০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায় এক যুগ : মন্দা ও করোনা থেকে উত্তরন

দিদারুল আলম মজুমদার

সুর সম্রাট ওস্তাদ ফুলঝুরি খানের পূর্ব রামপুরাস্থ প্লটটির যৌথ উন্নয়ন কল্পে আমরা ডেভেলপার হিসেবে শতকরা ৬০ ভাগ ও ভূমি দাতা হিসেবে ফুলঝুরি খানের ওয়ারিশগণ ৪০ ভাগ পাবেন হিসেবে প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিলো ২০০৮ সালের শুরুর দিকে। এই কাজের মাধ্যমেই রিয়েল এস্টেট জগতে পদার্পণ।

ওয়ারিশি সমস্যার ফলে প্রথমবারের চুক্তি বাতিল করে আবার চুক্তি করা লেগেছে বিধায় প্রকল্পটিতে কাজ শুরু করতে ও শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। ইতিমধ্যে আমাদের সাইনবোর্ড এর সমালোচনা শুরু হলো যে, কোম্পানী কাজ ধরছে না বলে।

পরে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সমাধান হলেও ঐ এলাকার জনগণকে ক্লিয়ার করার কোন পদ্ধতি ছিলো না বলে ডেভেলপার এর সুনাম কিছুটা বিনষ্টই থেকে যায়।

ইতিমধ্যে আরো প্রজেক্ট গ্রহন এর পাশাপাশি ক্লাইন্ট ও পরিচিত জনদের লেনদেন শুরু হয়। সবাই রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসায় অনেক ভালো হচ্ছে বলে জডিয়ে পডে। এই ব্যাপক সাড়া সৃষ্টির দরুন ঢাকা শহরের জমির মালিকগণের মাঝেও চাহিদার পরিবর্তন হতে থাকে। রেশিও দাবী করে থাকেন শতকরা ৫০ ভাগ এবং সাথে কিছু সাইনিং মানি। এই চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে কোন কোন এলাকায় শতকরা ৬০ ভাগ ও কাঠা প্রতি একটি ভালো অংকের সাইনিং মানি ছাড়া চুক্তি হবেনা বলেও কথা আসে।

তারপরো নতুন নতুন কোম্পানী বৃদ্ধি এবং তাদের কাজ চাই শর্তে এই চাহিদার সৃষ্টি করে ব্যবসাটা হয়ে গেলো তুলনামূলক বেঁচে থাকার মত। এদিকে সরকার তার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রেজিস্ট্রেশন, ইউটিলিজ, রাজউক খরচসহ যাবতীয় খরচ ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে। এক পর্যায়ে গ্যাসের কানেকশন বন্ধ করে দিলে দেখা যায় একটি বাডীতে ২০ টি ফ্লাট তৈরী হলেও ৬ টি ফ্লাটে গ্যাসের কানেকশন আছে,আর বাকি ১৪ টিতে কানেকশন দেয়া যাচ্ছে না। কেমন যেন এক দেশে দুই নীতি।

আবার ব্যাংক গুলো হাউজিং সেক্টরে গ্যাস নেই বলে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। এটি কেমন যেন সরকারের অবাধ্যতা।

এদিকে আমাদের সকলের কাছে পরিস্কার যে ৫ টি মৌলিক অধিকার এর মাঝে মাথা গুজানোর জন্য একটি ঠিকানা থাকলে বাকীটার জন্য প্রয়োজন অনেকটা অলস টাকার। আর প্রয়োজন হয় ব্যবসায়িক চিন্তার। কালের পরিক্রমায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা,ভূমির মালিকদের চাহিদা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট গুলোর খরচ বৃদ্ধি ও ক্লাইন্টদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার দরুন এই সেক্টরে মন্দাভাব চলছে গত অর্ধযুগ থেকেই।

এর সাথে যুক্ত হলো করোনা ভাইরাস এর মত মহামারী। ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া যারা থাকতেন তাদের রুজির সিংহ ভাগ চলে যেতো বাসা ভাড়ায়। তাই এখন অনেকেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে, যেহেতু বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, সেহেতু যার যার বাড়ীতে থাকলে কেমন হয়। এই চিন্তার শুরুতেই বাডীগুলোর সম্মুখে টু-লেট ঝুলছে অনেক। মহামারী দীর্ঘ হলে কি হবে,তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামততো সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ভালো কোন খবর কেউ দিতে পারছেন না। তবে রিযিকের মালিক আল্লাহ, যদি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখেন,তাহলে থাকা খাওয়া সহ আনুষংগিক বিষয়াদির ব্যবস্থাও তিনিই করবেন বলে এই বিশ্বাসটি আমাদের সাহস যুগাচ্ছে।

ইতিমধ্যে এই সেক্টরে দেশী-বিদেশী ক্লাইন্ট ও বিনিয়োগকারীগণ কোন রকম খেয়ে-পড়ে জীবনযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরী বলে ফ্ল্যাট প্লট ছেড়ে দেয়ার যে চিন্তা শুরু করেছেন,তাতেও উদ্ধোক্তাগণের উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মুহূর্তে আরো অপেক্ষা ছাড়া কোন ভাবেই বিক্রি করে ক্যাশ করা সম্ভবপর নয়। মহামারী শেষ হওয়ার পরও পারস্পরিক সহযোগিতা সহমর্মিতা ছাড়া এই ধকল থেকে উঠে আসতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে বলে মনে করি।

তবে আশার বানী হচ্ছে, সরকার ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রেজিষ্ট্রেশন খরচ কমিয়েছে। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে তাদের মার্জিন এক সংখ্যায় নিয়ে এসেছে। ভূমিদাতা ও ক্লাইন্টগন প্রকল্প হস্তান্তরে সময় বৃদ্ধি ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই বলে তা বুঝতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীগণও আরো বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে প্রজেক্ট উঠিয়ে টাকা বের করে আনতে হবে বলে চিন্তা করছেন।

তবে এই জগতের ব্যবসায় কৌশলী হলে খরচ কমিয়ে একটু দেরীতে হলেও পূঁজিসহ ভালো ব্যবসা বের করে আনা সম্ভব হয়। শর্ত হলো কোনভাবেই খরচ শুরু হওয়া প্রকল্প ঠেকিয়ে না রেখে দ্রুত শেষ করা এবং যেটা শুরু হয়নি সেটার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

আপাতত অফিস ছেড়ে দিয়ে প্রজেক্টে অফিসের কাজ চালিয়ে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিয়ে স্টাফ ছাঁটাইয়ের পথে না গিয়ে প্রয়োজনে আংশিক বেতন দিয়ে রাখা যায়। কারণ সবাই যার যার রিজিক নিয়েই জন্ম নিয়েছে বলে আমরা জানি। তবে আফসোসের বিষয় হলো নিজের অফিস আদালত বাড়ী গাড়ী সব ঠিক রাখার জন্য অনেকেই এই করোনাকালীন সময়ে জনবল ছাটাইতে গিয়েছেন। যা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। আবার স্টাফদেরও বুঝতে হবে যে এখন সমস্যার দরুন ।

লেখক: দিদারুল আলম মজুমদার

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, নগদ অর্থ লুট, আহত ৩

রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায় এক যুগ : মন্দা ও করোনা থেকে উত্তরন

প্রকাশিত : ০৫:১১:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০

সুর সম্রাট ওস্তাদ ফুলঝুরি খানের পূর্ব রামপুরাস্থ প্লটটির যৌথ উন্নয়ন কল্পে আমরা ডেভেলপার হিসেবে শতকরা ৬০ ভাগ ও ভূমি দাতা হিসেবে ফুলঝুরি খানের ওয়ারিশগণ ৪০ ভাগ পাবেন হিসেবে প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিলো ২০০৮ সালের শুরুর দিকে। এই কাজের মাধ্যমেই রিয়েল এস্টেট জগতে পদার্পণ।

ওয়ারিশি সমস্যার ফলে প্রথমবারের চুক্তি বাতিল করে আবার চুক্তি করা লেগেছে বিধায় প্রকল্পটিতে কাজ শুরু করতে ও শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। ইতিমধ্যে আমাদের সাইনবোর্ড এর সমালোচনা শুরু হলো যে, কোম্পানী কাজ ধরছে না বলে।

পরে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সমাধান হলেও ঐ এলাকার জনগণকে ক্লিয়ার করার কোন পদ্ধতি ছিলো না বলে ডেভেলপার এর সুনাম কিছুটা বিনষ্টই থেকে যায়।

ইতিমধ্যে আরো প্রজেক্ট গ্রহন এর পাশাপাশি ক্লাইন্ট ও পরিচিত জনদের লেনদেন শুরু হয়। সবাই রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসায় অনেক ভালো হচ্ছে বলে জডিয়ে পডে। এই ব্যাপক সাড়া সৃষ্টির দরুন ঢাকা শহরের জমির মালিকগণের মাঝেও চাহিদার পরিবর্তন হতে থাকে। রেশিও দাবী করে থাকেন শতকরা ৫০ ভাগ এবং সাথে কিছু সাইনিং মানি। এই চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে কোন কোন এলাকায় শতকরা ৬০ ভাগ ও কাঠা প্রতি একটি ভালো অংকের সাইনিং মানি ছাড়া চুক্তি হবেনা বলেও কথা আসে।

