১০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলো

  • ড. আতিউর রহমান
  • প্রকাশিত : ১২:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 27

১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি। আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিস্ফোরণের এই দিনেই শহীদ হন মতিউর, রুস্তমসহ চারজন। সেদিন ছিল অর্ধদিবস হরতাল। এ দিনটির তুলনা চলতে পারে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিংবা ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সঙ্গে। ভাষা আন্দোলন যেমন আমাদের প্রথম জাগ্রত জাতীয় চেতনা, ৭ মার্চের ভাষণকে যেমন ধরা হয় মুক্তিযুদ্ধের কৌশলী ঘোষণা, তেমনি গণঅভ্যুত্থানকেই ধরা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার। এ আন্দোলনের ফলেই দীর্ঘ ১০ বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত হয়। গণরোষের প্রেক্ষাপটে আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব রাজবন্দি জেলখানা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি পান। মুক্তির পর পরই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। তাকে সংগ্রামী জনগণের পক্ষ থেকে এ উপাধিতে ভূষিত করেন ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমেদ। ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক স্মৃতিচারণামূলক একটি গ্রন্থ রচনা করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে। কীভাবে এই আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হলো তা বুঝতে হলে জানতে হবে ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ সম্পর্কে। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘ছয় দফা দাবি’ পেশ করেন। ছয় দফাও মূলত বাঙালির এক মুক্তির সনদ। ছয় দফাকে ঘিরে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন একটি ব্যাপক গণ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। তখন শেখ মুজিব জেলে। ছয় দফা দাবিকে জনপ্রিয় করার সংগ্রামে সক্রিয় শেখ মুজিবকে ১৯৬৬ সালের ৮ মে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তাকে জেলখানা থেকে মুক্তি দিয়ে জেলগেটেই আবার গ্রেপ্তার করা হয়- ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং’ মামলায়। যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে খ্যাত। তার সঙ্গে আরো ৩৪ জনকে আসামি করে সরকার পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে সরকারি প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয় যে, ‘গত মাসে (অর্থাৎ ডিসেম্বর, ১৯৬৭) পূর্ব পাকিস্তানে উদঘাটিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ (তোফায়েল আহমেদ, ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’, অনুলিখন : আবু আল সাঈদ, আগামী প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, পৃষ্ঠা-১৭) ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আরো বেগবান করে তুলেছিল। ফলে জনগণের রাজনৈতিক আন্দোলন দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পেরেছিল। কেননা এই কর্মসূচিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার দাবি করা হয়েছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবসহ অন্যদের প্রহসনমূলক বিচার শুরু হওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ১১ দফার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছয় দফাকে ১১ দফার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দশজন সদস্য, ডাকসুর সহসভাপতি ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক নাজিম কামরান চৌধুরী (এনএসএফ একাংশের নেতা), ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রউফ এবং সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমদ মানিক এবং সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল্লাহ, এনএসএফ (দোলন) অংশের মাহবুবুল হক দোলন ও ইব্রাহিম খলিল দাবিনামায় স্বাক্ষর করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন ডাকসুর সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ।’ (মোনায়েম সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবিুর রহমান জীবন ও রাজনীতি, প্রথম খন্ড, বাংলা একাডেমি, প্রথম প্রকাশ-২০০৮, পৃষ্ঠা-৩৫৩-৩৫৪)। এরমধ্যে ৮ জানুয়ারি আট দফার ভিত্তিতে আটটি বিরোধী দল, যথা- পিডিএমপন্থি আওয়ামী লীগ, এনডিএফ, জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, মোজাফ্ফর (ন্যাপ), ওলামায়ে ইসলাম এবং আওয়ামী লীগ মিলে গঠন করে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)। ১১ দফার প্রতি সমর্থন আদায়ের প্রস্তাব নিয়ে তোফায়েল আহমেদ ও অন্যান্য ছাত্রনেতা মওলানা ভাসানীর কাছে যান ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি। সব শুনে মওলানা ভাসানী কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে থেকে বলেন, পরে মতামত দেবেন। ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনায় তাদের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির জনসভা। ওখানে গিয়ে একটা কিছু বলবেন। তার আগেই অবশ্য মওলানা ভাসানী তার সমর্থনের কথা জানান এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ‘মওলানা ভাসানী ১২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্দোলনের ডাক দেন। ডাক ১৭ জানুয়ারি দাবি দিবস পালনের আহ্বান জানালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও প্রদেশব্যাপী বিক্ষোভ, মিছিল, সভা-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। দাবি দিবস হিসেবে ঘোষিত ১৭ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ করা যায়। আইয়ুব সরকারও ১৭ জানুয়ারির কর্মসূচি প্রতিহত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং ১৪৪ ধারা জারি করার মাধ্যমে বিরোধী দলকে প্রতিহত করার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে।’ (মোনায়েম সরকার, প্রাগুক্ত, ৩৫৪)। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ বাহিনী ক্ষিপ্র গতিতে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে। ছাত্ররাও যতটা সম্ভব প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ফলে শুরু হলো কাঁদানে গ্যাস ফায়ারিং। ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রউফ আহত হন। ছাত্ররা অবশেষে ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৮ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ‘১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সমবেত হয়। সভা শেষে ছাত্ররা মিছিল করে রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। পুলিশ, ইপিআর ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের গুলিতে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজের ছাত্র, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এএম আসাদুজ্জামান (২৫) নিহত হন। ওইদিন পুলিশের গুলিতে একজন সাংবাদিকসহ ৪ জন নিহত হন। আসাদুজ্জামানের মৃত্যু ছাত্র আন্দোলনকে আপসহীন গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত করে।’ (সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাস্কর প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০১, পৃষ্ঠা-২৩৬) তোফায়েল আহমেদ সেদিনের কথা স্মরণ করে বলেন, “পল্টনে পৌঁছলাম আমরা। সেখানেও হাজার হাজার মানুষ আমাদের অপেক্ষায়। পল্টনে ঠাঁই নেই। লোকে লোকারণ্য। আসাদের জানাজা হলো ওখানে। সবকিছুই ছিল অনির্ধারিত। মাইক ছিল না। কিন্তু সবাই চায় সংগ্রামের কর্মসূচি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর ২১ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল ঘোষণা করলাম। হরতালের পর পল্টনে সমাবেশ। হরতালের সময় সংক্ষিপ্ত কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটল। হরতালের পর পল্টনে বিশাল সমাবেশ। আরো বেশি মানুষ চারদিক থেকে চলে এসেছে। মাইক ছিল না, মঞ্চও নয়। পল্টনের চারাগাছের ইটের বেষ্টনীর ওপর দাঁড়িয়ে আমাকে বক্তব্য রাখতে হলো। ওখানেই কর্মসূচি দিলাম ২২ জানুয়ারি কালোব্যাজ ধারণ এবং সর্বত্র কালো পতাকা উত্তোলন। ২৩ জানুয়ারি মশাল মিছিল এবং ২৪ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল। ২২ জানুয়ারি (১৯৬৯) আমি এমন কোনো বাঙালি দেখিনি যার বুকে কালোব্যাজ নেই। ঘরে অফিসে গাড়িতে সর্বত্রই কালো পতাকা উড়ছে। সেদিনের কালো পতাকা ছিল শোকের, ঘাতকদের প্রতি ঘৃণার এবং সংগ্রামের দৃঢ়প্রত্যয়ের। ২৩ জানুয়ারি শহরের সব অলিগলি থেকে মশাল মিছিল একটির পর একটি। সমগ্র ঢাকা শহরটি হয়ে উঠেছিল মশালের