০৪:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে এবার শক্তিশালী প্রার্থী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা মো. শরীফুল আলম

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারাদেশে ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন। প্রার্থীতা ঘোষণায় কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলম। তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকার নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত ও আনন্দিত। যদিও এই আসনে তার সঙ্গে নিজ দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। মনোনয়ন পাওয়ার পর ভৈরব-কুলিয়ারচর এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জোরালো ভাবে প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনটি জেলার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সেটা তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে। ২০০৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে তার আসনে উপনির্বাচন হয়। তখন তার ছেলে নাজমুল হাসান পাপন উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ-সদস্য হন। উপনির্বাচনে পাপনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতা শরীফুল আলম। সেই থেকে তিনি তিনবার পাপনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।

এর আগে শরীফুল আলম ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও একবারও বিজয়ী হতে পারেননি। এর মধ্যে জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তিনি ২০০৮ সালে একবার এবং তার ছেলে সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে ২০০৯ ও ২০১৮ সালে দুইবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০০৯ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়নি বলে দলের নেতা-কর্মীদের দাবি। এ কারণে তিনি পরাজিত হন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার তিনি এই ভিআইপি আসনে আবারও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনে তার দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দলে কোনোরকম কোন্দলও নেই। শরীফুল আলম বিগত ২০ বছর যাবত এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। দলকে চাঙা রাখতে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি নির্যাতিত ও জুলুমের শিকার ছিলেন। গত ১৫ বছরে তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ এলাকায় মোট ৮৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। এর পরও তিনি দল ও মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মামলায় কারাগারে গেলে তাদের তদারকিসহ তাদের পাশে ছিলেন। ফলে তিনি ভৈরব-কুলিয়ারচর এলাকায় জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছেন। এবারের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ থাকবে না বলে তিনিই এই আসনে শক্তিশালী প্রার্থী। ভোটাররা তা-ই মনে করছেন। নেতাকর্মীদের ধারণা আগামী নির্বাচনে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

শরীফুল আলমের বাড়ি কুলিয়ারচর এলাকায় হলেও তিনি এখন ভৈরবকে প্রাধান্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। কারণ কুলিয়ারচর থেকে ভৈরবে ৮৫ হাজার ভোট বেশি। গত কয়েক দিন ধরে তিনি একাধিক সভা করেছেন ভৈরব-কুলিয়ারচরে। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে।

ভৈরব উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শরীফুল আলম কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা বিএনপি’র সভাপতি। বিগত ১৫ বছর তিনি মামলা হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েও দল ও মানুষের সেবা করে গেছেন। আমাদের এলাকায় দলে কোনো কোন্দল নেই। আমরা একযোগে কাজ করছি। মানুষ তাকে ভালোবাসে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নুরুল মিল্লাত বলেন, শরীফুল আলমের বাড়ি কুলিয়ারচর। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ও শরীফুল আলম আমাদের এলাকা থেকে পাপনের চেয়ে পাঁচ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। আর ভৈরবে ভোট ডাকাতি করে আ.লীগ প্রার্থী পাপন তার বাবা জিল্লুর রহমানের প্রভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তার বিজয় অবশ্যই হবে বলে আমরা আশাবাদী।

এ বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শরীফুল আলম বলেন, আমার আসনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ভিআইপি আসন। এই আসনে আমি তিনবার নির্বাচন করেছি। প্রতিটি সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু বা নিরপেক্ষ হয়নি। ভোট ডাকাতি করে পাপন তার বাবা জিল্লুর রহমানের প্রভাব ও শেখ হাসিনার আত্মীয়তার সুযোগ গ্রহণ করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। গত ২০ বছর যাবত আমি আমার নেতাকর্মীসহ জনগণের সেবা করেছি। গত ১৫ বছরে বিগত সরকার আমার বিরুদ্ধে ৮৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমি বারবার কারাবরণ করেছি, নির্যাতিত হয়েছি। এলাকাবাসী আমাকে ভালোবাসে, তাই জনগণের সেবার জন্য সংসদ-সদস্য হতে চাই। দল আমাকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে, তাই আমি আমার নেতা তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হলে আমি অবশ্যই বিজয়ী হব।

