০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 ‘নন-এলিট’ এলাকায়?

এডিস মশা (ছবি: ইন্টারনেট)

এডিস মশা সাধারণত স্বচ্ছ ও আবদ্ধ পানিতে বংশ বিস্তার করে। এ কারণে সম্প্রতি এডিস নির্মূল অভিযানের সময় এই মশাকে ‘অভিজাত’ মশা হিসেবে অভিহিত করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এই মশা যদি এলিটই হবে তবে কীভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্তার ঘটাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বলা হচ্ছে, পর্যটকরা রাতে মশারি না টানানোয়ে মশা একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমণ বাড়িয়ে তুলছে। সেটাকেও বৈজ্ঞানিক বলতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বন উজাড়। এডিস রাতে কামড়ায় না। বিধায় এসব মশারি টানানো বা মানুষের শরীর থেকে শরীরে সংক্রমণের বিষয়টি একেববারেই ঠিক নয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে ১৬ জন পর্যটন নগরী কক্সবাজারের। এদিকে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৯৬ জন। তাদের মধ্যে স্থানীয় ৭৪১ জন এবং রোহিঙ্গা ১২ হাজার ৬৫৪ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের।

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. আশিকুর রহমান শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্ষাকালে ভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। একই সঙ্গে সড়কের সংস্কারকাজ সহ নালা-নর্দমায় পানি জমে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার জন্ম হয়। অপরদিকে, কক্সবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় ভ্রমণে আসা অনেক পর্যটক আবাসিক হোটেলে মশারি ব্যবহার না করায় ঝুঁকি বাড়ছে। ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে কোনও ব্যক্তি কক্সবাজারে এসে রাতযাপন করলে তাকে মশা কামড়ানোর পর অন্য ব্যক্তির মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে।’ এজন্য মশারি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কক্সবাজার পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. তোহা বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসছে। আমরা রোহিঙ্গাদের সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংসে কাজ করছি। আশা করি, খুব শিগগির ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ একেবারে কমে আসবে।’

মূল কারণের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি উল্লেখ করে মেডিক্যাল কীটতত্ত্ববিদ এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্ষাকালে ভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। একই সঙ্গে সড়কের সংস্কারকাজ সহ নালা-নর্দমায় পানি জমে ডেঙ্গুবাহী বলেন, কেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এডিস ছড়িয়ে পড়ছে সেটা নিয়ে প্রকৃত আলোচনা আমার নজরে আসেনি। ক্যাম্প এলাকার বনভূমি উজার করে ফেলা এর অন্যতম কারণ। সেটা কীরকম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এডিসের দুটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস। এর মধ্যে যেখানে গাছপালা বেশি বা দূরে বনাঞ্চল আছে এমন জায়গায় এডিস এলবোপিকটাস হয়। সেটা সেকেন্ডারি ভেক্টর। কিন্তু বন উজাড় করে ফেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ইজিপ্টির পরিমাণ বেশি, যা ক্ষতিকারক। আবার ক্যাম্প ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায়, ডেঙ্গু একবার ঢুকে যাওয়ার পরে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগছে কম।

তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের যাওয়া, রাতে মশারি না টানানো নিয়ে যে সব কথা গণমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে তার কোনও ভিত্তি নেই। কেননা, এডিস রাতে কামড়ায় না। দিনের বেলা, তাও দুটি বিশেষ সময়ে এই মশা কামড়ায়। আবার যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ও, তার রক্ত অন্য কারোর শরীরে সংক্রামিত হতে যে চার থেকে সাতদিন ইনকিউবেশন সময় থাকে তার আগে সেটি সম্ভবও না। ফলে প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে সেটার প্রতিকার খোঁজাটা জরুরি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

আমি কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ে নাম লিখতে চাই : নবাগত জেলা প্রশাসক

 ‘নন-এলিট’ এলাকায়?

প্রকাশিত : ১০:৩১:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

এডিস মশা সাধারণত স্বচ্ছ ও আবদ্ধ পানিতে বংশ বিস্তার করে। এ কারণে সম্প্রতি এডিস নির্মূল অভিযানের সময় এই মশাকে ‘অভিজাত’ মশা হিসেবে অভিহিত করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এই মশা যদি এলিটই হবে তবে কীভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্তার ঘটাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বলা হচ্ছে, পর্যটকরা রাতে মশারি না টানানোয়ে মশা একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমণ বাড়িয়ে তুলছে। সেটাকেও বৈজ্ঞানিক বলতে রাজি নন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বন উজাড়। এডিস রাতে কামড়ায় না। বিধায় এসব মশারি টানানো বা মানুষের শরীর থেকে শরীরে সংক্রমণের বিষয়টি একেববারেই ঠিক নয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে ১৬ জন পর্যটন নগরী কক্সবাজারের। এদিকে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৯৬ জন। তাদের মধ্যে স্থানীয় ৭৪১ জন এবং রোহিঙ্গা ১২ হাজার ৬৫৪ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের।

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. আশিকুর রহমান শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্ষাকালে ভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। একই সঙ্গে সড়কের সংস্কারকাজ সহ নালা-নর্দমায় পানি জমে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার জন্ম হয়। অপরদিকে, কক্সবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় ভ্রমণে আসা অনেক পর্যটক আবাসিক হোটেলে মশারি ব্যবহার না করায় ঝুঁকি বাড়ছে। ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে কোনও ব্যক্তি কক্সবাজারে এসে রাতযাপন করলে তাকে মশা কামড়ানোর পর অন্য ব্যক্তির মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছে।’ এজন্য মশারি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কক্সবাজার পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. তোহা বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসছে। আমরা রোহিঙ্গাদের সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংসে কাজ করছি। আশা করি, খুব শিগগির ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ একেবারে কমে আসবে।’

মূল কারণের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি উল্লেখ করে মেডিক্যাল কীটতত্ত্ববিদ এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্ষাকালে ভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। একই সঙ্গে সড়কের সংস্কারকাজ সহ নালা-নর্দমায় পানি জমে ডেঙ্গুবাহী বলেন, কেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এডিস ছড়িয়ে পড়ছে সেটা নিয়ে প্রকৃত আলোচনা আমার নজরে আসেনি। ক্যাম্প এলাকার বনভূমি উজার করে ফেলা এর অন্যতম কারণ। সেটা কীরকম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এডিসের দুটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস। এর মধ্যে যেখানে গাছপালা বেশি বা দূরে বনাঞ্চল আছে এমন জায়গায় এডিস এলবোপিকটাস হয়। সেটা সেকেন্ডারি ভেক্টর। কিন্তু বন উজাড় করে ফেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ইজিপ্টির পরিমাণ বেশি, যা ক্ষতিকারক। আবার ক্যাম্প ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায়, ডেঙ্গু একবার ঢুকে যাওয়ার পরে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগছে কম।

তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের যাওয়া, রাতে মশারি না টানানো নিয়ে যে সব কথা গণমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে তার কোনও ভিত্তি নেই। কেননা, এডিস রাতে কামড়ায় না। দিনের বেলা, তাও দুটি বিশেষ সময়ে এই মশা কামড়ায়। আবার যদি কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ও, তার রক্ত অন্য কারোর শরীরে সংক্রামিত হতে যে চার থেকে সাতদিন ইনকিউবেশন সময় থাকে তার আগে সেটি সম্ভবও না। ফলে প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে সেটার প্রতিকার খোঁজাটা জরুরি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব