ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না পুঁজিবাজার। বাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই নিম্নমুখী হচ্ছে বাজার। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই কমছে বাজার মূলধন। বিষয়টি যেমন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলছে, ঠিক তেমনি বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে এর প্রকৃত কারণ অজানাই রয়ে গেছে। আর এ কারনে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বাজারের ভারসাম্য ধরে রাখতে ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ছাড়া বাকিগুলো পুরোপুরি নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
পোর্টফলিও ম্যানেজারসহ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বর্তমানে সাইডলাইনে থেকে বাজার পর্যবেক্ষণে বেশি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া, বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগে আসছেন না বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী। এছাড়া রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত অনেকে মার্জিন লোন নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পরিণতিতে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। বুধবার দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫৫১১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২৯১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২০৫৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৩৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭১টির, কমেছে ২২৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৫টির। বুধবার দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩৯৪ কোটি ৮৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস অর্থাৎ মঙ্গলবার ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫৫৪৮ পয়েন্টে। বুধবার ডিএসই শরিয়াহ সূচক ০.২৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৩০০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ২০৭২ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫৫ কোটি ২৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। সে হিসেবে বুধবার ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩৯ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার টাকা। এদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএসইএক্স ৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩২টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৮টির, কমেছে ১৫৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির। বুধবার দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
অবশ্য বিনিয়োগকারীরা বরাবরই অভিযোগ করছেন,২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে দেশের পুঁজিবাজারের সঙ্কট উত্তরণ ও উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজার উন্নয়নে গঠন করা হয়েছে একাধিক কমিটি। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে কোন উদ্যোগই বাজার উন্নয়নে কাজে আসে নি। এছাড়া গঠিত এসব কমিটির কার্যক্রম কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি এসব কমিটির অনেক সদস্যই ভুলে গেছেন তিনি কোন কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। বুধবার কমিটির সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পরিপালন না করায় পুঁজিবাজার চলমান সঙ্কট থেকে উত্তোরণ পায় নি বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, পুঁজিবাজারের উত্তরণে এসব কমিটির কাছ থেকে ভালো কিছু পরামর্শ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস নামে।
পুঁজিবাজারের ওই সঙ্কট নিরসনে সরকার ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু এসব কমিটির সভা থেকে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বরং একেক কমিটির সভা থেকে একেক ধরনের তথ্য আসায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে ফিরে আসেনি পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক গতি। তারা আরো বলেন, বাজারের স্থিতিশীলতায় শুধুমাত্র নীতিমালা প্রনয়ন ও বাজার পর্যবেক্ষনে কমিটি গঠন করলেই হবে না। বরং এসব পদক্ষেপ ও নীতিমালা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে কি না- তা মনিটরিং করা দরকার। এজন্য পুঁজিবাজারে ওপর সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করার পাশাপাশি অনিয়ম ও কারসাজির বিপরীতে দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন।
এদিকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিরা প্রায়ই বলছেন, সরকার পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থিতিশীল পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

