অন্যদিকে এই আসনে সাবেক ছাত্রনেতা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ভৈরব উপজেলা শাখার আমির মাওলানা মো. কবির হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতি হাজী মোহাম্মদ মুসা খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা লাইস উদ্দিন, খেলাফত মজলিস এর ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাহেল এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ এর সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন সহ এনসিপি থেকে মোজাক্কির আজাদ সাব্বির সংসদ সদস্য পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দোয়া চেয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, প্যানা ও লিফলেট বিতরণ ও সাঁটিয়ে প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেল শোডাউন, গণসংযোগ, পথ সভা ও জনসভা করে বেড়াচ্ছেন।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মো. কবির হোসাইন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে দল থেকে আমি মনোনয়ন পাব গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে এক বছর যাবত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, গত এক বছরে আমি প্রায় ৭০ হাজার লোকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছি, দোয়া চেয়েছি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন-এমনটাই তার দাবি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভৈরব পৌর শাখার সভাপতি, ভৈরব উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দল থেকে মনোনীত আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ এর ভৈরব উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মুহা. জসিম উদ্দিন ভূইয়া বলেন, গত ১৩ অক্টোবর সোমবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ভৈরব শাখার দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল শেষে দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে ভৈরব-কুলিয়ারচরে গনসংযোগের মাধ্যমে পুরোদমে মাঠে নামেন তাদের প্রিয় নেতা হাজী মোহাম্মদ মুছা খান।

যদিও এর আগে থেকেই ভৈরব-কুলিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গণসংযোগ করে বেড়াতে দেখা গেছে হাজী মোহাম্মদ মুছা খানকে। কিন্ত গত ১৩ অক্টোবর থেকে পুরোদমে নির্বাচনী এলাকায় মাঠে নেমে সকল শ্রেণির পেশার মানুষের সাথে কোশল বিনিময় ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জানান দিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজী মোহাম্মদ মুছা খান ভৈরব-কুলিয়ারচর সংসদীয় আসনের একজন এমপি প্রার্থী।

দলীয় নেতা কর্মীরা বলেন, হাজী মোহাম্মদ মুছা খান কৈশোর থেকেই শিক্ষাসহ জনকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত হন। তরুণ বয়স থেকে নানা সামাজিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হয়ে কাজ করেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেকে জড়িত রাখেন। জীবনের এই পর্যায়ে এসে প্রতিটি ধাপে চেষ্টা করেছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে, জনগণের সমস্যা-সংকটে হাত বাড়াতে, তিনি বিশ্বাস করেন জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সততার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয়। তার লক্ষ্য মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা নিয়ে দুই উপজেলাকে মডেল ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা। দুই উপজেলার সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের ভালবাসা ও সমর্থন পেলে তিনি স্বপ্নের ভৈরব-কুলিয়ারচর গড়ে তুলবেন। যেখানে ব্যবসায়ী ব্যবসা করবে নির্বিঘ্নে, চাঁদা দেওয়ার ভয় থাকবে না, বাড়ীওয়ালা বাড়ি বানাবে নিশ্চিতে, যেখানে স্থানীয় মাস্তানদের আস্ফালন থাকবে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে দলীয় প্রভাব এবং দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থায় থাকবে তার কার্যকরী আন্তরিক প্রচেষ্টা। তরুণ ও শিক্ষিত যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে থাকবে তার দক্ষতা উন্নয়ন একাডেমি, নারীদের মূল্যায়ন ও বয়ষ্ক নাগরিক এবং শিশুদের জন্যে তার থাকবে বিভিন্ন প্রকল্প এবং পরিকল্পনা।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে মোট ভোটার চার লাখ ২৪ হাজার। এর মধ্যে ভৈরব উপজেলায় ভোটার দুই লাখ ৫৫ হাজার ও কুলিয়ারচর উপজেলায় এক লাখ ৬৯ হাজার।

ডিএস./

ট্যাগ :

চট্টগ্রামে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে এবার শক্তিশালী প্রার্থী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা মো. শরীফুল আলম

প্রকাশিত : ০৪:১৭:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারাদেশে ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন। প্রার্থীতা ঘোষণায় কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলম। তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকার নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত ও আনন্দিত। যদিও এই আসনে তার সঙ্গে নিজ দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। মনোনয়ন পাওয়ার পর ভৈরব-কুলিয়ারচর এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জোরালো ভাবে প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনটি জেলার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সেটা তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে। ২০০৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে তার আসনে উপনির্বাচন হয়। তখন তার ছেলে নাজমুল হাসান পাপন উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ-সদস্য হন। উপনির্বাচনে পাপনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতা শরীফুল আলম। সেই থেকে তিনি তিনবার পাপনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।

এর আগে শরীফুল আলম ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারবার বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও একবারও বিজয়ী হতে পারেননি। এর মধ্যে জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তিনি ২০০৮ সালে একবার এবং তার ছেলে সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে ২০০৯ ও ২০১৮ সালে দুইবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০০৯ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়নি বলে দলের নেতা-কর্মীদের দাবি। এ কারণে তিনি পরাজিত হন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার তিনি এই ভিআইপি আসনে আবারও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনে তার দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। দলে কোনোরকম কোন্দলও নেই। শরীফুল আলম বিগত ২০ বছর যাবত এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। দলকে চাঙা রাখতে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি নির্যাতিত ও জুলুমের শিকার ছিলেন। গত ১৫ বছরে তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ এলাকায় মোট ৮৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। এর পরও তিনি দল ও মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মামলায় কারাগারে গেলে তাদের তদারকিসহ তাদের পাশে ছিলেন। ফলে তিনি ভৈরব-কুলিয়ারচর এলাকায় জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছেন। এবারের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ থাকবে না বলে তিনিই এই আসনে শক্তিশালী প্রার্থী। ভোটাররা তা-ই মনে করছেন। নেতাকর্মীদের ধারণা আগামী নির্বাচনে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

শরীফুল আলমের বাড়ি কুলিয়ারচর এলাকায় হলেও তিনি এখন ভৈরবকে প্রাধান্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। কারণ কুলিয়ারচর থেকে ভৈরবে ৮৫ হাজার ভোট বেশি। গত কয়েক দিন ধরে তিনি একাধিক সভা করেছেন ভৈরব-কুলিয়ারচরে। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে।

ভৈরব উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শরীফুল আলম কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা বিএনপি’র সভাপতি। বিগত ১৫ বছর তিনি মামলা হামলা নির্যাতনের শিকার হয়েও দল ও মানুষের সেবা করে গেছেন। আমাদের এলাকায় দলে কোনো কোন্দল নেই। আমরা একযোগে কাজ করছি। মানুষ তাকে ভালোবাসে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলে তার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নুরুল মিল্লাত বলেন, শরীফুল আলমের বাড়ি কুলিয়ারচর। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ও শরীফুল আলম আমাদের এলাকা থেকে পাপনের চেয়ে পাঁচ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। আর ভৈরবে ভোট ডাকাতি করে আ.লীগ প্রার্থী পাপন তার বাবা জিল্লুর রহমানের প্রভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তার বিজয় অবশ্যই হবে বলে আমরা আশাবাদী।

এ বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শরীফুল আলম বলেন, আমার আসনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ভিআইপি আসন। এই আসনে আমি তিনবার নির্বাচন করেছি। প্রতিটি সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু বা নিরপেক্ষ হয়নি। ভোট ডাকাতি করে পাপন তার বাবা জিল্লুর রহমানের প্রভাব ও শেখ হাসিনার আত্মীয়তার সুযোগ গ্রহণ করে আমার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। গত ২০ বছর যাবত আমি আমার নেতাকর্মীসহ জনগণের সেবা করেছি। গত ১৫ বছরে বিগত সরকার আমার বিরুদ্ধে ৮৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমি বারবার কারাবরণ করেছি, নির্যাতিত হয়েছি। এলাকাবাসী আমাকে ভালোবাসে, তাই জনগণের সেবার জন্য সংসদ-সদস্য হতে চাই। দল আমাকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়েছে, তাই আমি আমার নেতা তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হলে আমি অবশ্যই বিজয়ী হব।