শহর। ২৪ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল পালিত হলো। সর্বাত্মক হরতাল। আমাদেরও যেন অভিজ্ঞতা বাড়ছিল। আগে কখনই বুঝতে পারিনি সাধারণ গোবেচারা অচেনা অজানা মানুষগুলো বঙ্গবন্ধুকে এত ভালোবাসে- এত গভীর সম্পর্ক তার সঙ্গে। সবারই একই প্রশ্ন- বঙ্গবন্ধু কবে মুক্তি পাবে! কবে আগরতলা মামলা উঠিয়ে নেওয়া হবে। যদি সরকার না মানে তা হলে? এমন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে যেন আমরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারি। এখনই আমাদের এমন সংগ্রাম শুরু করা উচিত যেন আইয়ুবের পতন ঘটে, আইয়ুব-মোনেমের পতন না হলে বঙ্গবন্ধু ছাড়া পাবে না। এ ধরনের আলোচনাই ছিল ঢাকা শহরের আলোচনা।” (তোফায়েল আহমেদ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২১-২২)
২৪ জানুয়ারির মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেন মতিউর, রুস্তমসহ চারজন। মতিউরের বয়স তখন মাত্র ১৫-১৬ বছর। স্কুলছাত্র। তার পকেটে এক টুকরো কাগজ পাওয়া যায়। কাগজে লেখা- ‘মাগো, মিছিলে যাচ্ছি। যদি ফিরে না আসি মা, মনে করো তোমার ছেলে বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য, শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে।’ মুহূর্তের মধ্যে মতিউরের কথা ছড়িয়ে পড়ল সারা ঢাকায়, সারা বাংলায়। লাখ লাখ মানুষ নেমে এলো রাজপথে। এমনকি বস্তিগুলো থেকে পর্যন্ত খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিক নারী-পুরুষরা দা-বঁটি নিয়ে নেমে এলো রাস্তায়। কোথায় গেল কারফিউ! গণ-অভ্যুত্থান ঘটে গেল। তার পর লাগাতার বিক্ষোভ। একটা দিনের বিরাম নেই। সারা বাংলায় আগুন জ্বলছে। ১৯৬৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে জনসভা হলো। তোফায়েল আহমেদ সেদিন বক্তৃতায় বললেন, ‘আজ এই বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আমরা শপথ নিচ্ছি আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে যতদিনে কারাগার থেকে মুক্ত না করতে পারব ততদিনে আমাদের সংগ্রাম থামবে না। এক মুহূর্তের জন্যও আমরা বিশ্রাম নেব না।’ (তোফায়েল আহমেদ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২৩)। এই ব্যাপক গণজাগরণের পেছনে নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে শ্রমজীবী মানুষসহ পূর্ববাংলার সব শ্রেণির মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এই আন্দোলনের চরিত্রে সামাজিক বিপ্লবের নানা চিহ্ন স্পষ্টতর হয়ে উঠেছিল। তবে সেই আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছিলেন আজীবন দুঃখী মানুষের সমব্যথী গণমানুষের আশা-ভরসার প্রতীক শেখ মুজিব। তাই তখন দাবি উঠেছিল ‘জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব।’ তদ্দিনে তিনি বাঙালির সব চাওয়া-পাওয়ার মুখপাত্রে পরিণত হয়ে গেছেন। (চলবে)

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলো

প্রকাশিত : ১২:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি। আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিস্ফোরণের এই দিনেই শহীদ হন মতিউর, রুস্তমসহ চারজন। সেদিন ছিল অর্ধদিবস হরতাল। এ দিনটির তুলনা চলতে পারে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিংবা ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সঙ্গে। ভাষা আন্দোলন যেমন আমাদের প্রথম জাগ্রত জাতীয় চেতনা, ৭ মার্চের ভাষণকে যেমন ধরা হয় মুক্তিযুদ্ধের কৌশলী ঘোষণা, তেমনি গণঅভ্যুত্থানকেই ধরা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার। এ আন্দোলনের ফলেই দীর্ঘ ১০ বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত হয়। গণরোষের প্রেক্ষাপটে আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব রাজবন্দি জেলখানা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি পান। মুক্তির পর পরই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। তাকে সংগ্রামী জনগণের পক্ষ থেকে এ উপাধিতে ভূষিত করেন ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমেদ। ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক স্মৃতিচারণামূলক একটি গ্রন্থ রচনা করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে। কীভাবে এই আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হলো তা বুঝতে হলে জানতে হবে ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ সম্পর্কে। