০১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলে ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত

টাঙ্গাইলে টানা দুই সপ্তাহ প্রখর রোদ থাকার পর ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। টানা দুই দিনের দফায় দফায় ভারী বৃষ্টির কারনে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে করে শ্রমিক ও দিন মজুররা বিপাকে পড়েছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অপর দিকে যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরের নিম্নচাপ কেটে গেলে দুই/ তিন দিনের মধ্যে আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টাঙ্গাইলে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টা থেকে এ নিউজ লেখ পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে তিন টা পর্যন্ত) টানা ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। ছাতা ছাড়াও ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। অপর দিকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও ঘর থেকে কেউ বের হয়নি। মুশলধারে বৃষ্টির ফলে প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রোপা আমনসহ বিভিন্ন সবজি নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছে চাষীরা। এছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক গুলো জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনের পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ধরেরবাড়ী, দুরিয়াবাড়ী, শহরের কাগমারা, আকুরটাকুরপাড়া, রেজিষ্ট্রিপাড়া, আদালতপাড়া, সাবালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারী বর্ষণের কারণে কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। অন্যান্য দিনের তুলনায় শহরে যানজটের সংখ্যাও ছিলো খুবই কম। গ্রাম অঞ্চলে রোগি ও অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি।

সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ছিটকিবাড়ী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হুমায়ন মিয়া বলেন, আমার গর্ভবতী স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় তাকে ডাক্তার দেখাতে টাঙ্গাইল শহরের মা ও শিশু কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টির কারণে রিকশা পেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টিতে রোগি নিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চিন্তা করছি বৃষ্টির পানিতে রোগি জ্বর আসে কিনা।
ওই গ্রামের রিকশা চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, যে কোন দুর্যোগে আমার মতো গরীব মানুষের খুব কষ্ট পোহাতে হয়। গত ১৫ দিন প্রচন্ড গরমে স্বাভাবিকের মতো রিকশা চালাতে পারি না। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০/৬০০ টাকা আয় করলেও আজকে দেড় দুইশ’র বেশি হবে না। এছাড়াও বৃষ্টি কারণে আমার ১৬ শতাংশ জায়গার আমন তলিয়ে গেছে। দুই এক দিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে পঁচে ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শহরের রেজিষ্টিপাড়া এলাকার বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, সকাল থেকে শহরের প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে বাজারে যাওয়ার সময় সড়কে তেমন কোন পানি জমে ছিলো না। বাজার শেষে বাসায় ফেরার পর দেখলাম সড়কে হাটু পানি। শুধু পানি নয়, ড্রেনের পঁচা পানির সাথে বৃষ্টির পানি মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক গুলো পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

রড মিস্ত্রি শাহ আলম মিয়া বলেন, সকালে কাজ করার জন্য রেজিষ্ট্রিপাড়া এসেছিলাম। বৃষ্টি না ছাড়ার কারনে তিন ঘন্টা বসে থেকে ভিজে ভিজে বাড়ি চলে যাচ্ছি। আকাশ কালো হয়ে যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে আজকে আর বৃষ্টি ছাড়বে না।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, গতকাল বিকেল ৩ টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় টাঙ্গাইলে ১০১ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাগরে নিম্নচাপ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী দুই/ তিন দিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

টাঙ্গাইলে ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশিত : ০৩:৫২:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

টাঙ্গাইলে টানা দুই সপ্তাহ প্রখর রোদ থাকার পর ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। টানা দুই দিনের দফায় দফায় ভারী বৃষ্টির কারনে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে করে শ্রমিক ও দিন মজুররা বিপাকে পড়েছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অপর দিকে যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরের নিম্নচাপ কেটে গেলে দুই/ তিন দিনের মধ্যে আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টাঙ্গাইলে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টা থেকে এ নিউজ লেখ পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে তিন টা পর্যন্ত) টানা ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। ছাতা ছাড়াও ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। অপর দিকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও ঘর থেকে কেউ বের হয়নি। মুশলধারে বৃষ্টির ফলে প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রোপা আমনসহ বিভিন্ন সবজি নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছে চাষীরা। এছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক গুলো জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনের পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ধরেরবাড়ী, দুরিয়াবাড়ী, শহরের কাগমারা, আকুরটাকুরপাড়া, রেজিষ্ট্রিপাড়া, আদালতপাড়া, সাবালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারী বর্ষণের কারণে কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। অন্যান্য দিনের তুলনায় শহরে যানজটের সংখ্যাও ছিলো খুবই কম। গ্রাম অঞ্চলে রোগি ও অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি।

সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ছিটকিবাড়ী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হুমায়ন মিয়া বলেন, আমার গর্ভবতী স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় তাকে ডাক্তার দেখাতে টাঙ্গাইল শহরের মা ও শিশু কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টির কারণে রিকশা পেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টিতে রোগি নিয়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চিন্তা করছি বৃষ্টির পানিতে রোগি জ্বর আসে কিনা।
ওই গ্রামের রিকশা চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, যে কোন দুর্যোগে আমার মতো গরীব মানুষের খুব কষ্ট পোহাতে হয়। গত ১৫ দিন প্রচন্ড গরমে স্বাভাবিকের মতো রিকশা চালাতে পারি না। আজ সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০/৬০০ টাকা আয় করলেও আজকে দেড় দুইশ’র বেশি হবে না। এছাড়াও বৃষ্টি কারণে আমার ১৬ শতাংশ জায়গার আমন তলিয়ে গেছে। দুই এক দিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে পঁচে ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শহরের রেজিষ্টিপাড়া এলাকার বাসিন্দা করিম মিয়া বলেন, সকাল থেকে শহরের প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে বাজারে যাওয়ার সময় সড়কে তেমন কোন পানি জমে ছিলো না। বাজার শেষে বাসায় ফেরার পর দেখলাম সড়কে হাটু পানি। শুধু পানি নয়, ড্রেনের পঁচা পানির সাথে বৃষ্টির পানি মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক গুলো পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

রড মিস্ত্রি শাহ আলম মিয়া বলেন, সকালে কাজ করার জন্য রেজিষ্ট্রিপাড়া এসেছিলাম। বৃষ্টি না ছাড়ার কারনে তিন ঘন্টা বসে থেকে ভিজে ভিজে বাড়ি চলে যাচ্ছি। আকাশ কালো হয়ে যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে আজকে আর বৃষ্টি ছাড়বে না।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, গতকাল বিকেল ৩ টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় টাঙ্গাইলে ১০১ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাগরে নিম্নচাপ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী দুই/ তিন দিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব