ম্যাজিক বাউলিয়ানা খ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বি। ‘আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো’- এই গান দিয়ে শ্রোতামহলে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। এর পরের কথা সবার জানা, রাব্বি একের পর এক ভক্তদের উপহার দিচ্ছেন নতুন নতুন গান। সম্পতি রাব্বি এসেছিলেন আজকের বিজনেস বাংলাদেশ কার্যালয়ে। ক্যারিয়ারের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাবুল হৃদয়।
ব্যাপক ভাইরাল হওয়া ‘আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো’ নিশ্চয় আপনার সিগনেচার গান। এই গানটি নিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। একাধিক গীতিকার দাবি করেছিলেন, শেষমেষ কি হল?
ঠিকই বলেছেন, ‘আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো’ আমার সিগনেচার গানই বলবো। এই গানের মাধ্যেমে আমি পরিচিতি পেয়েছি। আজ যতোটুকু আমাকে চেনে এই গানটির কারণেই চেনে। তবে এই গানটির কারণে নানা প্রশ্নের সম্মুখীনও হয়েছি। গানটি সিলেটের একটি চা বাগানে গাওয়ার পর ইউটিউবে আপলোড করার পর ব্যাপক ভাইরাল হয়। আমি জেনেছি গানটির গীতিকার মাহবুব শাহ। কিন্তু গানটি ভাইরাল হওয়ার পর টিটু পাগল, বা্উল আজাদসহ বেশ কয়েকজন গানটির গীতিকার দাবি করেন। টিটু পাগলের অভিযোগ, গানটি তাঁর কাছ থেকে শুনে মাহবুব শাহ নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন।
আপনি কীভাবে গানটি পেয়েছেন?
একজন বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমি বিক্রমপুর গিয়েছিলাম, মাহবুব শাহর বাসায়। সেখানে রাতে অনেক গান শুনেছি। এই গানটি আমার ভালো লাগে। গানটি গাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করি। তখন মাহবুব শাহ বলেছেন, গানটির গীতিকার ও সুরকার তিনি। গানটি গাওয়ার জন্য তিনি আমাকে অনুমতি দেন। আমি কিন্তু কোথাও কখনো বলিনি, মাহবুব শাহ আমার জন্য গানটি লিখেছেন। কিংবা আমার সামনে বসে গানটি তিনি রচনা করেছেন। আমি শুধু গানটি গেয়েছি। গানটি ভাইরাল হয়েছে, সবাই শুনেছেন। অন্য শিল্পীরাও গাইছেন। এটা আমার অপরাধ? অনেকেই আমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। আমি বলতে বলতে ক্লান্ত। শেষমেষ গানটি টিটু পাগলের নামে ইউটিউবে আছে। সে কপিরাইট আইনে পেয়েছে।
আপনার উল্লেখযোগ্য অন্য গানের কথা বলেন-
আমার উল্লেখ করার মতো সখি, না ফেরার দেশে, একখান পান চাইলাম, কমলার বাপ, তুমি আমায় লইয়া খেলছো খেলা, আমি বামুন হইয়া চাঁদের পানে ইত্যাদি।
আমার একটি গানচ্চিত্র রয়েছে। যার শিরোনাম ‘একদিন আমি পড়বো ধরা’। সম্প্রতি সিক্স সিজনস মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে গানটি মিউজিক ভিডিওসহ ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে। এ গানের কথা লিখেছেন মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। সুর করেছেন সাদাত হোসেন। সঙ্গীতায়োজন করেছেন পিবি রুদ্র।
চিরন্তন সত্য নিয়ে গানের কথাগুলো সাজানো। সুর-সঙ্গীতও হয়েছে একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এপর্যন্ত অনেকে দেখেছে, বাহবাও দিচ্ছে।
এরপর আছে ‘আমি তো মানুষ ভালো’। মুক্ত এন্টারটেইনমেন্ট নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গানটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘তোমার যত মিথ্যা আশা অন্য কাউরে দিও না/ আমি তো মানুষ ভালো, সবাই এতো ভালো না/’- এমন কথায় সাজানো গানটি লিখেছেন মোঃ শিমুল। সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ এইচ তুর্য। গানের ভিডিওতে অংশ নিয়েছি আমি নিজেই।
আপনার সব গানই ফোক, ফোকগানেই কেন?
আমার নেশা ছিল ফোকগান খুঁজে বেড়ানো। ফোক গানেই আমাকে টানে। রাজশাহীর নিজামুল ইসলাম খান আমার গানের শিক্ষক , তিনি প্রথম আমার গান শুনেই বলেছেন তোর গলায় ফোক মানায়। আমারও মনে হয়েছে তাই। সেই থেকে ফোকের প্রতি আস্থা জন্মেছে। ফোক নিয়েই আছি।
আপনিতো দোতরাও বাজান?
