০৭:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বরিশালে বন্ধের পথে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কার্যক্রম

একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম রুপে বরিশালসহ দেশবাসীর কাছে আত্ম প্রকাশ করবে বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। কথা ছিলো ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে নির্মান কাজ। কিন্তু হঠাৎ সেই প্রত্যাশায় ভাটা পড়েছে। অর্থ সংকটে চলমান কর্মযজ্ঞে এখন অনেকটা স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। সংকটময় পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় থাকলে কবে নাগাদ কাজ শেষ করা যাবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার বলেছেন, অর্থের যে সমস্যা চলছে তা সাময়িক। এ বিষয়ে ক্রীড়া সচিব স্যারের সাথে কথা হয়েছে এবং সম্প্রতি তার বরিশাল সফরকালেও আমাদের আশ্স্ত করেছেন কাজে অর্থ সংকট হবে না। সরেজমিনে গত দুদিন ধরে দেখা গেছে, ঢিমেতালে চলছে নির্মান কাজ। হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করছেন স্টেডিয়ামের বাইরের অংশে।

শ্রমিকরা জানান, স্টেডিয়ামের ভেতরের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই শ্রমিকরা আসেনি। দেখা মেলেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে। সব মিলিয়ে এত বড় প্রকল্পের যে কর্মযজ্ঞ থাকা দরকার তার কিছুই নেই পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারছে না। এ কারনে কাজের যে গতি থাকার কথা সেটি নেই। অর্থ বরাদ্দ না হলে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শংকা রয়েছে। জানা গেছে, গত অর্থ বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ৫টি ধাপের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে।

এই ৫টি ধাপ হলো : ক্রিকেট মাঠ, ছাউনিসহ গ্যালারি, ব্যায়ামাগার, প্যাভিলিয়ন ভবন, ড্রেসিংরুমের উন্নয়ন। প্রকল্প অনুযায়ী কাজ শেষ হবার কথা ২০২৩ সালের মধ্যে। কিন্তু করোনার কারণে প্রকল্পের প্রথম ধাক্কা লাগে। আর বর্তমান সময়ে চলছে অর্থ সংকটের দ্বিতীয় ধাক্কা। শুরুতে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক সরদার মোঃ শাহ আলম বলেন, গত এক মাস হয়েছে আমি বদলী হয়ে এসেছি। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বলতে পারবো না। তবে আমি থাকাকালীন সময়ে অর্থ সংকট ছিলো কিনা বা মোট কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিলো সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বর্তমান পরিচালকের কাছে যোগাযোগের অনুরোধ করেন।

বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ সারওয়ার জাহান বলেন, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরেও প্রায় ৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা ৩ মাস অতিক্রম করেনি। এরমধ্যে অর্থ সংকট হবার কথা নয়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে সচিবের সাথে আলাপ করা হয়েছে তিনি বিবেচনা করবেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো আশা করছি যথা সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। এখন সব দিক থেকে কিছুটা সমস্যা বিরাজ করলেও ডিসেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন খান বলেন, চলমান কাজটি আমাদের বরিশালবাসীর মনে আশার সঞ্চয় করেছে। কিন্তু কাজটি যদি থেমে থাকে বা বিলম্বে শেষ হয় তাহলে আমরা আশাহত হবো। আমরা চাই সঠিক সময়ে কাজটি শেষ হোক। তবে যতটুকু জানি বর্তমানে প্রকল্পে অর্থ সংকট চলছে। বরাদ্দ শ্লথ হওয়ার কারণে কাজে বেশ ধীরগতি আছে।

বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বড় প্রকল্পে এরকম একটু হতেই পারে। এজন্য অর্থ সংকট বলা ঠিক হবে না। বিষয়টি ক্রীড়া সচিবের নলেজে রয়েছে এবং আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। তিনি আরো বলেন, সব মিলিয়ে কাজ নির্দিষ্ট সময়ের একটু বিলম্বে শেষ হতে পারে। তবে তা অতটা দীর্ঘায়িত হবে না।

জানা গেছে ১৯৬৬ সালে বরিশাল নগরের বান্দ রোড লাগোয়া কীর্তনখোলা নদীর তীরে ২৯ একর ১৫ শতক জমির ওপর স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি আধুনিকায়ন করে নামকরণ হয় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। তবে এখন পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি।

২০১৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক আসর হিসেবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের চার দিনের ম্যাচ আয়োজনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এরপর দক্ষিনাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দাবীর মুখে স্টেডিয়ামের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় ক্রীড়া মন্ত্রনালয়। প্রকল্পের আওতায় ইনডোর ও আউটডোর স্টেডিয়ামে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্রিকেট মাঠ, পাঁচটি পিচ, চেয়ার, ছাউনিসহ গ্যালারি, ব্যায়ামাগার, ইনডোর অনুশীলনের সুবিধা, প্যাভিলিয়ন ভবন, মিডিয়া ভবন, ড্রেসিংরুম, ডরমিটরি, ফ্লাডলাইট, সুইমিংপুল সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধনসহ একাধিক উন্নয়নকাজ করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

বরিশালে বন্ধের পথে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কার্যক্রম

প্রকাশিত : ০৩:০৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২

একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম রুপে বরিশালসহ দেশবাসীর কাছে আত্ম প্রকাশ করবে বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। কথা ছিলো ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হবে নির্মান কাজ। কিন্তু হঠাৎ সেই প্রত্যাশায় ভাটা পড়েছে। অর্থ সংকটে চলমান কর্মযজ্ঞে এখন অনেকটা স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। সংকটময় পরিস্থিতি দীর্ঘ সময় থাকলে কবে নাগাদ কাজ শেষ করা যাবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার বলেছেন, অর্থের যে সমস্যা চলছে তা সাময়িক। এ বিষয়ে ক্রীড়া সচিব স্যারের সাথে কথা হয়েছে এবং সম্প্রতি তার বরিশাল সফরকালেও আমাদের আশ্স্ত করেছেন কাজে অর্থ সংকট হবে না। সরেজমিনে গত দুদিন ধরে দেখা গেছে, ঢিমেতালে চলছে নির্মান কাজ। হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করছেন স্টেডিয়ামের বাইরের অংশে।

শ্রমিকরা জানান, স্টেডিয়ামের ভেতরের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই শ্রমিকরা আসেনি। দেখা মেলেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে। সব মিলিয়ে এত বড় প্রকল্পের যে কর্মযজ্ঞ থাকা দরকার তার কিছুই নেই পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারছে না। এ কারনে কাজের যে গতি থাকার কথা সেটি নেই। অর্থ বরাদ্দ না হলে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শংকা রয়েছে। জানা গেছে, গত অর্থ বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ৫টি ধাপের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে।

এই ৫টি ধাপ হলো : ক্রিকেট মাঠ, ছাউনিসহ গ্যালারি, ব্যায়ামাগার, প্যাভিলিয়ন ভবন, ড্রেসিংরুমের উন্নয়ন। প্রকল্প অনুযায়ী কাজ শেষ হবার কথা ২০২৩ সালের মধ্যে। কিন্তু করোনার কারণে প্রকল্পের প্রথম ধাক্কা লাগে। আর বর্তমান সময়ে চলছে অর্থ সংকটের দ্বিতীয় ধাক্কা। শুরুতে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক সরদার মোঃ শাহ আলম বলেন, গত এক মাস হয়েছে আমি বদলী হয়ে এসেছি। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বলতে পারবো না। তবে আমি থাকাকালীন সময়ে অর্থ সংকট ছিলো কিনা বা মোট কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিলো সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বর্তমান পরিচালকের কাছে যোগাযোগের অনুরোধ করেন।

বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ সারওয়ার জাহান বলেন, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরেও প্রায় ৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা ৩ মাস অতিক্রম করেনি। এরমধ্যে অর্থ সংকট হবার কথা নয়। তারপরও বিষয়টি নিয়ে সচিবের সাথে আলাপ করা হয়েছে তিনি বিবেচনা করবেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো আশা করছি যথা সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। এখন সব দিক থেকে কিছুটা সমস্যা বিরাজ করলেও ডিসেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন খান বলেন, চলমান কাজটি আমাদের বরিশালবাসীর মনে আশার সঞ্চয় করেছে। কিন্তু কাজটি যদি থেমে থাকে বা বিলম্বে শেষ হয় তাহলে আমরা আশাহত হবো। আমরা চাই সঠিক সময়ে কাজটি শেষ হোক। তবে যতটুকু জানি বর্তমানে প্রকল্পে অর্থ সংকট চলছে। বরাদ্দ শ্লথ হওয়ার কারণে কাজে বেশ ধীরগতি আছে।

বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, বড় প্রকল্পে এরকম একটু হতেই পারে। এজন্য অর্থ সংকট বলা ঠিক হবে না। বিষয়টি ক্রীড়া সচিবের নলেজে রয়েছে এবং আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। তিনি আরো বলেন, সব মিলিয়ে কাজ নির্দিষ্ট সময়ের একটু বিলম্বে শেষ হতে পারে। তবে তা অতটা দীর্ঘায়িত হবে না।

জানা গেছে ১৯৬৬ সালে বরিশাল নগরের বান্দ রোড লাগোয়া কীর্তনখোলা নদীর তীরে ২৯ একর ১৫ শতক জমির ওপর স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামটি আধুনিকায়ন করে নামকরণ হয় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্টেডিয়াম। তবে এখন পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি।

২০১৯ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক আসর হিসেবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের চার দিনের ম্যাচ আয়োজনের কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এরপর দক্ষিনাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দাবীর মুখে স্টেডিয়ামের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় ক্রীড়া মন্ত্রনালয়। প্রকল্পের আওতায় ইনডোর ও আউটডোর স্টেডিয়ামে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্রিকেট মাঠ, পাঁচটি পিচ, চেয়ার, ছাউনিসহ গ্যালারি, ব্যায়ামাগার, ইনডোর অনুশীলনের সুবিধা, প্যাভিলিয়ন ভবন, মিডিয়া ভবন, ড্রেসিংরুম, ডরমিটরি, ফ্লাডলাইট, সুইমিংপুল সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধনসহ একাধিক উন্নয়নকাজ করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব