নিজ নির্বাচনী এলাকার এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সদর সিনিয়র সহকারী জজ সেফাতুল্লাহ তাকে শোকজের নোটিশ পাঠান। নোটিশে আগামী রবিবারের মধ্যে শাহরিয়ার আলমকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শোকজ নোটিশে বলা হয়, গত ২ ডিসেম্বর শাহরিয়ার আলম চারঘাট উপজেলার ফরহাদ আলাউদ্দিন স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেওয়াকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রায়হানুল হকের কর্মী মেরাজুল ইসলাম মেরাজ চেয়ারম্যানকে ‘কুলাঙ্গার’ বলেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের পর তাকে দেখে নেওয়ার নির্দেশ দেন তার অনুসারীদের। এছাড়া আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রকার প্রচার সভা না করার বিধান সত্ত্বেও শাহরিয়ার আলম নির্বাচনী সভা করেছেন। এতে তিনি বিদ্যমান ২০০৮ সালের নির্বাচনী আইনের ৬ (গ) ও বিধি-১১ (ক) এবং ১২ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এসব অভিযোগ নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত।
তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত শোকজের জবাব শাহরিয়ার আলম দেননি বলে জানা গেছে।
এর আগে, গতকাল বুধবার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের কাছে শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২ ডিসেম্বর চারঘাটে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহরিয়ার আলম জনসম্মুখে তাকে ‘কুলাঙ্গার’ বলে অপবাদ দেন। পাশাপাশি তিনি ১৭ তারিখের পর তাকে দেখে নেওয়াসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন। উসকানিমূলক এই বক্তব্য তিনি প্রচার করেছেন। এতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শাহরিয়ার আলমের এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একটি ভিডিও নিজের ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১, আমাদের অনেকের চরিত্র হনন করা হয়েছে। নেতারা বিভ্রান্ত করেছেন বলেই কর্মীদের চরিত্র হনন হয়েছে। কারণ, কর্মীরা তো সবকিছু বোঝেন না, জানেন না, জ্ঞান নেই। কর্মীরা ২০২৩ সালে এসেও অনেক কিছু জানেন না বলে ওই মেরাজের মতো একটা ‘কুলাঙ্গার’ একটা অপব্যাখা দিয়ে সুস্থ শরীরে চলে যেতে পারে। আমি বেশি কথা বলতে চাই না। আমি কী বললাম? ১৭ তারিখ পর্যন্ত কন্ট্রোল। ১৭ তারিখ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ। ১৭ এর পরে যাত্রা হবে নিয়ন্ত্রণহীন।’
এ বিষয়ে মেরাজ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন প্রতিমন্ত্রী যখন এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেন, তখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় থাকব- এটাই স্বাভাবিক। তারপরেও আমরা দল করি। নিজেদের মতো করে আমাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা থেমে যাইনি। শাহরিয়ার ত্যাগী নেতাকর্মীদের তাড়িয়ে দিয়ে এমপিলীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। নির্বাচনে জনগণ এর জবাব দেবে।’
জানা গেছে, রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা রাহেনুল হকের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করছেন মেরাজ।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান শোকজ করেছেন। জবাব পেলে পরবর্তীকালে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তিনি।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ





















