০৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ইরানের নাটকীয় জয়

মনে হচ্ছিল আরেকটি ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচ। নব্বই মিনিটের বেশি সময় ধরে একের পর এক গোলের চেষ্টা করে গেছে দুই দল। কোনোটি পোস্টে লেগে ফিরেছে, কোনোটি অফসাইডে বাতিল। কিন্তু সব রোমাঞ্চ জমা হয়েছিল যেন শেষমুহূর্তের জন্য। যোগ করা সময়ে ওয়েলসের জালে ঝড় তুলল ইরান, তিন মিনিটের ব্যবধানে এলো ২ গোল। ৯৭ মিনিট পর্যন্ত ০–০ স্কোরলাইনের ম্যাচ শেষের নাটকীয়তায় শেষ হলো এশিয়ান দলটির অনুকূলে– ইরান ২, ওয়েলস ০।

বিশ্বকাপে ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে এটিই ইরানের প্রথম জয়।

এ জয়ে শেষ ষোলোয় ওঠার আশা টিকে রইল ইরানের। আগের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করা ওয়েলস ইরানের কাছে হেরে অনেকটাই বিদায়ের পথে।

আহমেদ আলী বিন স্টেডিয়ামের ম্যাচটি দুই দলের জন্যই ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। গ্যারেথ বেলের পেনাল্টি গোলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনোমতে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল ওয়েলস। আর ইরান তো ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোল বিধ্বস্তই হয়েছে। শেষ ষোলোর আশা টিকিয়ে রাখতে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় দরকার ছিল দুই দলেরই।

তবে বেশি তেতে ছিল যেন ইরানই। একে তো প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার দুঃস্মৃতি। তার ওপর ইরানজুড়ে চলা নারী অধিকার আন্দোলনের পক্ষে নিয়ে প্রথম দিন জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ না মেলানো নিয়ে নানামুখী চাপ।

ওয়েলসের বিপক্ষে আজ যেন সবই ভুলে যেতে নেমেছিল ইরান। প্রথম ম্যাচের শুরুর একাদশ থেকে পাঁচ বদল আনেন কোচ কার্লোস কুইরোজ। চোটাক্রান্ত গোলকিপার আলীরেজা বেইরানভন্দের বদলি নিশ্চিতই ছিল, তবে কুইরোজ পরিবর্তন আনেন রক্ষণ আর আক্রমণভাগেও। আলী গলিজাদেহ, মেহদি তারেমির সঙ্গে আক্রমণভাগে শুরু করেন সরদার আজমুন। প্রথম দুজন শুরু থেকেই ওয়েলস ডি বক্সে বারবার হানা দিতে থাকেন বারবার।

গোলের সেরা সুযোগটি প্রথম তৈরি করে অবশ্য ওয়েলস। ১২ মিনিটে ডান দিক থেকে কনর রবার্টসের ক্রস নাগালে পেয়ে গিয়েছিলেন কেইফার মুর। পা-ও ছোঁয়ান সময়মতো। তবে ঠিক সামনেই দেয়াল হয়ে দাঁড়ান ইরান গোলকিপার হোসেইন হোসেইনি। চার মিনিট পরই পাল্টা আক্রমণে ওয়েলসের জালে বল জাড়িয়ে দেন গলিজাদেহ। তবে ভিএআর চেকে সেটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। এরপর কিছুটা সময় বল দখলে রাখার মন্ত্রে খেলে যায় দুই দল।

প্রথমার্ধের শেষদিকে আবারও গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে ইরান। আজমুন, গলিজাদেহ, আহমেদ নুরুল্লাহিরা ভীতি ছড়াতে থাকেন ওয়েলস রক্ষণে। নুরুল্লাহির ক্রস থেকে দারুণ এক সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেলন আজমুন। তবে ওয়েলস ডিফেন্ডারদের কড়া পাহারায় কয়েক ইঞ্চির জন্য বলে পাঁ ছোঁয়াতে পারেননি লেভারকুসেন ফরোয়ার্ড।

প্রথমার্ধের এই ছন্দটাই দ্বিতীয়ার্ধেও ধরে রাখে ইরান। বিরতির পর সপ্তম মিনিটে আধা মিনিটের মধ্যে দুইবার গোলের সুযোগ তৈরি করে এশিয়ান দলটি। প্রতি-আক্রমণে উঠে ওয়েলস ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন আজমুন। জোরালো গতির শটটি ডান পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল নিয়ে ওয়েলস ডি বক্সের আশপাশে ঘোরাঘুরির কিছুক্ষণ পর আবার গোলমুখে শট নেন গলিজাদেহ। এবার বল লাগে বাম পোস্টে। দুটির যে কোনো একটিও সামান্য ভেতরে থাকলেই চলে যেত জালে।