তারপরো নতুন নতুন কোম্পানী বৃদ্ধি এবং তাদের কাজ চাই শর্তে এই চাহিদার সৃষ্টি করে ব্যবসাটা হয়ে গেলো তুলনামূলক বেঁচে থাকার মত। এদিকে সরকার তার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য রেজিস্ট্রেশন, ইউটিলিজ, রাজউক খরচসহ যাবতীয় খরচ ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে। এক পর্যায়ে গ্যাসের কানেকশন বন্ধ করে দিলে দেখা যায় একটি বাডীতে ২০ টি ফ্লাট তৈরী হলেও ৬ টি ফ্লাটে গ্যাসের কানেকশন আছে,আর বাকি ১৪ টিতে কানেকশন দেয়া যাচ্ছে না। কেমন যেন এক দেশে দুই নীতি।

আবার ব্যাংক গুলো হাউজিং সেক্টরে গ্যাস নেই বলে বিনিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। এটি কেমন যেন সরকারের অবাধ্যতা।

এদিকে আমাদের সকলের কাছে পরিস্কার যে ৫ টি মৌলিক অধিকার এর মাঝে মাথা গুজানোর জন্য একটি ঠিকানা থাকলে বাকীটার জন্য প্রয়োজন অনেকটা অলস টাকার। আর প্রয়োজন হয় ব্যবসায়িক চিন্তার। কালের পরিক্রমায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা,ভূমির মালিকদের চাহিদা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট গুলোর খরচ বৃদ্ধি ও ক্লাইন্টদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার দরুন এই সেক্টরে মন্দাভাব চলছে গত অর্ধযুগ থেকেই।

এর সাথে যুক্ত হলো করোনা ভাইরাস এর মত মহামারী। ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া যারা থাকতেন তাদের রুজির সিংহ ভাগ চলে যেতো বাসা ভাড়ায়। তাই এখন অনেকেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে, যেহেতু বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ, সেহেতু যার যার বাড়ীতে থাকলে কেমন হয়। এই চিন্তার শুরুতেই বাডীগুলোর সম্মুখে টু-লেট ঝুলছে অনেক। মহামারী দীর্ঘ হলে কি হবে,তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামততো সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ভালো কোন খবর কেউ দিতে পারছেন না। তবে রিযিকের মালিক আল্লাহ, যদি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখেন,তাহলে থাকা খাওয়া সহ আনুষংগিক বিষয়াদির ব্যবস্থাও তিনিই করবেন বলে এই বিশ্বাসটি আমাদের সাহস যুগাচ্ছে।

ইতিমধ্যে এই সেক্টরে দেশী-বিদেশী ক্লাইন্ট ও বিনিয়োগকারীগণ কোন রকম খেয়ে-পড়ে জীবনযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরী বলে ফ্ল্যাট প্লট ছেড়ে দেয়ার যে চিন্তা শুরু করেছেন,তাতেও উদ্ধোক্তাগণের উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মুহূর্তে আরো অপেক্ষা ছাড়া কোন ভাবেই বিক্রি করে ক্যাশ করা সম্ভবপর নয়। মহামারী শেষ হওয়ার পরও পারস্পরিক সহযোগিতা সহমর্মিতা ছাড়া এই ধকল থেকে উঠে আসতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে বলে মনে করি।

তবে আশার বানী হচ্ছে, সরকার ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রেজিষ্ট্রেশন খরচ কমিয়েছে। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে তাদের মার্জিন এক সংখ্যায় নিয়ে এসেছে। ভূমিদাতা ও ক্লাইন্টগন প্রকল্প হস্তান্তরে সময় বৃদ্ধি ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই বলে তা বুঝতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীগণও আরো বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে প্রজেক্ট উঠিয়ে টাকা বের করে আনতে হবে বলে চিন্তা করছেন।

তবে এই জগতের ব্যবসায় কৌশলী হলে খরচ কমিয়ে একটু দেরীতে হলেও পূঁজিসহ ভালো ব্যবসা বের করে আনা সম্ভব হয়। শর্ত হলো কোনভাবেই খরচ শুরু হওয়া প্রকল্প ঠেকিয়ে না রেখে দ্রুত শেষ করা এবং যেটা শুরু হয়নি সেটার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

আপাতত অফিস ছেড়ে দিয়ে প্রজেক্টে অফিসের কাজ চালিয়ে ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিয়ে স্টাফ ছাঁটাইয়ের পথে না গিয়ে প্রয়োজনে আংশিক বেতন দিয়ে রাখা যায়। কারণ সবাই যার যার রিজিক নিয়েই জন্ম নিয়েছে বলে আমরা জানি। তবে আফসোসের বিষয় হলো নিজের অফিস আদালত বাড়ী গাড়ী সব ঠিক রাখার জন্য অনেকেই এই করোনাকালীন সময়ে জনবল ছাটাইতে গিয়েছেন। যা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। আবার স্টাফদেরও বুঝতে হবে যে এখন সমস্যার দরুন ।

লেখক: দিদারুল আলম মজুমদার

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