এক কার্যদিবস বিরতিতে টানা ১৫ কার্যদিবসে দর পতনে ভুগছিল দেশের পুঁজিবাজার। অবশেষে টনক নড়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি)। বাজার উন্নয়নে মিটিংও করেছে গেল সপ্তাহের সর্বশেষ কার্যদিবস (বৃহস্পতিবার)।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও এর বিভিন্ন শাখা-উপশাখার মিটিংয়ের খবরে হঠাৎ সূচকের উল্লম্ফন দেখেছে বিনিয়োগকারীরা। তাই টানা৪ সপ্তাহে পতনের পর চলতি সপ্তাহে কি ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রশ্ন বিনিয়োগকারীদের ? বিশ্লেষণ বলেছে, প্রত্যেক বছর বাজেটের আগমুহুর্তে মার্কেট মেকার বা বড় বিনিয়োগকারী, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দাবি আদায়ে বিভিন্ন বায়না ধরে, যার ফলশ্রুতিতে লেনদেন মন্দায় ভোগে পুঁজিবাজার। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
বরং অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রাতিষ্ঠানি, ব্যাংকের বড় বিনিয়োগকারীদের বেশি প্রতিশোধ পরায়ন মনে হয়েছে। কেননা, পুঁজিবাজারের ধর্মই হচ্ছে ২ কার্যদিবস বাড়লে ১ কার্যদিবস কমবে। কিন্তু এবার টানা ১৪ কার্যদিবসে দর পতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা, স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারদের কেউ কোন কথা বলেনি। দেয়নি আশ্বাস। তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিগত ১৫ দিনের অব্যাহত দর পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক কমেছে প্রায় ৫০০ পয়েন্ট।
এসময় ডিএসই’র ৪৬ শতাংশ কোম্পানি বা ১৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বিগত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। যদিও কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থায় তেমন কোন বড় পরিবর্তন আসে নি। পুঁজিবাজারে ক্রমাগত পতনে ‘নিষ্ক্রিয়’ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা বিস্তর জানিয়ে সক্রিয় হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সূত্র জানায়, বিনিয়োগসীমা বিষয়ক জটিলতায় কিছু দাবি জানালে অর্থ মন্ত্রণালয় মানতে একমত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সেই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তারল্য সংকটের অজুহাতে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনা থেকে বিরত ছিল বলে অভিয়োগ সংশ্লিষ্টদের।
ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, ‘দীর্ঘ আলোচনায় পুঁজিবাজারের পতন নিয়ে নানা বিষয় উঠে এসেছে। বাজারে এখন তারল্য সংকট রয়েছে। বিনিয়োগ সীমাসংক্রান্ত একটা জটিলতা রয়ে গেছে। সব কিছু আলোচনার পর সবাই সম্মত হয়েছে বাজারের উন্নয়নে। আশা করছি, সবার অংশগ্রহণে বাজার ভালো হবে। বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে আলোচনা হয়েছে।
সবাই বাজারকে সাপোর্ট দেবে বলে সম্মত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শক্তিশালী সাপোর্ট লাইনের উপর এসে ব্যাপক আকারের বাই পেশারে ফিরেছে বাজার। দিন শেষে বুলিশ এনগ্যালফিংয়ে শক্তিশালী সাপোর্ট থেকে সূচকের পুলবেক লক্ষ্য করা যায়। এমন পরস্থিতিতে বড় কোন বিপত্তি না হলে বাজার স্বাভা্বকি উত্থানে ফিরবে। এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই’র আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেনথ ইনডেক্স) ৩১.৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষণ বলছে, অব্যাহত পতনে বাজারের সিংহভাগ কোম্পানির দর পতন হওয়ায় ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় আগামী সপ্তাহে বাজারে বিনিয়োগকারীরা মানষিক শক্তি পাবে। যার প্রভাব বৃহস্পতিবারের লেনদেনও দেখা গেছে।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কিন্তু বাজেট। আগামী বাজাটে সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই প্রনোধণা দিতে হবে। কারণ, নির্বাচনী বছরে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করা সরকারের প্রধান লক্ষ হবে। তাই সর্বনিম্ন শেয়ার দরের তালিকা থেকে নিজের পচন্দ অনুযায়ী কোম্পানি যাচাই করে, আর্থিক অবস্থা ও ডিভিডেন্ড প্রধানের ধরণ যাচাই করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করুন। এতে করে বাজারের ইতিবাচক উন্নতিতে আপনার পুঁজির বিকাশ হবে।

























