০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

লাঠি ঘুরিয়ে নয়, জনতার আস্থার প্রতীক হওয়ার চেষ্টা করুন: আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি’র কমিশনা আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশের উদ্দেশে বলেছেন ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু। এটা আপনাদের সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। ক্ষমতার দম্ভ নয়, লাঠি ঘুরিয়ে নয়, জনতার আস্থার প্রতীক হওয়ার চেষ্টা করুন।’

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

দীর্ঘ চার বছর সাত মাস ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি’র কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন আছাদুজ্জামান মিয়া। এ পদে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) তার শেষ কর্মদিবস। নিজের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি মনে করেন, ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গিবাদ দমন ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে আনাই ছিল তার সবচেয়ে বড় সফলতা। এবার বিদায় নিচ্ছেন তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘গত চার বছর সাত মাসে জঙ্গিবাদ দমন ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ ছিল আমার সবচেয়ে বড় সফলতা। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, নগরীকে অপরাধমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহ কর্মসূচির বাস্তবায়ন আমার আরও একটি সফলতা।’

নিজের দু’টি ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বিদায়ী কমিশনার বলেন, ‘১৬৮০ দিন কমিশনার থাকাকালীন দুই জায়গায় ব্যর্থতার আক্ষেপ রয়েছে। একটি হচ্ছে, থানাগুলোতে জনগণ যে সেবা প্রত্যাশা করেছেন, সেটা পূরণে আমরা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছি। আরেকটি হচ্ছে— যানজট। ঢাকার সড়কের সিগনাল ব্যবস্থা অন্য একটি সংস্থা দেখভাল করে। এছাড়া সড়কে পানি জমলে, তা সরাতে অন্যসংস্থার সাহায্য নিতে হয়৷ এসবের কারণে যানজট নিরসন পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সফলতা-ব্যর্থতা মিলেই ছিল আমার কর্মজীবন। জনগণের হয়রানি রোধে বিনা অপরাধে গ্রেফতার বন্ধ, থানায় জিডির ফরমেট করা ফরম ও ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। কমিশনার হিসেবে আমি শতভাগ সফল হয়েছি তা বলবো না, তবে অনেক পরিবর্তন এনেছি।’

পুলিশের পোশাকে অনেকের দুর্নীতি-অপরাধ করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটা পেশায় দুর্নীতিবাজ-অপরাধী রয়েছে। পুলিশেও এমন রয়েছে। কেউ অপরাধ করলে এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এই দায় বাহিনী নেবে না। এরপরও পুলিশের কেউ যেন অন্যায় অপরাধ না করে, তা আমি লক্ষ্য রেখেছি।’

২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কখনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনও কাজ করেনি। এগুলো কথা বিভ্রান্তিমূলক। ঢাকায় একসময় এমন পরিস্থিতি হয়েছে- কেউ যানবাহনে বোমা ছুড়েছে, কেউ আগুন দিয়েছে, কেউ ভাঙচুর চালিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময় জনগণের জানমাল রক্ষায় কাজ করেছে, জড়িতদের গ্রেফতার করেছে। এই কাজকে যদি কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাহলে এটা মিথ্যা ব্লেম দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমার শেষ কার্যদিবস। আমি আপনাদের সবাইকে অনেক মিস করবো। বিশেষ করে এই পবিত্র পোশাককে খুব মিস করবো। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমি আমার পরিবার, বন্ধু-বান্ধবসহ কাউকেই কোনও সময় দিতে পারিনি। ১০ মিনিটের জন্য কারও সঙ্গে কোনও আড্ডাও দিতে পারিনি। অবসরের পর এখন তাদের সময় দেবো। তবে অবসরে চলে গেলেও দেশের স্বার্থে সব সময় নিয়োজিত থাকবো।

বিজনেস বাংলাদেশ-বি/এইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

গাজীপুর রেড ক্রিসেন্ট নির্বাচন: বিএনপি সমর্থিত বাবুল-টুলু প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয়

লাঠি ঘুরিয়ে নয়, জনতার আস্থার প্রতীক হওয়ার চেষ্টা করুন: আছাদুজ্জামান মিয়া

প্রকাশিত : ০৭:৪৪:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০১৯

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি’র কমিশনা আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশের উদ্দেশে বলেছেন ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু। এটা আপনাদের সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। ক্ষমতার দম্ভ নয়, লাঠি ঘুরিয়ে নয়, জনতার আস্থার প্রতীক হওয়ার চেষ্টা করুন।’

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

দীর্ঘ চার বছর সাত মাস ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি’র কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেছেন আছাদুজ্জামান মিয়া। এ পদে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) তার শেষ কর্মদিবস। নিজের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়ে তিনি মনে করেন, ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গিবাদ দমন ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে আনাই ছিল তার সবচেয়ে বড় সফলতা। এবার বিদায় নিচ্ছেন তিনি।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘গত চার বছর সাত মাসে জঙ্গিবাদ দমন ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ ছিল আমার সবচেয়ে বড় সফলতা। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, নগরীকে অপরাধমুক্ত ও নিরাপদ রাখতে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহ কর্মসূচির বাস্তবায়ন আমার আরও একটি সফলতা।’

নিজের দু’টি ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে বিদায়ী কমিশনার বলেন, ‘১৬৮০ দিন কমিশনার থাকাকালীন দুই জায়গায় ব্যর্থতার আক্ষেপ রয়েছে। একটি হচ্ছে, থানাগুলোতে জনগণ যে সেবা প্রত্যাশা করেছেন, সেটা পূরণে আমরা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছি। আরেকটি হচ্ছে— যানজট। ঢাকার সড়কের সিগনাল ব্যবস্থা অন্য একটি সংস্থা দেখভাল করে। এছাড়া সড়কে পানি জমলে, তা সরাতে অন্যসংস্থার সাহায্য নিতে হয়৷ এসবের কারণে যানজট নিরসন পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সফলতা-ব্যর্থতা মিলেই ছিল আমার কর্মজীবন। জনগণের হয়রানি রোধে বিনা অপরাধে গ্রেফতার বন্ধ, থানায় জিডির ফরমেট করা ফরম ও ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। কমিশনার হিসেবে আমি শতভাগ সফল হয়েছি তা বলবো না, তবে অনেক পরিবর্তন এনেছি।’

পুলিশের পোশাকে অনেকের দুর্নীতি-অপরাধ করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটা পেশায় দুর্নীতিবাজ-অপরাধী রয়েছে। পুলিশেও এমন রয়েছে। কেউ অপরাধ করলে এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। এই দায় বাহিনী নেবে না। এরপরও পুলিশের কেউ যেন অন্যায় অপরাধ না করে, তা আমি লক্ষ্য রেখেছি।’

২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনেকে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তারা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কখনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনও কাজ করেনি। এগুলো কথা বিভ্রান্তিমূলক। ঢাকায় একসময় এমন পরিস্থিতি হয়েছে- কেউ যানবাহনে বোমা ছুড়েছে, কেউ আগুন দিয়েছে, কেউ ভাঙচুর চালিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময় জনগণের জানমাল রক্ষায় কাজ করেছে, জড়িতদের গ্রেফতার করেছে। এই কাজকে যদি কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাহলে এটা মিথ্যা ব্লেম দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমার শেষ কার্যদিবস। আমি আপনাদের সবাইকে অনেক মিস করবো। বিশেষ করে এই পবিত্র পোশাককে খুব মিস করবো। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমি আমার পরিবার, বন্ধু-বান্ধবসহ কাউকেই কোনও সময় দিতে পারিনি। ১০ মিনিটের জন্য কারও সঙ্গে কোনও আড্ডাও দিতে পারিনি। অবসরের পর এখন তাদের সময় দেবো। তবে অবসরে চলে গেলেও দেশের স্বার্থে সব সময় নিয়োজিত থাকবো।

বিজনেস বাংলাদেশ-বি/এইচ