০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সেদিন কী ঘটেছিল কারবালা প্রান্তরে

  • ধর্ম ডেস্ক
  • প্রকাশিত : ১১:৪২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
  • 145

হিজরি পঞ্জিকায় আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা। আজকের এই দিনে নবি কারিম (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এজিদের সৈন্যবাহিনীর হাতে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। সেদিনের সেই মর্মান্তিক ঘটনাটি মারাত্মক লোমহর্ষক ও হৃদয় বিদারক।

আমীরে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে এজিদ সমস্ত রাজ্যের (মদিনা, সিরিয়া, কুফা) ইত্যাদি শাসনভার গ্রহণ করে, তখন ইমাম হোসাইন মদিনায় ছিলেন। এজিদ মদিনার গভর্নরের মাধ্যমে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে এজিদের আনুগত্য স্বীকার করতে বলেন। কিন্তু একজন জুলুমবাজ শাসকের আনুগত্য আনুগত্যে রাজি হননি ইমাম হোসাইন।

এর জেরে এজিদ মদিনার গভর্নরকে নির্দেশ দেন ইমাম হোসাইনকে কারাগার পাঠানোর। নবিজি (সা.)-র নাতিকে কারাগারে পাঠানোর ব্যাপারে মদিনার গভর্নর ভীষণ বিপদে পড়ে যান। তিনি তখন হজরত ইমাম হোসাইনকে অনুরোধ করেন মদিনা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে।

ইমাম হোসাইন তখন বাধ্য হয়ে মক্কায় চলে যান। এ অবস্থায় কুফাবাসী চিঠির পর চিঠি দিয়ে ইমাম হোসাইনকে কুফা যাওয়ার অনুরোধ জানান। ভরসা দেন যে, তিনি কুফা গেলেই সবাই তার বাইয়াত গ্রহণ করবেন।

এদিকে, ধূর্ত এজিদ কুফার গভর্নরকে পরির্তন করে সেখানে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে নতুন গভর্নর করেন, সে ছিল হিংস্র ও নির্মম।

ইবনে যিয়াদ কুফায় এসে ৪ হাজার দুর্দান্ত সৈন্য দ্বারা কারবালাকে ঘিরে রাখেন, যাতে করে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কুফা যেতে না পারেন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ৬০ হিজরির জিলহজ্ব মাসের শেষের দিকে রওয়ানা হয়ে, ৬১ হিজরী মুহাররম মাসের ৮ তারিখে কারবালার প্রান্তরে পৌঁছেন।

এদিকে এজিদের সৈন্য দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেখানে তাঁবু ফেলতে বাধ্য হন তিনি। এজিদের সৈন্য বাহিনী ঘোষণা করে আনুগত্য স্বীকার করুন, নতুবা যুদ্ধ করুন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) তখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করাই শ্রেয় মনে করলেন।

আশুরার দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একে একে ৭১ জন শহীদের লাশ ইমাম হোসাইন (রা.) কাঁধে বয়ে তাঁবুতে নিয়ে এলেন। এরপর নিজে লুটিয়ে পড়লেন যুদ্ধ করতে করতে।

শত্রুরা হজরত জয়নাবসহ রুগ্ন শিশু, পুত্রহীনা ও বিধবা সর্বমোট ১২ জনকে এক শেকলে বেঁধে শেকলের এক মাথা হজরত জয়নুল আবেদিনের বাহুতে বেঁধে এবং অন্য মাথা হজরত জয়নাবের বাহুতে বেঁধে দেয়। ইয়াজিদ তাদের তপ্ত মরুতে এখানে-সেখানে, হাটে-বাজারে ঘুরিয়েছে, যাতে দুনিয়াবাসী জানতে পারে ইয়াজিদ বিজয় অর্জন করেছে।

নবি পরিবারকে বন্দি অবস্থায় কুফা থেকে শত শত মাইল দূরে সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার সবুজ রাজপ্রাসাদে আনা হলো। কিন্তু হজরত জয়নাব এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার পরও ইয়াজিদের দরবারে এমন সাহসী ভূমিকা রাখলেন যে, পুরো দরবার কেঁপে উঠল।

তার ভাষণ শুনে উপস্থিত সবাই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। ইয়াজিদও নিশ্চুপ হয়ে গেল। হজরত জয়নাবের তেজস্বী বক্তব্যে সিরিয়ায় বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখে চতুর ইয়াজিদ তার কৌশল বদলাতে বাধ্য হলো। বন্দিদের সসম্মানে মদিনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করল।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

সেদিন কী ঘটেছিল কারবালা প্রান্তরে

প্রকাশিত : ১১:৪২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

হিজরি পঞ্জিকায় আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা। আজকের এই দিনে নবি কারিম (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এজিদের সৈন্যবাহিনীর হাতে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেন। সেদিনের সেই মর্মান্তিক ঘটনাটি মারাত্মক লোমহর্ষক ও হৃদয় বিদারক।

আমীরে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে এজিদ সমস্ত রাজ্যের (মদিনা, সিরিয়া, কুফা) ইত্যাদি শাসনভার গ্রহণ করে, তখন ইমাম হোসাইন মদিনায় ছিলেন। এজিদ মদিনার গভর্নরের মাধ্যমে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে এজিদের আনুগত্য স্বীকার করতে বলেন। কিন্তু একজন জুলুমবাজ শাসকের আনুগত্য আনুগত্যে রাজি হননি ইমাম হোসাইন।

এর জেরে এজিদ মদিনার গভর্নরকে নির্দেশ দেন ইমাম হোসাইনকে কারাগার পাঠানোর। নবিজি (সা.)-র নাতিকে কারাগারে পাঠানোর ব্যাপারে মদিনার গভর্নর ভীষণ বিপদে পড়ে যান। তিনি তখন হজরত ইমাম হোসাইনকে অনুরোধ করেন মদিনা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে।

ইমাম হোসাইন তখন বাধ্য হয়ে মক্কায় চলে যান। এ অবস্থায় কুফাবাসী চিঠির পর চিঠি দিয়ে ইমাম হোসাইনকে কুফা যাওয়ার অনুরোধ জানান। ভরসা দেন যে, তিনি কুফা গেলেই সবাই তার বাইয়াত গ্রহণ করবেন।

এদিকে, ধূর্ত এজিদ কুফার গভর্নরকে পরির্তন করে সেখানে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে নতুন গভর্নর করেন, সে ছিল হিংস্র ও নির্মম।

ইবনে যিয়াদ কুফায় এসে ৪ হাজার দুর্দান্ত সৈন্য দ্বারা কারবালাকে ঘিরে রাখেন, যাতে করে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কুফা যেতে না পারেন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ৬০ হিজরির জিলহজ্ব মাসের শেষের দিকে রওয়ানা হয়ে, ৬১ হিজরী মুহাররম মাসের ৮ তারিখে কারবালার প্রান্তরে পৌঁছেন।

এদিকে এজিদের সৈন্য দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেখানে তাঁবু ফেলতে বাধ্য হন তিনি। এজিদের সৈন্য বাহিনী ঘোষণা করে আনুগত্য স্বীকার করুন, নতুবা যুদ্ধ করুন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) তখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করাই শ্রেয় মনে করলেন।

আশুরার দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একে একে ৭১ জন শহীদের লাশ ইমাম হোসাইন (রা.) কাঁধে বয়ে তাঁবুতে নিয়ে এলেন। এরপর নিজে লুটিয়ে পড়লেন যুদ্ধ করতে করতে।

শত্রুরা হজরত জয়নাবসহ রুগ্ন শিশু, পুত্রহীনা ও বিধবা সর্বমোট ১২ জনকে এক শেকলে বেঁধে শেকলের এক মাথা হজরত জয়নুল আবেদিনের বাহুতে বেঁধে এবং অন্য মাথা হজরত জয়নাবের বাহুতে বেঁধে দেয়। ইয়াজিদ তাদের তপ্ত মরুতে এখানে-সেখানে, হাটে-বাজারে ঘুরিয়েছে, যাতে দুনিয়াবাসী জানতে পারে ইয়াজিদ বিজয় অর্জন করেছে।

নবি পরিবারকে বন্দি অবস্থায় কুফা থেকে শত শত মাইল দূরে সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার সবুজ রাজপ্রাসাদে আনা হলো। কিন্তু হজরত জয়নাব এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার পরও ইয়াজিদের দরবারে এমন সাহসী ভূমিকা রাখলেন যে, পুরো দরবার কেঁপে উঠল।

তার ভাষণ শুনে উপস্থিত সবাই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। ইয়াজিদও নিশ্চুপ হয়ে গেল। হজরত জয়নাবের তেজস্বী বক্তব্যে সিরিয়ায় বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখে চতুর ইয়াজিদ তার কৌশল বদলাতে বাধ্য হলো। বন্দিদের সসম্মানে মদিনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করল।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে