সিএমএসএমই ঋণ এবং ভোক্তা ঋণ সীমার উপর আরোপিত ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ প্রত্যাহার করে একাউন্টে ফেরত দেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ী সংগঠন।
কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যে এবং অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এ সময়ের মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী কর্মহীন হয়েছে।
বর্তমানে ব্যবসায়ীক এই চরম মন্দাবস্থার মধ্যে সিএমএসএমই খাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এই ব্যবসায়ীক দুর্যোগময় মুহুর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ দশমিক ১০ শতাংশে উন্নীত করেছে। ইতিমধ্যে মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী সুদের হার আরেক দফা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৯ জুন বি আর পিডি সার্কুলার নং -৯ জারি করে। সার্কুলারে নিম্ন বিষয় উল্লখ করা হয়েছে।
‘সিএমএসএমই ঋণ এবং ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে উল্লেখিত সুদ হারের অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ১ শতাংশ সুপারভিশন চার্জ আদায় করা যাবে। উক্ত সুপারভিশন চার্জ বছরে এক বার আদায় করা যাবে। বার্ষিক ভিত্তিতে আরোপিত এ সুপারভিশন চার্জের উপর চক্রবৃদ্ধি হারে কোন চার্জ বা সুদ আরোপ করা যাবে না। তবে কোন ঋণ হিসাবে বছরের মধ্যবর্তী সময়ে সমন্বিত করার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে আনুপাতিক সময়ের জন্য সুপারভিশন চার্জ আদায় করা যাবে।’
এই সার্কুলারের মাধ্যমে সিএমএসএমই খাত ও ভোক্তা ঋণ সীমার উপর ১শতাংশ হারে সুপারভিশন চার্জ কর্তন করা হচ্ছে। উল্লেখ যে, ৭৫ কোটি টাকা ঋণ সীমা পর্যন্ত সিএমএসএমই খাত ধরা হয়। যার উপর ১শতাংশ কর্তন করা হলে ৭৫ লক্ষ টাকা কর্তন করা হয়।
এতে করে বিভিন্ন ঋণ গ্রহীতার একাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা কর্তন করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষুদ্র ও মাঝারী খাতে ব্যবসায়ীদের ঋণ খেলাপী ও ধ্বংসের মুখোমুখী দাড় করানো হবে। যা ব্যবসায়ীদের উপর মারাত্মক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মূল্য ক্ষতি ১২.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যা অতিতের যে কোন সময়ের চেয়ে বিপদজনক। এর মধ্য পণ্যর মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় বেচাকেনাও কমে গেছে। ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা মারাত্মক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যে মারাত্মক মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে আর্থিক মন্দার সময় অতিরিক্ত ১শতাংশ সুপারভিশন চার্জ কর্তন এখাতের ব্যবসায়ীদের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা।
ব্যবসায়ীক দীর্ঘ মেয়াদী মন্দার সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত সিএমএসএমই খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য মারাত্মক হুমকি। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সার্কুলার প্রত্যাহার করে কর্তনকৃত টাকা আগামী ১৫ অক্টোবর মধ্যে স্ব স্ব একাউন্টে ফেরত দেওয়ার জোর দাবি জানায় দোকান মালিক সমিতি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিচালক বলেন, ‘বড় অংকের ঋণের চেয়ে সিএমএসএমই ও ভোক্তা খাতের ঋণের সুপারভিশনে বেশি জনবল এবং অতিরিক্ত খরচ করতে হয়। সেজন্য এই চার্জ আরোপ করা হয়েছে। লস দিয়ে তো কেউ ব্যবসা করবেন না। এছাড়া ব্যাংক গুলোতো সহজে লোন দিতে চাচ্ছেনা। সুপারভিশন চর্জ ধার্য করার কারনেই এখন ব্যাংক গুলো লোন দিচ্ছে। আমরা এসএমই লোনকে বুস্টআপ করার জন্য অনেক চেষ্টা করছি। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গেই আছি। আমাদের ভুল বোঝার কোন কারন নেই। এ বিষয়ে ২৭ আগস্ট গভর্নরের কাছে আসা দোকান মালিক সমিতির চিঠি নিয়েও আলোচনা চলছে। যৌক্তিক হলে অবশ্যই সমাধান করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/এনআই