দোতরা বেশিদিন শেখা হয়নি। দোতরা বাজানো মাত্র দুই মাস শিখেছি। টিভিতে আমার দোতরা বাজানো দেখে আমার ওস্তাদ আব্দুল জলিল খুব গর্ব করলেও আমার মনে হয়েছে আরও শেখার বাকী আছে।
করোনায় কেমন কাটছে, নতুন কাজ নিয়ে বলেন?
করোনায় মাঝে কাজ নাই বললেই চলে। বিচ্ছিন্ন ভা্বে কিছু টুকটাক কাজ করা হয়েছে। যেমন- মনপাখি, আদরী শিরোনামে মিউজিক্যাল ফিল্ম প্রকাশ হতে যাচ্ছে। সেখানে আমার সঙ্গে অভিনয় করেছেন আমার স্ত্রীও।
আপনার জন্ম, শৈশব ও পড়া-শুনা নিয়ে বলেন-
আমার জন্ম পাবনা সদরে আমার নানা বাড়িতে। তবে বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে আমার দাদা বাড়ি। আমি গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করে জিপিএ-৫ পেয়েছি। পরে ঢাকায় এসে তেজগাঁও কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারিনি। পরে সরকারি বাংলা কলেজে ভর্তি হই। সেটাও বাদ দিয়ে পরে ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা)তে সঙ্গীতে অনার্স নিয়ে পড়ছি। একটি সেমিস্টার বাকী আছে।
ঢাকায় এলেন কত সালে?
২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর আমি প্রথম ঢাকায় আসি।
‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা ২০১৬’-র প্রতিযোগী ছিলেন আপনি-
হ্যা। ২০১৬’-র ম্যাজিক বাউলিয়ানা প্রতিযোগী ছিলাম। সে বছর টপ-৫ হয়েছিলাম। দর্শকদের ভালোবাসার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা নগদ পেয়েছিলাম।
এর পরের গল্প বলেন-
এর পরের গল্প এইতো ম্যাজিক বাউলিয়ানার পর থেকে সবাই টুকটাক চিনতে শুরু করলো। ২০১৭ সালের ফোক ফেস্টে কোরাস গান গাওয়ারও সুযোগ হল। খুব খুশি হয়েছিলাম। এতো বড় মঞ্চে এতো গুণীদের কাতারে আমি গেয়েছি। ২০১৯ সালের ফোক ফেস্টে তো মিরাক্কেল কান্ড ঘটে গেল। আমি একাই স্টেজে ৫টি গান পার্ফরমেন্স করেছি। এটা আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি। এজন্য আয়োজকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আগামীর ভাবনা কি?
শিল্পকে আমি ধারণ করি। আমার অস্তিত্বে শুধুই সঙ্গীত। ইচ্ছে আছে সঙ্গীতের শিক্ষক হওয়ার।
গান শিখেছেন কার কাছে?
আমার গান শেখা প্রকৃতির কাছ থেকে। বাবা আবুল কালামের থেকে প্রথম তালিম, তারপর রাজশাহিতে নিজামুল ইসলাম খান, পরে ঢাকায় এসে ড, শেখর মন্ডলের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিয়েছি এর পাশাপাশি ছায়ানট এবং ইউডাতে সঙ্গীত নিয়ে পড়ছি ।
শুনেছি বিয়েও করেছেন?
এইতো চারমাস হল বিয়ে করেছি। বলতে পারেন প্রেমের বিয়ে। দীর্ঘ চার বছর প্রেম করে গত ৫ আগস্ট পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রীর নাম রেবেকা সুলতানা পলক।
ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। নৃত্যশিল্পী ও মঞ্চ অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন। শ্বশুরবাড়ি ঠাকুরগাঁও।
গানের পাশাপাশি নাটকে অভিনয়ে দেখা গেছে আপনাকে-
আমি গানের পাশাপাশি দুটি নাটকে অভিনয় করেছি। অপূর্ব আমীনের রচনা ও পরিচালনায় অস্থির মুড়ি ভর্তা’ নামে একটি নাটকে অভিনয় করেছি, সেখানে ছ্যাকা পাগলা চরিত্রে অভিনয় করেছি। এমন ভালো চরিত্রটি আমার সঙ্গে মানিয়েছে। এমন ভালো চরিত্র পেলে গানের পাশাপাশি অভিনয়েও সময় দিতে চাই। নাটক ছাড়াও একটি চলচ্চিত্রে আমি অভিনয় করেছি, নাম ‘সাঁতাও’। এই চলচ্চিত্রে দুটি গান গাওয়ার পাশাপাশি অন্ধ বাউল চরিত্রে অভিনয়ও করেছি ।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