চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও সিভিল সার্জনের কাছে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ও ভারপ্রাপ্ত স্টোর কিপার দিদুল সিকদারকে অভিযুক্ত করা হয়।
স্থানীয় খালেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) বরাবর দেয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ দীর্ঘ দেড়যুগেরও বেশি একই স্থানে বিভিন্ন পদে বহাল রয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি মেডিকেল অফিসার, আরএমও এবং ২০১৫ সাল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একই স্থানে বিভিন্ন পদে বহাল থেকে টেন্ডার পাওয়া যোগ্য ঠিকাদারকে কাজ না দিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে আসছেন। তৎমধ্যে অফিস সহকারিকে দিয়ে খাদ্য ও লিলেন ফরমের পৃষ্ঠা বদল করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে কয়েক বছর যাবত একই ঠিকাদারকে কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। টেন্ডার জমা দেওয়ার দিন ঠিকাদারের উপস্থিতিতে ফরম খুলে দেখানোর নির্দেশ থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আগের মতো যোগ্য ব্যক্তিকে কাজ না দিয়ে প্রায় ৪ মাস টেন্ডার ফরম ও পে-অর্ডার আটকে রেখে অবৈধভাবে পছন্দের লোককে কাজ দেয়া হচ্ছে। ফরমের নমুনা স্বাক্ষর পরীক্ষা করলে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একই পদে দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকার কারণে বার বার এই ধরণের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরদিকে স্থানীয় মো. মারুফ নামে আরেক ব্যক্তি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন বরাবর দেয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াফি নার্স কর্মরত আছেন। সরকারি আদেশ অনুযায়ী অভিজ্ঞতা অর্জনের আলোকে প্রত্যেক স্টাফ নার্সকে এক বছর পর পর দায়িত্বভার হস্তান্তরের বিধান থাকলেও বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে গত ৫ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র সিনিয়র স্টাফ নার্স সালমা বেগমকে বার বার ওয়ার্ড ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে অন্য নার্সরা প্রতিবাদ করলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাদেরকে বিভিন্ন শাস্তি প্রদান, কর্তব্য কাজে কোনঠাসা ও শাস্তিমূলক বদলির হুমকি প্রদান করে আসছেন।
এছাড়া স্থানীয় মো. আতাউর রহমান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন বরাবরে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ও ভারপ্রাপ্ত স্টোর কিপার দিদুল সিকদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সাল থেকে তিনি একই স্থানে চাকুরি করার সুবাধে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে- প্যাথলজির বিভিন্ন সরকারি মূল্যবান রি-এজেন্ট বাহিরে বিক্রি করে দেয়া, প্যাথলজিতে বিভিন্ন পরীক্ষার ফি বাবদ প্রায় টাকা সরকারি রেজিস্টারে না তুলে আত্মসাৎ করা, বিগত করোনা মহামারির সময় করোনা সোয়াব সংগ্রহের সময় প্রতিটি রোগি থেকে নির্দিষ্টহারে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করা, সরকারি কোয়ার্টারে একটি কক্ষের ভাড়া দিয়ে পুরো বাসা ভোগ করা, দীর্ঘদিন স্টোর কিপারের দায়িত্ব পালনের সুবাধে হাসপাতালের ঔষুধপত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মাধ্যমে বাহিরে বিক্রি করে দেয়া ও হাসপাতালের কম্পাউন্ড পরিস্কার করার অর্থ লোভ দেখানো কাজ করে আত্মসাৎ করা। এছাড়া দাপটে হাসপাতালের আবাসিক ও আউটডোর কর্মচারি এবং ইনডোর কর্মকর্তা-কর্মচারি সবসময় তটস্থ থাকেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ও ভারপ্রাপ্ত স্টোর কিপার দিদুল সিকদার তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তাকে অবহিত করেন নাই। তাই এই ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
তবে এই ব্যাপারে কেউ নিউজ করলে ওই সাংবাদিকসহ অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তাধীন। এছাড়া একই হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) দিদুল সিকদারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে দেখে জানাতে হবে বলে জানান।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পর পর দুই দিন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. মহিউদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি পরীক্ষার হলে আছেন। তাই কথা বলা যাবে না। এছাড়া রাত ১০টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে বলে জানায়। ফলে অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিজনেস বাংলাদেশ/একে





















