চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে এখন থোকায় থোকায় লিচুর সমারোহ। প্রতিটি গাছ যেন প্রকৃতির একেকটি সবুজ ভাণ্ডার। লিচুর বাগানের দিকে তাকালে মনে হয় গাছের শাখাগুলো লিচুর ভারে মাটিতে পড়ছে। সাতকানিয়ার লিচু শুধুমাত্র স্থানীয় বাজারেই নয়, চট্টগ্রাম নগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, সাতকানিয়ার লিচুর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। মিষ্টি স্বাদ, বড় আকার এবং তাজা রাখার সক্ষমতার জন্য এখানকার লিচু আলাদাভাবে পরিচিতি পেয়েছে বলে জানান লিচু ব্যবসায়ীরা।
লিচু চাষি ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,মাদার্শা, এঁওচিয়া, সোনাকানিয়া ও পুরানগড় ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ করা হয়। এসব ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন পাহাড়ের পাশে অন্তত ৪৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয়, বাঁশখালীর কালীপুর জাত ও , চায়না-থ্রী ও বোম্বাই জাতের লিচুর চাষ হয়।
সাতকানিয়ার ছনখোলা ইউনিয়নের লিচু চাষি মো. আলমগীর বলেন,এবার গাছে এমনভাবে লিচু ধরেছে যে মনে হয় লাভবান হবো, লিচুর বাগানে তেমন কষ্ট নেই সঠিকভাবে যত্ন নিলে ফলন ভালো হয়। তবে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়, অতিবৃষ্টি কিংবা শিলাবৃষ্টি সহ যেকোনো দুর্যোগ লিচুর ফলন বিপর্যস্ত করতে পারে। এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছি। বাগানে লিচু পাকঁতে শুরু করেছে এ সপ্তাহে লিচু বাজারে তুলতে পারব।
মাদার্শা ইউনিয়নের লিচু বাগানের মালিক জানান, লিচু গাছে ফল আসার পর থেকে পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গাছে পানির ব্যবস্থা, পোকাঁমাকড় প্রতিরোধে কীটনাশক ছিটানো, এবং গাছের গোড়ায় সারের প্রয়োগ। গত দুই বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। এখন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সমস্যা হবে না, এ বছর নিয়মিত পরিচর্যার কারণে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে, বাগান থেকে লিচু বাজারে দেওয়ার সময় হয়েছে, ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী।
কেরানীহাটে লিচু বিক্রেতা শাহ আলম বলেন,লিচুর মৌসুম শুরু হতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে লিচু আনছি, ইতিমধ্যে বান্দরবান, পুরানগড় এবং বাঁশখালীর লিচু বিক্রি করেছি লিচু বাজারজাত এর পুরোপুরি সময় এটা এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লিচু আসবে। তবে মানুষের চাহিদা রয়েছে বাঁশখালীর লিচু ও রাজশাহীর লিচুর।আমরা যারা লিচুর ব্যবসা করি আমরা আগেই বাগান মালিকদের সাথে চুক্তি করে রাখি যাতে শুরু থেকেই বাজারে তুলতে পারি। আগাম যে লিচু বিক্রি করেছি সে গুলো আকারে ছোট এবং একটু টক ছিল,তবে আকারে বড় এবং সুস্বাদু লিচু আসার সময় এখনই।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, লিচু বাগান রয়েছে মাদার্শা, কাঞ্চনা, পুরানগড়, চরতী, ছদাহা এবং সোনাকানিয়ায়, এখানে তিন জাতের লিচু রয়েছে এগুলোর মধ্যে কালিপুর, চায়না ৩, বোম্বে। আবাদকৃত জমির পরিমাণ হলো কালিপুর ২৫ হেক্টর চায়না থ্রী ১০ হেক্টর এবং বোম্বে ১০ হেক্টর। আমরা নিয়মিত কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি যাতে লিচু গুটি বড় হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঝড় ও শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষা করা। সে বিষয়ে কৃষকদের সতর্ক করেছি, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারের ফলন ভালো হয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যে তারা লিচু বাজারে তুলবে।
ডিএস./