সারাদেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় এসে বাল্যবিবাহকে কেন থামানো যাচ্ছেনা? এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
বাল্যবিবাহ কেন হচ্ছে আর কেনইবা থামানো যাচ্ছে না এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাসউদ বিষয়টিকে নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে বেশ কিছু দিন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তিনি জনসচেনতা, ইমামদের নিয়ে বৈঠক, উঠান বৈঠক ও লাল কার্ড প্রদর্শনীসহ দেয়ালিখন ও পোস্টারিং এর মাধ্যমে অভিবাবক ও সমাজের মানুষদের সচেতন করার চেষ্টা করছেন।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্হায় এসেও বাল্যবিবাহকে রোধ করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অসচেতনতা, দরিদ্রতা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কারণে বাল্যবিবাহ সংঘটিত হচ্ছে। সমাজে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায়, অভিভাবকের কর্তৃত্বকে বেশী প্রাধান্য দেয়া হয়।
মেয়েদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে কোনো ধরনের অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা ও অপসংস্কৃতির কুপ্রভাব থেকে নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য অভিভাবকেরা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্হায় এসেও বাল্যবিবাহকে পূর্ণসমর্থন দিয়ে থাকেন বলে মনে করেন তিনি।
আব্দুল্লাহ আল মাসউদ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মনিটরিং করতে গিয়ে বাল্যবিবাহের খারাপ প্রভাব যেমন: যেকোনো মেয়ে শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং অধিক সন্তান জন্ম দেবার সময় পায় বলে জনসংখ্যাবৃদ্ধিতে বাল্যবিবাহ নিঃসন্দেহে সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলছে। এ জন্যই বাল্যবিবাহ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নিরক্ষর ও অসচেতন অভিভাবকদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন তিনি।
তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় আমি ইউএনও হওয়ার পর থেকে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে খুব সচেতন। যখন কোথাও গুঞ্জন শোনা যায় কিংবা খবর আসে বাল্যবিবাহ হচ্ছে সেখানেই ছুটে চলি। যতোটুকু বুঝতে পারি, অসচেতন অভিভাবকেরা মেয়েদের বোঝা মনে করেন। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা, অটোমেটিক ইভটিজিং থেকে বাঁচার জন্য এখনো অনেক অভিভাবক বাল্যবিবাহকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।
এমন অনেক অভিভাবক আছেন যারা মেয়ের শিক্ষার ব্যাপারে সচেতন না। তিনি বলেন, সমাজে এখনো বাল্যবিবাহের কুসংস্কৃতি টিকে আছে। অনেক অভিভাবকের ধারণা, ভালো পাত্র পেয়েছে তো মেয়ে সুখে থাকবে। বাংলাদেশে আইন থাকা সত্ত্বেও বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন সম্পর্কে সচেতন না থাকায় সামাজিক নিরাপত্তা, মেয়ে দ্রুত বড় হয়ে যাবার কারণে বিবাহ দিয়ে দায় এড়াতে চায়।
বাল্যবিবাহের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কাজীদের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এলাকার কাজীদের সাথে বসেছি, গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করছি এবং স্কুলে স্কুলে গিয়ে বাল্যবিবাহের উপর লালকার্ড প্রদর্শন করছি। তাছাড়াও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন পোস্টারিং ও সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের সচেতনতা ও অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের বিয়ে না পড়ালে সম্ভবই এসব সামাজিক ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বাল্যবিবাহ কোনোভাবেই সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের ভালো মানদন্ড হতে পারেনা। এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। অথচ সমাজে এমন অনেক অভিভাবক রয়েছে যারা সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা চিন্তা করেই শুধু মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দায় এড়াতে চায়।
বাল্যবিবাহ তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের কিছু নয় কিংবা আইন প্রয়োগেও রোধ করা সম্ভব নয়। এটা রোধ করতে হলে অবশ্যই সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। মেয়েদেরকে সবচেয়ে বেশী সচেতন হতে হবে এবং সবার মাঝে বারবার জনসচেতনতা তৈরী করতে হবে।