কুমিল্লার মুরাদনগরে পুলিশী হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সেখানকার সনাতনী ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের লোকজন। একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত মিথ্যা অপবাদের কারণে কুমিল্লার পুলিশ সুপার, ডিবির ওসি, মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি তাদের। পাশাপাশি এসব ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার দায়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ারও পদত্যাগ দাবি করেন সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান।
কুমিল্লার মুরাদনগরের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা নিরসনে উপদেষ্টার ফ্যাসিবাদী আচরণ ও পুলিশের নির্যাতন থেকে মুরাদনগরের মানুষকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মুরাদনগর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী জনতা। সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে দাউদকান্দি এলাকায় পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয় এবং ভাড়া করা বাসের চালককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার অভিযোগ করা হয়। পরে ভুক্তভোগী সনাতনী লোকজন অন্য বাসে করে ঢাকায় আসেন।
লিখিত বক্তব্যে মুরাদনগর পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক দীন দয়াল পাল বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরের সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে আজ অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে, গত সাড়ে ১৫ বছর কথিত সংখ্যালঘু দরদী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি দখলসহ নানান নিপীড়নের শিকার হয়েছে মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আপনজন পাঁচ বারের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও তার নেতাকর্মীরা পূর্বের ন্যায় আবারো মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ সকল জনতার সেবায় নিয়োজিত হবেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী মুরাদনগরের জনগণের সেবক হিসেবে নিজেকে উৎসর্গকারী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে আমাদের সকল মন্দির ও ঘর বাড়িতে পাহারা বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। কার সহযোগিতায় আজও পর্যন্ত মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদেই জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, ৫ আগষ্ট দেশের বিভিন্নস্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের সহযোগিতায় আমরা পুরো মুরাদনগরবাসী ছিলাম অক্ষয়। এই তো সেদিন তিনি আমাদের প্রত্যেক হিন্দু নেতাদের ফোন করে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রত্যেক মন্দির ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘর-বাড়ি পাহাড়া দেবে। এবং সেটি বাস্তবায়নও হয়েছিল।
দীন দয়াল পাল বলেন, বিগত ৪০ বছর ধরে মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশে রয়েছেন। আমাদের পূজা উদযাপন, বিয়ে-সাদীসহ বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ সব কিছুতেই তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন। অথচ আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তার জন্য কিছুই করতে পারিনি। তবে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্রমুলক মামলা প্রত্যাহার করে তাকে বেকসুর খালাস ঘোষণার দাবিতে মুরাদনগরের সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেছেন। যা মিডিয়ায় আসার পর কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও তার পরিবার জেনেছে।
তিনি আরো বলেন, অথচ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কথিত ফেসবুক এক্টিভিস্ট রাজিব আহমেদ, যার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নারী কেলেঙ্কারিসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে এবং ধর্ষনের দায়ে সিঙ্গাপুরে সাজা খেটেছে। তিনি আমাদের মানববন্ধন কায়কোবাদের টাকায় কেনা লোক দিয়ে হয়েছে বলে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের অপমান করে ফেসবুকে অপপ্রচার করেছে। শুধু তাই নয় আমাদের কয়েকজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতার নাম উচ্চারণ অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেছে। যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাক স্বাধীনতার জন্য হুমকি।
দীন দয়াল পাল বলেন, মুরাদনগরের মানুষসহ কুমিল্লা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বিভিন্ন উপজেলার মানুষের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কোম্পানিগঞ্জ গত ১৭ বছর ধরে যানজটের অভিশাপে অভিশপ্ত ছিল। কিন্তু মুরাদনগরবাসীর আপনজন কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সেই যানজট নিরসন করে কয়েকটি জেলা ও উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের কষ্ট লাঘব করেছেন।
