০৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাষা সৈনিকদের আহাজারি খবর নেন না কেউ!

মহান ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের যেসব ভাষা সৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ২জন আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা হলেন- আবদুল কাদের ভাসানী, মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ। বয়সের ভাড়ে ন্যুয়ে পড়া ওই দুই ভাষা সৈনিকের শরীরের অবস্থা ভাল নেই। প্রশাসন থেকে কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাঁদের তেমন
খোঁজ খবর রাখছেন না বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। জীবিত ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ও জহির উদ্দিন আহম্মদ-এঁর বাড়িতে
গিয়ে জানা যায়, তাঁদের শরীরের অবস্থা ভাল নেই। এসময় তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছর ২১ফেব্রয়ারী মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই জেলা প্রশাসন রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণ পত্র প্রেরণ করে ডেকে
নিয়ে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু বছরের বাকী ১১মাস তাদের কেউ খোঁজ রাখেন না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশের ন্যায় সক্রীয় ভুমিকায় ছিল লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। জেলায় জীবিত ও
প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২জন ভাষা সৈনিক ছিলেন। এঁদের মধ্যে ১০জন প্রয়াত। তাঁরা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল বুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা
বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম। এদিকে এখনও ২জন জীবিত রয়েছেন। তাঁরা হলেন- আবদুল কাদের ভাসানী, মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ। জানা যায়, ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলন ভাষা
সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা- ক্লাসবর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তান বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা। জীবিত ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ও মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আবদুল কাদের ভাসানী সম্পাদক ও জহির উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন সভাপতি। ২৩ ফেব্রুয়ারি
হরতাল সমর্থনে আবদুল কাদের ভাসানী ও মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের বাড়ী পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতারের জন্য বিদ্যালয় গেটে আসলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলিশকে বিদ্যালয়ে প্রবেশের
অনুমতি না দিলে পুলিশ বাহিরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যায়। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কৌশল ছাত্রনেতাগণ বিদ্যালয়ের পিছনে সুইপার কলোনি দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তাঁরা চিহ্নিত হলে পুলিশ কারণে-অকারণে তাঁদের ধরে এনে
থানায় আটকিয়ে রাখা শুরু করলে তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তাদের
আন্দোলন চালিয়ে যান। জীবিত ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ১৯৭১-এর মহান
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙ্গা (হলদীটারী) গ্রামে এবং জীবিত অপর ভাষা সৈনিক জহির উদ্দিন আহম্মদ একই ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ভাষা সৈনিকদের আহাজারি খবর নেন না কেউ!

প্রকাশিত : ০৪:২২:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মহান ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের যেসব ভাষা সৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ২জন আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা হলেন- আবদুল কাদের ভাসানী, মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ। বয়সের ভাড়ে ন্যুয়ে পড়া ওই দুই ভাষা সৈনিকের শরীরের অবস্থা ভাল নেই। প্রশাসন থেকে কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাঁদের তেমন
খোঁজ খবর রাখছেন না বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। জীবিত ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ও জহির উদ্দিন আহম্মদ-এঁর বাড়িতে
গিয়ে জানা যায়, তাঁদের শরীরের অবস্থা ভাল নেই। এসময় তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছর ২১ফেব্রয়ারী মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই জেলা প্রশাসন রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণ পত্র প্রেরণ করে ডেকে
নিয়ে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু বছরের বাকী ১১মাস তাদের কেউ খোঁজ রাখেন না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশের ন্যায় সক্রীয় ভুমিকায় ছিল লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। জেলায় জীবিত ও
প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২জন ভাষা সৈনিক ছিলেন। এঁদের মধ্যে ১০জন প্রয়াত। তাঁরা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল বুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা
বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম। এদিকে এখনও ২জন জীবিত রয়েছেন। তাঁরা হলেন- আবদুল কাদের ভাসানী, মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ। জানা যায়, ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলন ভাষা
সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা- ক্লাসবর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তান বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা। জীবিত ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ও মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আবদুল কাদের ভাসানী সম্পাদক ও জহির উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন সভাপতি। ২৩ ফেব্রুয়ারি
হরতাল সমর্থনে আবদুল কাদের ভাসানী ও মোঃ জহির উদ্দিন আহম্মদ এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের বাড়ী পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতারের জন্য বিদ্যালয় গেটে আসলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলিশকে বিদ্যালয়ে প্রবেশের
অনুমতি না দিলে পুলিশ বাহিরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যায়। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কৌশল ছাত্রনেতাগণ বিদ্যালয়ের পিছনে সুইপার কলোনি দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তাঁরা চিহ্নিত হলে পুলিশ কারণে-অকারণে তাঁদের ধরে এনে
থানায় আটকিয়ে রাখা শুরু করলে তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তাদের
আন্দোলন চালিয়ে যান। জীবিত ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ১৯৭১-এর মহান
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙ্গা (হলদীটারী) গ্রামে এবং জীবিত অপর ভাষা সৈনিক জহির উদ্দিন আহম্মদ একই ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