বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে লেখক-সাংবাদিকদেরকে সৃষ্টিশীল দৃঢ় ভূমিকা রাখবার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে লেখক-সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় শনিবার এ আহ্বান জানিয়েছেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। লেখক-সাংবাদিকরাও দেশের এই ক্রান্তিকালে জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার ব্যাপারে সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সোচ্চার থাকার গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
সাংবাদিক আব্দুর রহমান মল্লিকের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক সৈয়দ তোশারফ আলী, সাংবাদিক নেতা কবি আব্দুল হাই শিকদার, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি এম. আব্দুল্লাহ, সাংবাদিক ও গবেষক কবি শামীমা চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক আহমদ মতিউর রহমান, কবি ও লেখক ফজলুল হক খান, কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, কবি আসলাম সানী, সিনিয়র সাংবাদিক জামালুদ্দিন বারী, কবি রফিক মোহাম্মদ, সাংবাদিক নেতা আশরাফুল ইসলাম ও আবুল হাসান হৃদয়, সিনিয়র সাংবাদিক ও ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারে রিট পিটিশনার মোহাম্মদ আবদুল অদুদ, ছড়াকার আলম শামস, গীতিকার সায়ীদ আবদুল মালিক, লেখক-কবি ইমরান মাহফুজ, সাংবাদিক শাহিদুল ইসলাম, শাহনাজ পলি ও নাসরিন গীতি, কবি জাহেদ আবেদীন, সাংবাদিক নিথর মাহবুব, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ৩৬ জুলাইয়ের সাহসী যোদ্ধা তাহমিনা আক্তার তমা ও আলেয়া বেগম আলো প্রমুখ।
প্রবীণ লেখক সৈয়দ তোশারফ আলী বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের জন্য সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। আমরা একে স্বাগত জানাই। সাথে সাথে এটাও বলতে চাই, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নিলে রাষ্ট্রের বেশির ভাগ সমস্যা সমাধান হবে। আমরা যদের ব্যাপারেই আজ কথা বলছি, এমনকি সাংবাদিক, লেখক, কবি সাহিত্যিক সহ সবাই যারা স্বৈরাচারের দোসরের ভুমিকা পালন করেছে এর মৌলিক কারণ সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশা। মুল কথা অবৈধভাবে ক্ষমতা, বাড়ি, গাড়ি সম্পদের মালিক হওয়া। দেশ তখনই সঠিকভাবে চলবে যখন আইনের শাসন, ন্যায় বিচার এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। এটা কাগজ কলমে নয়, বাস্তবিক অর্থেই সরকার করবে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশকে সঠিকভাবে চালাতে হলে এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আমরা যারা সাংবাদিক, লেখক, কবি, সাহিত্যিক আছি, যারা চাই দেশটা ভালো চলুক, মানুষ অধিকার পাক, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হোক তাদেরও সঠিক ভুমিকা রাখতে হবে। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে হবে। সত্য লিখতে হবে। ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিলে রাষ্ট্রকে কোন সময়ই সঠিকভাবে চালানো সম্ভব নয়।
কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, শেখ মুজিব সংগ্রামী নেতা হলেও তিনি বড় মাপের ফ্যাসিবাদের প্রতীক। দূর্ভাগ্যের বিষয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরও ফ্যাসিবাদের এই প্রতীক উপদেষ্টাদের মাথার উপর ঝুলছে। তারা সাংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। আমরা সুস্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, এই সরকার গনঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী সরকার। এই সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ এই সংবিধানকে ফেলে দিয়ে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন রেখে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। কারণ, এই সংবিধান দেশের ছাত্র- জনতার আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না।
এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু উপস্থিত লেখক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এই দেশ, এই সমাজের আয়না। একটি ফ্যাসিবাদি সরকার সমাজে এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলো যে, আজ সাংবাদিকদের দেশছেড়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরাতো এমন দেশ চাই না যেখানে সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক বা প্রেসক্লাবের সভাপতিকে পালিয়ে যেতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আমরা লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিকদের কাছে নতুন করে দেশ গড়ার সঠিক ভুমিকা চাই। আমরা চাই বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে আপনারা সৃষ্টিশীল দৃঢ় ভূমিকা রাখুন, আমরা সার্বিক সহোযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ।
অন্য আলোচকরাও জাতীয় ঐক্য সংরক্ষণে ও চক্রান্ত রুখে দিতে সজাগ থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। মতবিনিময় সভায় দেশের স্বনামধন্য সাংবাদিক, লেখক ও কবি সাহিত্যিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।