পরের সেরা সুযোগটি আসে ৭৩ মিনিটে। জটলার মাঝ দিয়ে পাঠানো সাইয়িদ এজতোলাহির শটটিও ছিল জালে ঢোকার পথে। প্রতিহত করতে ওয়েলস গোলরক্ষক ঝাঁপ দেন বা দিকে। বল তার হাতে লাগার পরও পোস্টের সামান্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

তখন মনে হচ্ছিল দিনটি আজ ইরানের নয়। ৮৬ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখেন ওয়েলস গোলকিপার হেনেসি। আক্রমণে ছুটে আসা তারেমিকে থামাতে গিয়ে পা তুলে দেন ইরান ফরোয়ার্ডের গায়ের উপরে। প্রথমে হলুদ কার্ড দেখালেও রিপ্লে দেখে লাল কার্ড দেখান রেফারি।

কাতার বিশ্বকাপে এটিই প্রথম লাল কার্ড। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম সবগুলো দল প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলার পর লাল কার্ড দেখলেন কেউ।

দশ জনে পরিণত হওয়ার পর রক্ষণে মনোযোগী হয়ে পড়ে ওয়েলস। তবে গোল পোস্ট অক্ষত রাখতে পারেনি।

যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে জটলার ভেতর দিয়ে নিচু শট নেন ইরান ডিফেন্ডার রুজবেহ চেশমি। ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি বদলি গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ড। অনেক চেষ্টার পর একবার গোলমুখ খোলার পর দ্বিতীয় গোলটিও পেয়ে যায় ইরান। তারেমির কাছ থেকে পাওয়া বলে এবার বল জালে জড়ান ডিফেন্ডার রামিন রেজাইয়ান।

গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইরানের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েলস খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ bh

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ইরানের নাটকীয় জয়

প্রকাশিত : ০৬:৫২:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

মনে হচ্ছিল আরেকটি ম্যাড়ম্যাড়ে ম্যাচ। নব্বই মিনিটের বেশি সময় ধরে একের পর এক গোলের চেষ্টা করে গেছে দুই দল। কোনোটি পোস্টে লেগে ফিরেছে, কোনোটি অফসাইডে বাতিল। কিন্তু সব রোমাঞ্চ জমা হয়েছিল যেন শেষমুহূর্তের জন্য। যোগ করা সময়ে ওয়েলসের জালে ঝড় তুলল ইরান, তিন মিনিটের ব্যবধানে এলো ২ গোল। ৯৭ মিনিট পর্যন্ত ০–০ স্কোরলাইনের ম্যাচ শেষের নাটকীয়তায় শেষ হলো এশিয়ান দলটির অনুকূলে– ইরান ২, ওয়েলস ০।

বিশ্বকাপে ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে এটিই ইরানের প্রথম জয়।

এ জয়ে শেষ ষোলোয় ওঠার আশা টিকে রইল ইরানের। আগের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড্র করা ওয়েলস ইরানের কাছে হেরে অনেকটাই বিদায়ের পথে।

আহমেদ আলী বিন স্টেডিয়ামের ম্যাচটি দুই দলের জন্যই ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। গ্যারেথ বেলের পেনাল্টি গোলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনোমতে ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল ওয়েলস। আর ইরান তো ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোল বিধ্বস্তই হয়েছে। শেষ ষোলোর আশা টিকিয়ে রাখতে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় দরকার ছিল দুই দলেরই।

তবে বেশি তেতে ছিল যেন ইরানই। একে তো প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার দুঃস্মৃতি। তার ওপর ইরানজুড়ে চলা নারী অধিকার আন্দোলনের পক্ষে নিয়ে প্রথম দিন জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ না মেলানো নিয়ে নানামুখী চাপ।

