করোনার সময় পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ায় নিরুপায় হয়ে মানুষ ঢাকা ছাড়ছে, তাতে তৈরি হচ্ছে ভাড়াটিয়া সংকট। বছরের পর বছর বাড়িভাড়া বেপরোয়াভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষের আয়-ব্যয়ের প্রকট অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। অবস্থার চাপে অনেকেই বাসা ছেড়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে। এ কারণে রাজধানীর অলিগলিতে ঝুলছে অসংখ্য ‘টু লেট’। অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া পাচ্ছে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ এই সময়ে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ।
কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজের ওপরে কথা হয় শাহ আলম নামে এক মার্কেটিং কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজিমপুর বটতলার একটি বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতাম। বাসা ভাড়া ছিল ১৩ হাজার টাকা। বেতনের তুলনায় বেশি ভাড়ার বাসা হলেও চলে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনার সময় প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন অর্ধেক করা হয়েছে। তাই এই মাস থেকে কামরাঙ্গীরচর ইসলামনগর এলাকায় একটি দুই রুমের বাসায় উঠেছি।’ আজিমপুর, মধ্য বাসাবো, শহীদনগর এলাকায় নতুন বাসার সন্ধানে থাকা কয়েকজন জানান নিজেদের কষ্টের কথা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসাইন বলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় আছি। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে শূন্য হয়ে গেলাম। গলির ব্যবসায়ীদের খবর কেউ নিচ্ছে না। এই শহরে টিকে থাকার ব্যয় এত বেশি। যার বাস্তব চিত্র দেখলাম এই ভয়াবহ সময়ে।’
জানা গেছে, কম টাকায় নতুন বাসার সন্ধান করছে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জর নিমাইকাশারী এলাকার বাসিন্দা হাম্মাদ সোহাগ বলেন, ‘একটু নিরিবিলি আর কম খরচের জন্য আমি তিন বছর আগে এই এলাকায় থাকতে শুরু করি। করোনার কারণে এখন এই এলাকায় ভাড়াটিয়াদের উপস্থিতি বাড়ছে। মাত্র সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে তিন রুমের বাসা পাওয়া যায়।’ রাজধানীর আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় থাকতেন কুষ্টিয়ার ছেলে আজাদুর রহমান। একটি ছোট প্রতিষ্ঠানে চাকরির বেতন, পাশাপাশি টিউশনি করে চলে যেত। কিন্তু কয়েক মাস টিউশনি বন্ধ আর অফিসের বেতনও ঠিকঠাক না পেয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে তাঁর জীবন। রাজধানীতে টিকে থাকতে তাই জুনের শুরুতে উঠেছেন রাজধানীর মাদারটেক এলাকার একটি বাসায়। আগে যেখানে একাই বাসা ভাড়া বাবদ গুনতেন সাত হাজার টাকা, এখন দুজন মিলে একই খরচে থাকছেন।
বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর