দৈত্য। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে সুস্থ দেহে ঘরে ফিরে আসা দায়। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছে, কেউ বরণ করছে পঙ্গুত্ব, আবার কেউ হারাচ্ছে মূল্যবান জীবন। গত নয় বছরের পরিসংখ্যান রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। শুধু এই সময়ে প্রাণ ঝরেছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ৯ বছর ধরে বাংলাদেশের সড়কে ঘটা দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের তথ্য সংগ্রহ করছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে তারা দুর্ঘটনার আদ্যোপান্ত সংগ্রহ করে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সংস্থাটির প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সড়কে ছোট-বড় ২৮ হাজার ৯৮৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৫০ হাজার ৪৮২ জন মানুষের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ২০১৪ সালে। সে বছর ৮ হাজার ৫৮২ জন মানুষ মারা যান। সবচেয়ে কম মানুষ মারা গেছে ২০১৬ সালে ৪ হাজার ১৪৪ জন। গতবছর মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৮৯ জনের।

এছাড়া ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৮৬০, ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬৪৫, ২০১৫ সালে ৫ হাজার ৩ জন, ২০১৩ সালে ৫ হাজার ১৭২ ও ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫ হাজার ৮৬০ জন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৭৪ হাজার ৮৯২ জন।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯ বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৮ হাজার ৯৮৪টি। আর একই সময়ে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশের বেশি।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিবারের বাধার পরও যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে মোটরসাইকেল কেনেন ব্যাংক কর্মকর্তা আরমান হোসাইন। জুলাইয়ে উত্তরার একটি সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

আরমান বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে উত্তরায় আসতে হয় প্রতিদিন। যাতায়াতে সুবিধার জন্য মোটরসাইকেল কিনি। কিন্তু সড়কে নেমে দেখি, সবাই বেপরোয়াভাবে চলে। গত জুলাইয়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি বাস ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। বিমানবন্দরের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। বাইকের স্পিড কম থাকায় খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। তবু এখন পরিবারের সদস্যরা খুবই চিন্তা করে। বাইক বিক্রি করেও দিতে বলেছে কেউ কেউ।

এমন ঘটনা আমাদের নিত্যসঙ্গী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে যান হিসেবে মোটরসাইকেল জনপ্রিয় হয়েছে বাংলাদেশে। ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কের বেহাল দশা, অপেশাদার সড়ক, দ্রুতগতি ও কম গতির যান একই সঙ্গে চলাচল করাসহ একাধিক কারণে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।

নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৬ সাল থেকে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেশি বাড়ায় সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও বেড়েছে। যেহেতু মোটরসাইকেল তরুণ প্রজন্মের বাহন, দুর্ঘটনায় তরুণদের মৃত্যুও হচ্ছে বেশি।

এদিকে পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩ হাজার ২৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৩ হাজার ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি।

গত বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২৯১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আর চলতি বছর একই সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩ হাজার ২৫৯টি। অর্থাৎ, দুর্ঘটনা বেড়েছে ৪২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

পুলিশের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সংখ্যা ছিল ৫৪৩।

এছাড়া গত বছরের প্রথম সাত মাসে ২ হাজার ২১১ জন মানুষ সড়কে নিহত হলেও চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫ জনে। অর্থাৎ, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে ৪০ শতাংশ।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনা কমাতে যেসব বিষয় শনাক্ত হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে যে সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও নেই।

‘সড়ক নিরাপদ করতে যেসব উপাদান দরকার, তার মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া কিছু হয় না। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে গতি বাড়ছে। কিন্তু গতি নিরাপদ করতে যেসব কাজ করা দরকার সেগুলো হচ্ছে না।’

সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন না হলে কোনোভাবেই কমবে না দুর্ঘটনা। এই আইন বাস্তবায়নের অভাবে বিপজ্জনক ওভারটেকিং করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা তো রয়েছেই। এছাড়া মাদকসেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে সড়কে কমছে না দুর্ঘটনা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইনটি পাস হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সরকার এটি কার্যকর করেনি। আইনটি পাস হওয়ার পরপরই এটি পরিবর্তনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা দুই দফায় ধর্মঘট ডাকে। শ্রমিকদের দাবি আইনটির অধীনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য করতে হবে এবং জরিমানার টাকা কমাতে হবে। সেই থেকে কাগজে-কলমে আটকে আছে আইনটি।

আইনের বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ চেয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, আইন তো আছে। সেটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনের সাজা বা অন্য কিছুকে আপাতত গুরুত্ব না দিয়ে আইনের বাস্তবায়ন শুরু করা প্রয়োজন। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে অল্প টাকা জরিমানা হোক, দু’এক বছর সাজা হোক। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন চাই।

তবে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বিআরটিএকে আরও বেশি ডিজিটাল করা ও নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার প্রয়োজন বলে মনে করেন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, সারাদেশেই সড়ক বাড়ছে। যানবাহন বাড়ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখনো সেকেলে রয়ে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এস শিকদার