ছুটির দিনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে ঘুরার মতো অনেক ঐতিহ্যমণ্ডিত স্হান আছে। দেখে চোখ জুড়ানোর পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থান ও ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জনেরও অনেক সুযোগ রয়েছে।প্রাচীন জেলা কুমিল্লার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহার।
কুমিল্লা শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে শালবন বিহার ও ময়নামতি (কোটবাড়ি) অবস্থিত।আর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা।বিহারটির আশেপাশে একসময় প্রচুর পরিমাণে শাল-গজারির বন ছিল বলে বিহারটির নামকরণ করা হয়েছে শালবন বিহার নামে।
এখনও বিহারের পাশে প্রচুর শাল-গজারি গাছ দেখতে পাওয়া যায়।বিহারের রাস্তার পূর্ব পাশে শালবন মাঠ যেখানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা বিভিন্ন খেলার আয়োজন করে থাকে এবং মাঠের ঠিক পূর্বপাশে অবস্হিত অতি চমৎকার নিদর্শন “বৌদ্ধ মন্দির”।
ছুটির দিনে আমরা একঝাক তরুণ গিয়েছিলাম সেই নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্হানে।কেউ ছোট কেউ বড় কিংবা কেউ নৃবিজ্ঞান, কেউ মার্কেটিং,কেউ ব্যবস্হাপনা বিভাগের তবে সবাই ছিল কিশোরগঞ্জের এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ণরত।
নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই ঐতিহাসিক স্হানটি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা বিনোদন ও জ্ঞানপিপাসু পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর হয়ে উঠে।
শালবন বিহার ও ময়নামতির জাদুঘরের চারপাশে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ফুলের বাগান মানুষের মনকে প্রফুল্ল করার মতো।
ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে ব্যবস্হাপনা বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ও ছাত্র,পর্যটক তথা গবেষকদের কাছেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্হান হিশেবে মনে হচ্ছে এই ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারটি। তবে এমন দর্শনীয় স্হান আগামী প্রজন্মকে ইতিহাস সমৃদ্ধ করবে।
কুমিল্লার ঐতিহ্যমণ্ডিত স্হান খননকালে যতো মূল্যবান পুরাসামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায় তা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৬৫ সালে কুমিল্লার কোটবাড়ির শালবনবিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী ময়নামতি জাদুঘর করা হয়েছে।
জাদুঘরকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে প্রত্নতত্ত্বীয় বিশ্রামাগার ও মনোরম ফুলের বাগানও গড়ে তোলা হয়েছে।
জাদুঘরের ভেতরে যেতেই সবাই আশ্চর্য হয়েছিলাম প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু দেখে। ময়নামতি জাদুঘরে ছবি তোলা নিষেধ ছিল তাই কাউকে ইতিহাসের সাথে স্মৃতিকে এক করতে দেখা যায় নি।
জাদুঘরের ভেতরের বিভিন্ন গ্যালারিতে ছিল ধ্বংসাবশেষকৃত ভূমি-নকশা,ধাতুলিপি ফলক,প্রাচীন মুদ্রা,পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জমূর্তি, পাথরের মূর্তি ও মাটির বিভিন্ন পাত্রসহ দেখার মতো অনেককিছু।
ময়নামতি জাদুঘর ঘুরার পর হাঁটতে লাগলাম শালবন বিহারের দিকে। এই বৌদ্ধবিহারটি খননকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক আদি নিদর্শন এবং দেখতে চৌকানোকৃতির। এই বিহারটির বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে মধ্যবর্তী স্হানে বিশালাকার তোরণটি।
মূল ফটকের সামনে যেতে চোখে পড়ে খননকৃত একটি প্রাচীন কূপ। তারপর সবকিছু দেখে আমরা একসাথে বসেছিলাম বিহারের উত্তর পার্শ্বে। বিহার সম্পর্কে উঠে আসে নানা কথা।
মার্কেটিং বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ম.রকিবুল হাসান রকি বলেন, ছোটবেলায় পাঠ্য বইয়ে শালবন বিহার ও ময়নামতি সম্পর্কে অনেক পড়েছি। তবে প্রতিবার পড়ার সময় দেখার ইচ্ছে জাগত কিন্তু সুযোগ ছিল না। অথচ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছাকাছি অবস্হিত বলে খুব সহজেই এখন শালবন বিহার ও ময়নামতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারছি যা সত্যিই সৌভাগ্যের।
বিহার ও জাদুঘরকে কেন্দ্র করে নিজেদের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ ও নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাসমুখী করার জন্যে প্রতিটা ছাত্র,গবেষক ও ভ্রমণপিপাসুদের নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্হানের ঘটনাসমূহ ও জ্ঞানঅর্জনের জন্য এসব স্হান ঘুরে দেখা দরকার বলেও মনে করেন আড্ডায় মেতে উঠা কিশোরগঞ্জের এক খণ্ড।