অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র গাজা সিটিতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে এগিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী ও তাদের ট্যাংক বহর। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বলপ্রয়োগ করে (‘স্যান্ডউইচ’ বানিয়ে) উপকূলের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সেনাদের এই কৌশল শহর থেকে জনগণকে উচ্ছেদ করে দক্ষিণ দিকে পাঠানোর চক্রান্তের অংশ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাদাভ শোশানি জানিয়েছেন, পদাতিক, ট্যাংক ও আর্টিলারির সহায়তায় বিমানবাহিনীও অভিযানে যোগ দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো গাজার শাসকগোষ্ঠী সশস্ত্র হামাসের ওপর চাপ বাড়ানো। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, ‘সেনারা দুই দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করছে, এতে মানুষ উপকূলীয় রাস্তা ধরে দক্ষিণে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।’
নুসেইরাত থেকে প্রতিবেদনে হানি মাহমুদ জানান, জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ধারাবাহিক হামলায় মানুষ আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে। ‘আমরা ঢেউয়ের মতো মানুষকে পালাতে দেখছি,’ বলেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, টানা ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের বোমা হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনারা রিমোট নিয়ন্ত্রিত ‘রোবট’ ব্যবহার করছে-যা বিস্ফোরক বোঝাই করে পুরো মহল্লা ধ্বংস করছে। বৃহস্পতিবার গাজা সিটিতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা সূত্র জানায়।
চলমান ধ্বংসযজ্ঞে পরিবারগুলো আবারও বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, অথচ পুরো ভূখণ্ডে নেই কোনো নিরাপদ আশ্রয়। এবার তাদের মনে ভয়-হয়তো আর কখনোই নিজ বাড়িতে ফেরা হবে না।
ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ ৪০ হাজার মানুষ (মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ) গাজার উত্তরে অবস্থান করছিল। তবে অব্যাহত হামলা ও সেবা সংকটে এই সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে।
জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজা সিটির শেষ জীবনীশক্তি ভেঙে পড়ছে। তারা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল পদ্ধতিগতভাবে ত্রাণ পৌঁছানো বন্ধ করছে-উত্তরে জিকিম ক্রসিং বন্ধ রাখা হয়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গাজার বাইরে আরও অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, রাফাহতে লড়াইয়ে ইসরায়েলের চার সেনা নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) সামাজিক মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। তাদের ভাষায়, ইসরায়েল বিমান হামলায় যোদ্ধা ও বেসামরিকদের মধ্যে পার্থক্য করার বাধ্যবাধকতাকে প্রকাশ্যে উপেক্ষা করছে।
ডিএস./