০৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষকের উদাসীনতায় ৯ বছর আটকে আছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর অনার্সের ফলাফল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহার উদাসীনতায় ৯ বছর আটকে আছে বিভাগটির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোলাইমান বাদশার অনার্সের ফলাফল। অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলের সাথে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ফল যোগ না করায় এই দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে বলে দাবি করেন সুলাইমান।

বৃহস্পতিবার(৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১ টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুলাইমান বলেন, ১৮তম ব্যাচের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১৪ সালে চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করি কিন্তু একটা বিষয়ে অকৃতকার্য হই। ফলে ২০১৫ সালে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে সব বিষয়ে পাশ করি। আমার চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখি আমি নাকি ক্লাস টিউটোরিয়াল পরিক্ষায় ফেল করেছি। সব টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দেওয়ার পর ফেল দেখানো হয়েছে। তারপরও আমি ফেল করেছি এটা মেনে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক ও শিক্ষকদের পরামর্শে ২০১৫ সালে পরিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা স্যারের কাছে টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় বসার অনুমতির জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি ছাত্র হওয়ার পরও নির্মল স্যার আমাকে টিউটোরিয়াল পরিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেননি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে এবি এম আবু নোমান স্যার আইন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়। আমি নোমান স্যারের কাছে গিয়ে আমার বিষয়টা বুঝিয়ে বলি তখন স্যার আমাকে টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন। আমি পুনরায় টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলাম। এরপর তৎকালীন পরিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা স্যারকে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ফল যোগ করে অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন, প্রকাশ করবো, অপেক্ষা করো। কিন্তু সেই ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়নি। আমি রেজাল্ট প্রকাশ করার জন্য স্যারের নিকট হাজারো বার গিয়েছে কিন্তু স্যারের মন নরম হয়নি। এখন আমার বয়স প্রায় ৩৫ বছর। পাশ করার পরও অনার্সের রেজাল্ট প্রকাশ না করার কারণে আমি কোন সরকারী বা বেসরকারি চাকরির পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি।

এত দীর্ঘসূত্রিতা হওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার কথা কাউকে জানালে তিনি আরও ১০ বছর আমাকে অপেক্ষা করাবেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন এজন্য ওনার ভয়তে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য স্যারকে জানায়নি। কিন্তু আইন অনুষদের ডিনসহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের জানিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহা বলেন, আমরা তাকে স্পেশাল সুযোগের মাধ্যমে অনেকবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি কিন্তু সে বারংবার ফেইল করেছে। আমরা আন্তরিক বলেই তাকে এই সুযোগগুলো দিয়েছি। সে বলছে, ২০১৫ সালে পাশ করেছে। এটা আসলে সত্য নয়। আমি ইচ্ছে করে তার ফলাফল আটকে রাখিনি। তিনজন শিক্ষক টিউটোরিয়াল পরীক্ষার ফলাফল না দেওয়ায় তার চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ করতে পারছি না।

যে তিনজন শিক্ষক টিউটোরিয়াল পরীক্ষার ফলাফল দেয়নি তাদেরকে আপনি জবাবদিহি করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন শিক্ষকই জোর করতে পারি না। আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছি দ্রুত ফল দিতে।

তিনজন শিক্ষকের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই তিনজন শিক্ষকের নাম বলতে চাচ্ছি না।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

শিক্ষকের উদাসীনতায় ৯ বছর আটকে আছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর অনার্সের ফলাফল

প্রকাশিত : ০২:০২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহার উদাসীনতায় ৯ বছর আটকে আছে বিভাগটির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোলাইমান বাদশার অনার্সের ফলাফল। অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলের সাথে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ফল যোগ না করায় এই দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে বলে দাবি করেন সুলাইমান।

বৃহস্পতিবার(৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১ টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুলাইমান বলেন, ১৮তম ব্যাচের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১৪ সালে চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করি কিন্তু একটা বিষয়ে অকৃতকার্য হই। ফলে ২০১৫ সালে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে সব বিষয়ে পাশ করি। আমার চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখি আমি নাকি ক্লাস টিউটোরিয়াল পরিক্ষায় ফেল করেছি। সব টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দেওয়ার পর ফেল দেখানো হয়েছে। তারপরও আমি ফেল করেছি এটা মেনে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক ও শিক্ষকদের পরামর্শে ২০১৫ সালে পরিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা স্যারের কাছে টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় বসার অনুমতির জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি ছাত্র হওয়ার পরও নির্মল স্যার আমাকে টিউটোরিয়াল পরিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেননি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে এবি এম আবু নোমান স্যার আইন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়। আমি নোমান স্যারের কাছে গিয়ে আমার বিষয়টা বুঝিয়ে বলি তখন স্যার আমাকে টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন। আমি পুনরায় টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলাম। এরপর তৎকালীন পরিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা স্যারকে টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ফল যোগ করে অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন, প্রকাশ করবো, অপেক্ষা করো। কিন্তু সেই ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়নি। আমি রেজাল্ট প্রকাশ করার জন্য স্যারের নিকট হাজারো বার গিয়েছে কিন্তু স্যারের মন নরম হয়নি। এখন আমার বয়স প্রায় ৩৫ বছর। পাশ করার পরও অনার্সের রেজাল্ট প্রকাশ না করার কারণে আমি কোন সরকারী বা বেসরকারি চাকরির পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি।

এত দীর্ঘসূত্রিতা হওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার কথা কাউকে জানালে তিনি আরও ১০ বছর আমাকে অপেক্ষা করাবেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন এজন্য ওনার ভয়তে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য স্যারকে জানায়নি। কিন্তু আইন অনুষদের ডিনসহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের জানিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নির্মল কুমার সাহা বলেন, আমরা তাকে স্পেশাল সুযোগের মাধ্যমে অনেকবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি কিন্তু সে বারংবার ফেইল করেছে। আমরা আন্তরিক বলেই তাকে এই সুযোগগুলো দিয়েছি। সে বলছে, ২০১৫ সালে পাশ করেছে। এটা আসলে সত্য নয়। আমি ইচ্ছে করে তার ফলাফল আটকে রাখিনি। তিনজন শিক্ষক টিউটোরিয়াল পরীক্ষার ফলাফল না দেওয়ায় তার চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ করতে পারছি না।

যে তিনজন শিক্ষক টিউটোরিয়াল পরীক্ষার ফলাফল দেয়নি তাদেরকে আপনি জবাবদিহি করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোন শিক্ষকই জোর করতে পারি না। আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছি দ্রুত ফল দিতে।

তিনজন শিক্ষকের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই তিনজন শিক্ষকের নাম বলতে চাচ্ছি না।

বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস