চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রেল স্টেশন সংলগ্ন দোকান দখলকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সোমবার (২১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৩টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানাফের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
আহত ৪ শিক্ষার্থী হলেন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোনায়েম শরীফ এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান।
শিক্ষার্থীরা জানান, গতরাত সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের পরিচালিত একটি দোকান দখল করতে আসে হাটহাজারী উপজেলার যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানাফের নেতাকর্মীরা। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিতি থাকায় তাদের উপর ককটেল বিস্ফরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। পরে ক্যাম্পাসে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে জড়ো হন এবং রেল ক্রসিংয়ের দিকে হামলার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে গেলে আবার শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফরণ ও গুলি বর্ষণ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময়ে চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলি ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী রেল স্টেশন সংলগ্ন আপ্যায়ণ ঘর নামে একটি দোকান পরিচালনা করত। গত রাত সাড়ে ৩টার দিকে এই দোকানটি দখল করতে আসে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময়ে তারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমরা সকালে রেল ক্রসিংয়ের দিকে মিছিল নিয়ে গেলে তারা আবার আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা এ সময়ে পুলিশ বারবার ফোন করেছি কিন্তু পুলিশ তেমন সহযোগিতা করেনি।
চারজন আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চবি মেডিকেল কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, স্থানীয় দুই ব্যাবসায়ীর দ্বন্দ্বে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফরণ করেন৷ এ সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে তারা হল থেকে বের হয়ে রেল ক্রসিংয়ের গেলে দিকে গেলে তারা আবার ককটেল বিস্ফরণ করেন। এ সময়ে পুলিশলের সহযোগিতা তেমন পায়নি।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে অসহযোগিতার অভিযোগ করছে সেটা সঠিক নয়। আমরা ৬টা ১৮ মিনিটে খবর পেয়েছি এবং ৬টা ২৬ মিনিটে রেল ক্রসিংয়ের এখানে উপস্থিত হয়েছি। স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়েছিল তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের কোনো ঝামেলা না হয়। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার জন্য সবরকম সহযোগিতা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে।
উল্লেখ্য,বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সবগুলো দোকানের ভাড়া নেয় হানিফ। এ ছাড়া তার ছোটোভাই ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল পুরো ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ডিসের লাইন এবং ওয়াইফাইয়ের ব্যবসা করে।
নিম্নমানের ইন্টারনেট দিয়ে দীর্ঘদিন এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যকাউকে তারা এখানে ব্রডব্যান্ডের ব্যবসাও করতে দেয় না। এমনকি শিক্ষার্থীরা তাদের এসব সমস্যা নিয়ে মুখ খুললে হুমকিধামকি ও গুপ্ত হামলা চালায় হানিফ বাহিনী।
বিজনেস বাংলাদেশ/ডিএস