আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে চলছে পুরোদমে প্রস্তুতি। দুই দলই আজ বুধবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের নগর নেতাকর্মীদের মধ্যে সাজসাজ রব শুরু হলেও বিএনপিতে ভর করেছে নানা শঙ্কা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইভিএম হলো কারচুপি করার যন্ত্র।
কারচুপি করার জন্যই তারা এটা ব্যবহার করতে চায়। এছাড়া দুই সিটি নির্বাচনে তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করা সরকারি দলকে জিতানোর অপকৌশলের অংশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে। বিগত নির্বাচনগুলোর মতোই সরকার এই নির্বাচন করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। গত নির্বাচনে নামমাত্র ভোট হয়েছে। আমাদের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর নিপিড়ন ও মামলা করা হয়েছে। ঘরবাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না।
এদিকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়রদ্বয় মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে আশাবাদী। যদিও প্রার্থীর ছড়াছড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একাধিক শক্ত প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের প্রায় এক বছর হয়েছে দায়িত্ব পালন করছেন। আবারও তাকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। মেয়র নিজেও আশাবাদী।
অপরদিকে গতবারের উত্তর সিটিতে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আওয়াল এবারও মনোনয়ন লাভ করতে পারেন। ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। সেবার তিনি অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দিনই ভোট বর্জন করেন। আনিসুল হকের মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।
তবে আসন্ন নির্বাচনের জন্য তখনও তাবিথের নামই এসেছে। তবে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেশি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের নাম দলে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-৬ আসনের জন্য মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দর কষাকষিতে তিনি সরে যান।
সেখানে মনোনয়ন পান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। গতবার সিটি নির্বাচনে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তাঁর অনুপস্থিতিতে তখন মাঠে মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা করেছিলেন তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এবার অবশ্য প্রার্থী হিসেবে আফরোজা আব্বাসের নামও শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়ে তেমন জটিলতা হবে না। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়নে অবিতর্কিত ও ফ্রেস ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
জানা গেছে, যেসব নেতার ভাবমূর্তির সংকট রয়েছে, তাদের ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন বা মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ক্যাসিনোসহ টেন্ডার ও চাঁদাবাজির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বর্তমান কাউন্সিলররা এবার দল থেকে কোনোভাবেই সমর্থন পাচ্ছেন না বলে জানা যায়।
ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সবগুলো ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন ইমেজের কাউন্সিলরদের একটি প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদের প্রার্থী করা। ক্যাসিনোসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেফতার হওয়া অনেকে প্রার্থী হতে চান।
এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু। গ্রেফতারের ভয়ে সিঙ্গাপুরে পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদসহ একাধিক কাউন্সিলর।
ঢাকায় ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত যুবলীগের আলোচিত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, তার অন্যতম সহযোগী এনামুল হক আরমান, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম, গেন্ডারিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু, রুপম ভূঁইয়া এবং অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধানদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বর্তমান কাউন্সিলর ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা জড়িত। তারাও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
আজ থেকে মনোনয়ন বিতরণ
আওয়ামী লীগ আজ ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ধানমন্ডিতে সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করবে। মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে। আর ২৮ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপি জানিয়েছে, নয়া পল্টন থেকে আজ ও কাল দলীয় মনোনয়নপত্র কেনা যাবে। জমা দিতে হবে ২৭ ডিসেম্বর। আর ২৮ ডিসেম্ব্বর দলের মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।
দুই সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের জন্য ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। কমিশনের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২ জানুয়ারি।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি।
বিজনেস বাংলাদেশ/এম মিজান






