অন্যদিকে এই আসনে সাবেক ছাত্রনেতা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ভৈরব উপজেলা শাখার আমির মাওলানা মো. কবির হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতি হাজী মোহাম্মদ মুসা খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা লাইস উদ্দিন, খেলাফত মজলিস এর ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাহেল এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ এর সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন সহ এনসিপি থেকে মোজাক্কির আজাদ সাব্বির সংসদ সদস্য পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দোয়া চেয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, প্যানা ও লিফলেট বিতরণ ও সাঁটিয়ে প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেল শোডাউন, গণসংযোগ, পথ সভা ও জনসভা করে বেড়াচ্ছেন।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মো. কবির হোসাইন বলেন, আসন্ন নির্বাচনে দল থেকে আমি মনোনয়ন পাব গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে এক বছর যাবত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, গত এক বছরে আমি প্রায় ৭০ হাজার লোকের সঙ্গে হাত মিলিয়েছি, দোয়া চেয়েছি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন-এমনটাই তার দাবি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভৈরব পৌর শাখার সভাপতি, ভৈরব উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দল থেকে মনোনীত আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ এর ভৈরব উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মুহা. জসিম উদ্দিন ভূইয়া বলেন, গত ১৩ অক্টোবর সোমবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ভৈরব শাখার দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল শেষে দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে ভৈরব-কুলিয়ারচরে গনসংযোগের মাধ্যমে পুরোদমে মাঠে নামেন তাদের প্রিয় নেতা হাজী মোহাম্মদ মুছা খান।

যদিও এর আগে থেকেই ভৈরব-কুলিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গণসংযোগ করে বেড়াতে দেখা গেছে হাজী মোহাম্মদ মুছা খানকে। কিন্ত গত ১৩ অক্টোবর থেকে পুরোদমে নির্বাচনী এলাকায় মাঠে নেমে সকল শ্রেণির পেশার মানুষের সাথে কোশল বিনিময় ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জানান দিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজী মোহাম্মদ মুছা খান ভৈরব-কুলিয়ারচর সংসদীয় আসনের একজন এমপি প্রার্থী।

দলীয় নেতা কর্মীরা বলেন, হাজী মোহাম্মদ মুছা খান কৈশোর থেকেই শিক্ষাসহ জনকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত হন। তরুণ বয়স থেকে নানা সামাজিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হয়ে কাজ করেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেকে জড়িত রাখেন। জীবনের এই পর্যায়ে এসে প্রতিটি ধাপে চেষ্টা করেছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে, জনগণের সমস্যা-সংকটে হাত বাড়াতে, তিনি বিশ্বাস করেন জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সততার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয়। তার লক্ষ্য মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা নিয়ে দুই উপজেলাকে মডেল ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা। দুই উপজেলার সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের ভালবাসা ও সমর্থন পেলে তিনি স্বপ্নের ভৈরব-কুলিয়ারচর গড়ে তুলবেন। যেখানে ব্যবসায়ী ব্যবসা করবে নির্বিঘ্নে, চাঁদা দেওয়ার ভয় থাকবে না, বাড়ীওয়ালা বাড়ি বানাবে নিশ্চিতে, যেখানে স্থানীয় মাস্তানদের আস্ফালন থাকবে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে দলীয় প্রভাব এবং দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থায় থাকবে তার কার্যকরী আন্তরিক প্রচেষ্টা। তরুণ ও শিক্ষিত যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে থাকবে তার দক্ষতা উন্নয়ন একাডেমি, নারীদের মূল্যায়ন ও বয়ষ্ক নাগরিক এবং শিশুদের জন্যে তার থাকবে বিভিন্ন প্রকল্প এবং পরিকল্পনা।

উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে মোট ভোটার চার লাখ ২৪ হাজার। এর মধ্যে ভৈরব উপজেলায় ভোটার দুই লাখ ৫৫ হাজার ও কুলিয়ারচর উপজেলায় এক লাখ ৬৯ হাজার।

ডিএস./