তবে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, যানজট নিরসনের জন্য নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার চাচাতো ভাই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মারধর করে এবং পুলিশে তুলে দেয়। শ্রমিকরা তার প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং সেদিন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে রাতভর শালিসও চলে। সেখানেও আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতা উপস্থিত ছিলেন। অথচ রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর শালিসে বসে বিষয়টি সমাধান করতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দেয় এবং মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ ও রমজানজুড়ে পুরো মুরাদনগরের পুলিশ ও ডিবি আতংক বিরাজ করে। এখনো কুমিল্লার এসপি ও ডিবির হয়রানির শিকার মুরাদনগরের মানুষ। রাত হলেই পুলিশের গাড়ির হর্ণে আতংকিত হয়ে উঠে মুরাদনগরের মানুষ। পুলিশের এহেন তৎপরতায় মনে হয় এ যেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দু: শাসনের প্রতিচ্ছবি।
তিনি বলেন, মুরাদনগরের শান্তিপ্রিয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কাউকে চাঁদা দেওয়া তো দূরের কথা হীনমন্যতায়ও ভুগতে হয়নি। অথচ গত কিছুদিন পূর্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বাবার নেতৃত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টার বাবার হয়ে সাংবাদিকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে হট্রগোল করা রাজিব ফেসবুকে অপপ্রচার করে সনাতন ধর্মালম্বী রামচন্দ্রপুরের প্রবীন ব্যবসায়ী নিতাই চন্দ্র সাহা থেকে নাকি বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন মোল্লা চাঁদা নিয়েছেন। বিষয়টি সম্পূর্ণ অপপ্রচার এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিএনপির সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রের অংশ।
তিনি বলেন, আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভালো আছি এটা একটা মহল সহ্য করতে পারেনা। তাই অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে এবং সেখানে আমাদের বক্তব্য ছাড়াই আমাদের থেকে চাঁদা নিছে এমন অপপ্রচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ১৩ এপ্রিল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়ার বাবা আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মুরাদনগরের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এবং বিএনপির বিরুদ্ধে যে সংবাদ সম্মেলন করেছে সেখানে উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গের কর্মকান্ড সম্পর্কে খোঁজ নিলেই জানা যাবে এরা বরাবরই মুরাদনগরের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। বরং কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ শুধু মুরাদনগর বা কুমিল্লার নয় তিনি সারাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানবিক নেতা।শুধুমাত্র জনপ্রিয়তার অপরাধে তাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন ও শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রমুলক মামলা দিয়ে দেশান্তর করে। এমনকি তাকে ব্রিক ফিল্ডে পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য তার গাড়িতে গুলি করে।
তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয় এখনো মুরাদনগরের এ জনপ্রিয় নেতাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। নব্য ফ্যাসিবাদ ইতিমধ্যে কুমিল্লার এসপি ডিবিসহ মুরাদনগরের দুই ওসিকে দিয়ে কায়কোবাদের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আমজনতাকে হয়রানি করছে।
তিনি বলেন, পুলিশের হয়রানির প্রতিবাদে ইতিমধ্যে মুরাদনগর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে কুমিল্লার এসপি, ডিবির ওসি ও মুরাদনগর এবং বাঙ্গরা থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি করলেও তারা এখনো স্বপদে বহাল থেকে মুরাদনগরের মানুষকে হয়রানি করছে। যা জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আওয়ামী লীগের দু:শাসনের সময় গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা নাজির খান এখন কুমিল্লার পুলিশ সুপার। পুরনো চরিত্রে ফিরে এসে মুরাদনগরে ফফ্যাসিবাদী আচরণ করছে। আমরা সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন জানাই তিনি যেন কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেন। একইসঙ্গে যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে যারা দল ভারী করছে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং অবিলম্বে কুমিল্লার বর্তমান এসপি, ডিবির ওসি এবং মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসিদের প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
অতএব, আমরা সাংবাদিক সমাজকে আহ্বান জানাচ্ছি যে, মুরাদনগরের সঠিক চিত্র দেশ ও জাতির স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরবেন। প্রয়োজনে আপনারা সরাসরি মুরাদনগর গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের নেতা দুলাল দেবনাথ, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, বিপ্লব কুমার সাহা, রঞ্জন রায়, দয়ানন্দ ঠাকুর সহ বেশকিছু সনাতনী মানুষ।