০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

গাজার হাসপাতালে হামলায় ‘স্তম্ভিত’ জাতিসংঘ মহাসচিব

গাজা উপত্যকার হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ‘স্তম্ভিত’ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও দাতব্য সংস্থাগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরাও হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন। বিধ্বস্ত হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অনেকে। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার আল-আহলি আরব নামের হাসপাতালে বোমা হামলা হয়। নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নিয়েছিল ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা।

জাতিসংঘের মহাসচিব এক্স বার্তায় বলেন, ‘গাজার হাসপাতালে এই হামলায় আমি স্তম্ভিত। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। হতাহত ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হাসপাতাল ও চিকিৎসা কর্মকর্তারা সুরক্ষিত।’

মধ্যপ্রাচ্যে নজিরবিহীন মানবিক দুর্ভোগ লাঘবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান গুতেরেস।

এদিকে হামলার জন্য হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলছে। ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি আছে বলে হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সবারই বোঝা উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গতকাল ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন। জো বাইডেনও আজ ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন।’

আর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘হাসপাতালে হামলা শত্রুপক্ষের নৃশংসতা ও হেরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ারই প্রকাশ। চলমান সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দেবে এই হামলা।’

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, গাজার সন্ত্রাসীদের ছোড়া রকেটই নিশানায় গিয়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে ওই হাসপাতালে আঘাত হেনেছে।

ইসরায়েলে সশস্ত্র বাহিনীর (আইডিএফ) এক মুখপাত্র বলেন, ‘বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজার সন্ত্রাসীদের ছোড়া বেশ কয়েকটি রকেট আঘাত হানার সময় গাজার আল-আহলি হাসপাতালের কাছে যাচ্ছিল। আমাদের হাতে থাকা একাধিক সূত্র থেকে গোয়েন্দা তথ্য এ কথাই বলে যে, গাজার হাসপাতালে রকেট হামলার জন্য ইসলামিক জিহাদ দায়ী।’

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র এই হামলাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করেছেন মাহমুদ আব্বাস।

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষা এবং যুদ্ধের অবসানের প্রয়োজনীয়তায় জোর দেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘ইসরায়েল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না, গাজার হাসপাতালে ভয়াবহ হামলা তারই সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নিতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে মিসর।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইসরায়েল যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে, এতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল সফরের আগে বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে বিস্ফোরণ এবং এর ফলে যে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটেছে, তাতে আমি ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে ব্যথিত।’

বাইডেন আরও বলেন, ‘সংঘাতের সময় বেসামরিক মানুষের জীবনের সুরক্ষার জন্য দ্ব্যর্থহীনভাবে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং আমরা এই ট্র্যাজেডিতে নিহত ও আহত রোগী, চিকিৎসাকর্মী এবং অন্য নিরপরাধ ব্যক্তিদের জন্য শোক জানাই।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গাজা উপত্যকার উত্তরে আল-আহলি আরব হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘হাসপাতালটি চালু ছিল। রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও বাস্তুহারা অসংখ্য মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদনে শতাধিক নিহত ও আহত হওয়ার কথা বলা রয়েছে।’

ডব্লিউএইচও আরও বলে, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তরে যে ২০টি হাসপাতাল খালি করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল, তার মধ্যে আল-আহলি আরব নামের হাসপাতালটিও ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অনেক রোগীর অবস্থাই গুরুতর এবং অ্যাম্বুলেন্সের সংকটও তীব্র। রোগী ও বাস্তুচ্যুতদের বিকল্প আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।’

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

জনপ্রিয়

মুরাদনগরের সাবেক ৫বারের এমপি কায়কোবাদের অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ

গাজার হাসপাতালে হামলায় ‘স্তম্ভিত’ জাতিসংঘ মহাসচিব

প্রকাশিত : ০১:১৪:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

গাজা উপত্যকার হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৫০০ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ‘স্তম্ভিত’ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও দাতব্য সংস্থাগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরাও হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন। বিধ্বস্ত হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অনেকে। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে মধ্য গাজার আল-আহলি আরব নামের হাসপাতালে বোমা হামলা হয়। নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নিয়েছিল ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা।

জাতিসংঘের মহাসচিব এক্স বার্তায় বলেন, ‘গাজার হাসপাতালে এই হামলায় আমি স্তম্ভিত। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। হতাহত ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হাসপাতাল ও চিকিৎসা কর্মকর্তারা সুরক্ষিত।’

মধ্যপ্রাচ্যে নজিরবিহীন মানবিক দুর্ভোগ লাঘবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান গুতেরেস।

এদিকে হামলার জন্য হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলছে। ইসরায়েলের এই হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি আছে বলে হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সবারই বোঝা উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন গতকাল ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার সঙ্গে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন। জো বাইডেনও আজ ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন।’

আর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘হাসপাতালে হামলা শত্রুপক্ষের নৃশংসতা ও হেরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ারই প্রকাশ। চলমান সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দেবে এই হামলা।’

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, গাজার সন্ত্রাসীদের ছোড়া রকেটই নিশানায় গিয়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে ওই হাসপাতালে আঘাত হেনেছে।

ইসরায়েলে সশস্ত্র বাহিনীর (আইডিএফ) এক মুখপাত্র বলেন, ‘বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজার সন্ত্রাসীদের ছোড়া বেশ কয়েকটি রকেট আঘাত হানার সময় গাজার আল-আহলি হাসপাতালের কাছে যাচ্ছিল। আমাদের হাতে থাকা একাধিক সূত্র থেকে গোয়েন্দা তথ্য এ কথাই বলে যে, গাজার হাসপাতালে রকেট হামলার জন্য ইসলামিক জিহাদ দায়ী।’

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র এই হামলাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করেছেন মাহমুদ আব্বাস।

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক সুরক্ষা এবং যুদ্ধের অবসানের প্রয়োজনীয়তায় জোর দেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘ইসরায়েল যে ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধেরও তোয়াক্কা করছে না, গাজার হাসপাতালে ভয়াবহ হামলা তারই সর্বশেষ উদাহরণ। গাজায় ‘নজিরবিহীন নৃশংসতা’ বন্ধে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নিতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছে মিসর।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইসরায়েল যেভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল ও জনবহুল এলাকায় হামলা করছে, এতে সংঘাত ভয়ংকরভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল সফরের আগে বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে বিস্ফোরণ এবং এর ফলে যে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটেছে, তাতে আমি ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে ব্যথিত।’

বাইডেন আরও বলেন, ‘সংঘাতের সময় বেসামরিক মানুষের জীবনের সুরক্ষার জন্য দ্ব্যর্থহীনভাবে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং আমরা এই ট্র্যাজেডিতে নিহত ও আহত রোগী, চিকিৎসাকর্মী এবং অন্য নিরপরাধ ব্যক্তিদের জন্য শোক জানাই।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গাজা উপত্যকার উত্তরে আল-আহলি আরব হাসপাতালে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘হাসপাতালটি চালু ছিল। রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও বাস্তুহারা অসংখ্য মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদনে শতাধিক নিহত ও আহত হওয়ার কথা বলা রয়েছে।’

ডব্লিউএইচও আরও বলে, ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তরে যে ২০টি হাসপাতাল খালি করে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিল, তার মধ্যে আল-আহলি আরব নামের হাসপাতালটিও ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির বিবেচনায় তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অনেক রোগীর অবস্থাই গুরুতর এবং অ্যাম্বুলেন্সের সংকটও তীব্র। রোগী ও বাস্তুচ্যুতদের বিকল্প আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।’

বিজনেস বাংলাদেশ/একে