ওয়েলসের বিপক্ষে আজ যেন সবই ভুলে যেতে নেমেছিল ইরান। প্রথম ম্যাচের শুরুর একাদশ থেকে পাঁচ বদল আনেন কোচ কার্লোস কুইরোজ। চোটাক্রান্ত গোলকিপার আলীরেজা বেইরানভন্দের বদলি নিশ্চিতই ছিল, তবে কুইরোজ পরিবর্তন আনেন রক্ষণ আর আক্রমণভাগেও। আলী গলিজাদেহ, মেহদি তারেমির সঙ্গে আক্রমণভাগে শুরু করেন সরদার আজমুন। প্রথম দুজন শুরু থেকেই ওয়েলস ডি বক্সে বারবার হানা দিতে থাকেন বারবার।

গোলের সেরা সুযোগটি প্রথম তৈরি করে অবশ্য ওয়েলস। ১২ মিনিটে ডান দিক থেকে কনর রবার্টসের ক্রস নাগালে পেয়ে গিয়েছিলেন কেইফার মুর। পা-ও ছোঁয়ান সময়মতো। তবে ঠিক সামনেই দেয়াল হয়ে দাঁড়ান ইরান গোলকিপার হোসেইন হোসেইনি। চার মিনিট পরই পাল্টা আক্রমণে ওয়েলসের জালে বল জাড়িয়ে দেন গলিজাদেহ। তবে ভিএআর চেকে সেটি অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। এরপর কিছুটা সময় বল দখলে রাখার মন্ত্রে খেলে যায় দুই দল।

প্রথমার্ধের শেষদিকে আবারও গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে ইরান। আজমুন, গলিজাদেহ, আহমেদ নুরুল্লাহিরা ভীতি ছড়াতে থাকেন ওয়েলস রক্ষণে। নুরুল্লাহির ক্রস থেকে দারুণ এক সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেলন আজমুন। তবে ওয়েলস ডিফেন্ডারদের কড়া পাহারায় কয়েক ইঞ্চির জন্য বলে পাঁ ছোঁয়াতে পারেননি লেভারকুসেন ফরোয়ার্ড।

প্রথমার্ধের এই ছন্দটাই দ্বিতীয়ার্ধেও ধরে রাখে ইরান। বিরতির পর সপ্তম মিনিটে আধা মিনিটের মধ্যে দুইবার গোলের সুযোগ তৈরি করে এশিয়ান দলটি। প্রতি-আক্রমণে উঠে ওয়েলস ডি বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন আজমুন। জোরালো গতির শটটি ডান পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল নিয়ে ওয়েলস ডি বক্সের আশপাশে ঘোরাঘুরির কিছুক্ষণ পর আবার গোলমুখে শট নেন গলিজাদেহ। এবার বল লাগে বাম পোস্টে। দুটির যে কোনো একটিও সামান্য ভেতরে থাকলেই চলে যেত জালে।

পরের সেরা সুযোগটি আসে ৭৩ মিনিটে। জটলার মাঝ দিয়ে পাঠানো সাইয়িদ এজতোলাহির শটটিও ছিল জালে ঢোকার পথে। প্রতিহত করতে ওয়েলস গোলরক্ষক ঝাঁপ দেন বা দিকে। বল তার হাতে লাগার পরও পোস্টের সামান্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

তখন মনে হচ্ছিল দিনটি আজ ইরানের নয়। ৮৬ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখেন ওয়েলস গোলকিপার হেনেসি। আক্রমণে ছুটে আসা তারেমিকে থামাতে গিয়ে পা তুলে দেন ইরান ফরোয়ার্ডের গায়ের উপরে। প্রথমে হলুদ কার্ড দেখালেও রিপ্লে দেখে লাল কার্ড দেখান রেফারি।

কাতার বিশ্বকাপে এটিই প্রথম লাল কার্ড। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম সবগুলো দল প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলার পর লাল কার্ড দেখলেন কেউ।

দশ জনে পরিণত হওয়ার পর রক্ষণে মনোযোগী হয়ে পড়ে ওয়েলস। তবে গোল পোস্ট অক্ষত রাখতে পারেনি।

যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে জটলার ভেতর দিয়ে নিচু শট নেন ইরান ডিফেন্ডার রুজবেহ চেশমি। ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি বদলি গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ড। অনেক চেষ্টার পর একবার গোলমুখ খোলার পর দ্বিতীয় গোলটিও পেয়ে যায় ইরান। তারেমির কাছ থেকে পাওয়া বলে এবার বল জালে জড়ান ডিফেন্ডার রামিন রেজাইয়ান।

গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইরানের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েলস খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ bh