হঠাৎ দরপতনের কবলে পড়া দেশের শেয়ারবাজারে আবার প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই লেনদেন হওয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ছে। ফলে বাড়ছে মূল্যসূচকও। লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দুইশ কোটি টাকার ঘরে ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করার নির্দেশনা জারি এবং সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেয়ার ঘোষণা আসার কারণে শেয়ারবাজারে এমন গতি ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারের উত্থান অথবা পতনের বড় অংশই নির্ভর করে ব্যাংক খাতের ওপর। ব্যাংকখাত ভাল চললে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাংক খাতে কোন সঙ্কট দেখা দিলে শেয়ারবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। সম্প্রতি বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকই তারল্য সঙ্কটে পড়েছিল। যে কারণে এক অংকে নেমে যাওয়া সুদ হার আবারও দুই অংকে পৌঁছে যায়। ফলে দরপতন দেখা দেয় শেয়ারবাজারে। এদিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে ২০১৭ সালে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফেরে শেয়ারবাজার। সঞ্চয়পত্র, এফডিআইসহ সব ধরণের আমানতের সুদ হার বেশ কম হওয়ায় বছরজুড়েই শেয়াবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। ফলে রেকর্ড অবস্থানে পৌঁছে যায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) প্রধান মূল্যসূচক। ২০১৭ সালজুড়ে থাকা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতেও অব্যাহত থাকে।
তবে মাসটির শেষ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দেয়। ঋণের লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিআর) কমায়। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। ফলে টানা দরপতনের কবলে পড়ে শেয়ারবাজার। খালেদা জিয়ার রায়ের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি না হলেও, শেয়ারবাজারে ব্যাংকখাতের তারল্য সঙ্কটের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফলে জানুয়ারির শেষ সময়ে এসে দেখা দেয়া দরপতন। যা অনেকটাই টানা দরপতনে রূপ নেয়। ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে মার্চজুড়েও অব্যাহত থাকে সেই দরপতন। ফলে ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট অতিক্রম করে যাওয়া ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে চলে আসে। অবস্থা থেকে থেকে উত্তরণের জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। সব বৈঠকেই উঠে আসে ব্যাংকের তারল্য সঙ্কটের বিষয়।
ফলে ব্যাংকারদের পাশাপাশি শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরাও ব্যাংক খাতে তারল্য বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকেই ঘোষণা আসে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখা হবে। যা এতোদিন ছিল ২৫ শতাংশ। এরপর রোববার সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে করিব, ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী জানান ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর সুদের হার কমানোর অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ৫০ শতাংশ রাখা হবে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর সিআরআর কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির আগেই শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা আসার আগেই বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ব্যাংক খাতের তারল্য বাড়াতে বড় ছাড় দিচ্ছে সরকার।
ফলে ওইদিনই শেয়াবাজারে মূল্যসূচকে উল্লম্ফন ঘটে। পরবর্তী দুই কার্যদিবস সে ধারা অব্যাহত থাকলে টানা তিন কার্যদিবসে ডিএসইএক্স বাড়ে ৩৩৭ পয়েন্ট। সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিআরআর কমানো হয়েছে, সুতরাং শেয়ারবাজারে অনেক টাকা যাবে এমন একটা চিন্তাভাবনা আছে। কিন্তু আসলে কতোটুকু অর্থ শেয়ারবাজারে আসবে সেটা বলা মুশকিল। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীরা তো হুজুগে মাতে। সে কারণে আমাদের শেয়ারবাজার উল্টা-পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমি মনেকরি সিআরআর কমানো এবং বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের জন্য ভালো বা খারাপ কোনোটাই না’।
অবশ্য সিআরআর কমানো শেয়ারবাজারের জন্য ভাল সংবাদ হিসেবে দেখছেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, ‘সিআরআর কমানো এবং সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্তের কারণে সুদের হার কমে যাবে। যেভাবে সুদের হার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছিল, সেটা বন্ধ হবে। এতে অন্তত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মানি-মার্কেটে টাকার সঙ্কট থাকবে না। ফলে শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকের বিনিয়োগ উঠিয়ে নেয়ার যে শঙ্কা ছিল তা দূর হবে। এটি ব্যাংক খাতের জন্য বিরাট রিলিফ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, ‘আমানতের সুদের হারের সঙ্গে শেয়ারবাজারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
সুদ হার কমলে স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার বিপরীতভাবে সুদের হার বাড়লে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর সুদের হার নির্ভর করে ব্যাংকখাতের তারল্যের ওপর। তারল্য সঙ্কট থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যাংক অতিরিক্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করবে’। তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ব্যাংকখাত যে তারল্য সঙ্কটে পড়েছে, সেটি কৃত্রিম কি না সেটি খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ বর্তমানে ব্যাংকখাত প্রচ- ইমেজ সঙ্কটে রয়েছে। ঋণ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ব্যাংকের নীতিনির্ধাকরা যদি অনৈতিক যোগসাজশ করে অর্থ তুলে নেয়, তাহলে তো তারল্য সঙ্কট দেখা দেবেই। এ অবস্থায় তাদেরকে নতুন করে তারল্য দিলে, সেটি কতোটুকু নিরাপদ থাকবে সেটাও চিন্তার বিষয়’। বাজার মূলধন : চার লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে থাকা ডিএসইর বাজার মূলধন টানা দরপতনের কারণে ২৮ মার্চ কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৮৭ হাজার ২০৭ কোটি টাকায়।
তবে শেষ সপ্তাহে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফিরে পাওয়ায় ৫ এপ্রিল লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ পাঁচ হাজার ১৫৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ছয় কার্যদিবসে ডিএসইর মূলধন বেড়েছে ১৭ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। সূচক ও লেনদেন : টানা দরপতনের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ মার্চ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৮৮ পয়েন্টে। তবে শেষ সপ্তাহের ঊর্ধ্বমুখীতার কারণে ডিএসইএক্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৪১ পয়েন্টে। অর্থাৎ ছয় কার্যদিবসে সূচকটি বেড়েছে ৩৫৩ পয়েন্ট। অপরদিকে দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন শেষ চার কার্যদিবসের প্রতিদিনই পাঁচশ কোটি টাকার উপরে ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণার পর হঠাৎ নিরব হয়ে পড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছেন।
শেষ সপ্তাহের প্রতিদিনই প্রতিষ্ঠানিক বিনয়োগকারীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শেয়ার লেনদেন করছে। ব্যাংকের শেয়ার : টানা দরপতনের কারণে মার্চ মাসে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়। সেই সঙ্গে অধিকাংশ দিনই লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য পতন ঘটতে। তবে সিআরআর কমানোর পরই আবার ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বেড়েছে। প্রতি কার্যদিবসেই মোট লেনদেনের প্রায় ২০ শতাংশের বেশি থাকছে ব্যাংকের অংশ। সেই সঙ্গে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ : মার্চ মাসজুড়ে দরপতন দেখা দিলেও বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল বেশ ইতিবাচক। মাসটিতে বিদেশিদের শেয়ার ক্রয় এবং ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবধান উভয়ই বেড়েছে। মার্চে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোট ৪৫৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮২ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছেন।
এর বিপরীতে বিক্রি করেছেন ২৯৯ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার। অর্থাৎ বিক্রির তুলনায় বিদেশিদের শেয়ার ক্রয় বেশি হয়েছে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ ৩২ হাজার টাকার।প নেয়ার দাবি জানান। এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকেই ঘোষণা আসে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখা হবে। যা এতোদিন ছিল ২৫ শতাংশ। এরপর রোববার সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে করিব, ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী জানান ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর সুদের হার কমানোর অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ৫০ শতাংশ রাখা হবে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর সিআরআর কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারির আগেই শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়।
এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা আসার আগেই বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ব্যাংক খাতের তারল্য বাড়াতে বড় ছাড় দিচ্ছে সরকার। ফলে ওইদিনই শেয়াবাজারে মূল্যসূচকে উল্লম্ফন ঘটে। পরবর্তী দুই কার্যদিবস সে ধারা অব্যাহত থাকলে টানা তিন কার্যদিবসে ডিএসইএক্স বাড়ে ৩৩৭ পয়েন্ট। সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিআরআর কমানো হয়েছে, সুতরাং শেয়ারবাজারে অনেক টাকা যাবে এমন একটা চিন্তাভাবনা আছে। কিন্তু আসলে কতোটুকু অর্থ শেয়ারবাজারে আসবে সেটা বলা মুশকিল। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীরা তো হুজুগে মাতে। সে কারণে আমাদের শেয়ারবাজার উল্টা-পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমি মনেকরি সিআরআর কমানো এবং বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের জন্য ভালো বা খারাপ কোনোটাই না’।
অবশ্য সিআরআর কমানো শেয়ারবাজারের জন্য ভাল সংবাদ হিসেবে দেখছেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, ‘সিআরআর কমানো এবং সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্তের কারণে সুদের হার কমে যাবে। যেভাবে সুদের হার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছিল, সেটা বন্ধ হবে। এতে অন্তত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মানি-মার্কেটে টাকার সঙ্কট থাকবে না। ফলে শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকের বিনিয়োগ উঠিয়ে নেয়ার যে শঙ্কা ছিল তা দূর হবে। এটি ব্যাংক খাতের জন্য বিরাট রিলিফ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, ‘আমানতের সুদের হারের সঙ্গে শেয়ারবাজারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। সুদ হার কমলে স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার বিপরীতভাবে সুদের হার বাড়লে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর সুদের হার নির্ভর করে ব্যাংকখাতের তারল্যের ওপর। তারল্য সঙ্কট থাকলে স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যাংক অতিরিক্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করবে’। তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ব্যাংকখাত যে তারল্য সঙ্কটে পড়েছে, সেটি কৃত্রিম কি না সেটি খতিয়ে দেখা উচিত। কারণ বর্তমানে ব্যাংকখাত প্রচ- ইমেজ সঙ্কটে রয়েছে।
ঋণ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ব্যাংকের নীতিনির্ধাকরা যদি অনৈতিক যোগসাজশ করে অর্থ তুলে নেয়, তাহলে তো তারল্য সঙ্কট দেখা দেবেই। এ অবস্থায় তাদেরকে নতুন করে তারল্য দিলে, সেটি কতোটুকু নিরাপদ থাকবে সেটাও চিন্তার বিষয়’। বাজার মূলধন : চার লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে থাকা ডিএসইর বাজার মূলধন টানা দরপতনের কারণে ২৮ মার্চ কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৮৭ হাজার ২০৭ কোটি টাকায়। তবে শেষ সপ্তাহে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ফিরে পাওয়ায় ৫ এপ্রিল লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ পাঁচ হাজার ১৫৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ছয় কার্যদিবসে ডিএসইর মূলধন বেড়েছে ১৭ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। সূচক ও লেনদেন : টানা দরপতনের কারণে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ মার্চ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৮৮ পয়েন্টে।
তবে শেষ সপ্তাহের ঊর্ধ্বমুখীতার কারণে ডিএসইএক্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৪১ পয়েন্টে। অর্থাৎ ছয় কার্যদিবসে সূচকটি বেড়েছে ৩৫৩ পয়েন্ট। অপরদিকে দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন শেষ চার কার্যদিবসের প্রতিদিনই পাঁচশ কোটি টাকার উপরে ছিল। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণার পর হঠাৎ নিরব হয়ে পড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছেন। শেষ সপ্তাহের প্রতিদিনই প্রতিষ্ঠানিক বিনয়োগকারীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শেয়ার লেনদেন করছে। ব্যাংকের শেয়ার : টানা দরপতনের কারণে মার্চ মাসে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যায়। সেই সঙ্গে অধিকাংশ দিনই লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য পতন ঘটতে। তবে সিআরআর কমানোর পরই আবার ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বেড়েছে। প্রতি কার্যদিবসেই মোট লেনদেনের প্রায় ২০ শতাংশের বেশি থাকছে ব্যাংকের অংশ। সেই সঙ্গে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে।বিদেশি বিনিয়োগ : মার্চ মাসজুড়ে দরপতন দেখা দিলেও বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিল বেশ ইতিবাচক।
মাসটিতে বিদেশিদের শেয়ার ক্রয় এবং ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবধান উভয়ই বেড়েছে। মার্চে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোট ৪৫৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮২ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছেন। এর বিপরীতে বিক্রি করেছেন ২৯৯ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার। অর্থাৎ বিক্রির তুলনায় বিদেশিদের শেয়ার ক্রয় বেশি হয়েছে ১৫৬ কোটি ৭০ লাখ ৩২ হাজার টাকার।

