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘ছয় দফা দাবি’ পেশ করেন। ছয় দফাও মূলত বাঙালির এক মুক্তির সনদ। ছয় দফাকে ঘিরে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন একটি ব্যাপক গণ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। তখন শেখ মুজিব জেলে। ছয় দফা দাবিকে জনপ্রিয় করার সংগ্রামে সক্রিয় শেখ মুজিবকে ১৯৬৬ সালের ৮ মে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তাকে জেলখানা থেকে মুক্তি দিয়ে জেলগেটেই আবার গ্রেপ্তার করা হয়- ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং’ মামলায়। যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে খ্যাত। তার সঙ্গে আরো ৩৪ জনকে আসামি করে সরকার পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে সরকারি প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয় যে, ‘গত মাসে (অর্থাৎ ডিসেম্বর, ১৯৬৭) পূর্ব পাকিস্তানে উদঘাটিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ (তোফায়েল আহমেদ, ‘ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু’, অনুলিখন : আবু আল সাঈদ, আগামী প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, পৃষ্ঠা-১৭) ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আরো বেগবান করে তুলেছিল। ফলে জনগণের রাজনৈতিক আন্দোলন দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পেরেছিল। কেননা এই কর্মসূচিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার দাবি করা হয়েছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবসহ অন্যদের প্রহসনমূলক বিচার শুরু হওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ১১ দফার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছয় দফাকে ১১ দফার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দশজন সদস্য, ডাকসুর সহসভাপতি ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক নাজিম কামরান চৌধুরী (এনএসএফ একাংশের নেতা), ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রউফ এবং সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমদ মানিক এবং সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দোহা, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল্লাহ, এনএসএফ (দোলন) অংশের মাহবুবুল হক দোলন ও ইব্রাহিম খলিল দাবিনামায় স্বাক্ষর করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন ডাকসুর সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ।’ (মোনায়েম সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবিুর রহমান জীবন ও রাজনীতি, প্রথম খন্ড, বাংলা একাডেমি, প্রথম প্রকাশ-২০০৮, পৃষ্ঠা-৩৫৩-৩৫৪)। এরমধ্যে ৮ জানুয়ারি আট দফার ভিত্তিতে আটটি বিরোধী দল, যথা- পিডিএমপন্থি আওয়ামী লীগ, এনডিএফ, জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, মোজাফ্ফর (ন্যাপ), ওলামায়ে ইসলাম এবং আওয়ামী লীগ মিলে গঠন করে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি (ডাক)। ১১ দফার প্রতি সমর্থন আদায়ের প্রস্তাব নিয়ে তোফায়েল আহমেদ ও অন্যান্য ছাত্রনেতা মওলানা ভাসানীর কাছে যান ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি। সব শুনে মওলানা ভাসানী কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে থেকে বলেন, পরে মতামত দেবেন। ৮ ফেব্রুয়ারি খুলনায় তাদের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির জনসভা। ওখানে গিয়ে একটা কিছু বলবেন। তার আগেই অবশ্য মওলানা ভাসানী তার সমর্থনের কথা জানান এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ‘মওলানা ভাসানী ১২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্দোলনের ডাক দেন। ডাক ১৭ জানুয়ারি দাবি দিবস পালনের আহ্বান জানালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও প্রদেশব্যাপী বিক্ষোভ, মিছিল, সভা-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। দাবি দিবস হিসেবে ঘোষিত ১৭ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ করা যায়। আইয়ুব সরকারও ১৭ জানুয়ারির কর্মসূচি প্রতিহত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং ১৪৪ ধারা জারি করার মাধ্যমে বিরোধী দলকে প্রতিহত করার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে।’ (মোনায়েম সরকার, প্রাগুক্ত, ৩৫৪)। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মুহূর্তের মধ্যে পুলিশ বাহিনী ক্ষিপ্র গতিতে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে। ছাত্ররাও যতটা সম্ভব প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ফলে শুরু হলো কাঁদানে গ্যাস ফায়ারিং। ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রউফ আহত হন। ছাত্ররা অবশেষে ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৮ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ‘১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সমবেত হয়। সভা শেষে ছাত্ররা মিছিল করে রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। পুলিশ, ইপিআর ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের গুলিতে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজের ছাত্র, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এএম আসাদুজ্জামান (২৫) নিহত হন। ওইদিন পুলিশের গুলিতে একজন সাংবাদিকসহ ৪ জন নিহত হন। আসাদুজ্জামানের মৃত্যু ছাত্র আন্দোলনকে আপসহীন গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত করে।’ (সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাস্কর প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০১, পৃষ্ঠা-২৩৬) তোফায়েল আহমেদ সেদিনের কথা স্মরণ করে বলেন, “পল্টনে পৌঁছলাম আমরা। সেখানেও হাজার হাজার মানুষ আমাদের অপেক্ষায়। পল্টনে ঠাঁই নেই। লোকে লোকারণ্য। আসাদের জানাজা হলো ওখানে। সবকিছুই ছিল অনির্ধারিত। মাইক ছিল না। কিন্তু সবাই চায় সংগ্রামের কর্মসূচি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর ২১ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল ঘোষণা করলাম। হরতালের পর পল্টনে সমাবেশ। হরতালের সময় সংক্ষিপ্ত কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটল। হরতালের পর পল্টনে বিশাল সমাবেশ। আরো বেশি মানুষ চারদিক থেকে চলে এসেছে। মাইক ছিল না, মঞ্চও নয়। পল্টনের চারাগাছের ইটের বেষ্টনীর ওপর দাঁড়িয়ে আমাকে বক্তব্য রাখতে হলো। ওখানেই কর্মসূচি দিলাম ২২ জানুয়ারি কালোব্যাজ ধারণ এবং সর্বত্র কালো পতাকা উত্তোলন। ২৩ জানুয়ারি মশাল মিছিল এবং ২৪ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল। ২২ জানুয়ারি (১৯৬৯) আমি এমন কোনো বাঙালি দেখিনি যার বুকে কালোব্যাজ নেই। ঘরে অফিসে গাড়িতে সর্বত্রই কালো পতাকা উড়ছে। সেদিনের কালো পতাকা ছিল শোকের, ঘাতকদের প্রতি ঘৃণার এবং সংগ্রামের দৃঢ়প্রত্যয়ের। ২৩ জানুয়ারি শহরের সব অলিগলি থেকে মশাল মিছিল একটির পর একটি। সমগ্র ঢাকা শহরটি হয়ে উঠেছিল মশালের শহর। ২৪ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল পালিত হলো। সর্বাত্মক হরতাল। আমাদেরও যেন অভিজ্ঞতা বাড়ছিল। আগে কখনই বুঝতে পারিনি সাধারণ গোবেচারা অচেনা অজানা মানুষগুলো বঙ্গবন্ধুকে এত ভালোবাসে- এত গভীর সম্পর্ক তার সঙ্গে। সবারই একই প্রশ্ন- বঙ্গবন্ধু কবে মুক্তি পাবে! কবে আগরতলা মামলা উঠিয়ে নেওয়া হবে। যদি সরকার না মানে তা হলে? এমন সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে যেন আমরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারি। এখনই আমাদের এমন সংগ্রাম শুরু করা উচিত যেন আইয়ুবের পতন ঘটে, আইয়ুব-মোনেমের পতন না হলে বঙ্গবন্ধু ছাড়া পাবে না। এ ধরনের আলোচনাই ছিল ঢাকা শহরের আলোচনা।” (তোফায়েল আহমেদ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২১-২২)
২৪ জানুয়ারির মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হলেন মতিউর, রুস্তমসহ চারজন। মতিউরের বয়স তখন মাত্র ১৫-১৬ বছর। স্কুলছাত্র। তার পকেটে এক টুকরো কাগজ পাওয়া যায়। কাগজে লেখা- ‘মাগো, মিছিলে যাচ্ছি। যদি ফিরে না আসি মা, মনে করো তোমার ছেলে বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য, শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে।’ মুহূর্তের মধ্যে মতিউরের কথা ছড়িয়ে পড়ল সারা ঢাকায়, সারা বাংলায়। লাখ লাখ মানুষ নেমে এলো রাজপথে। এমনকি বস্তিগুলো থেকে পর্যন্ত খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমিক নারী-পুরুষরা দা-বঁটি নিয়ে নেমে এলো রাস্তায়। কোথায় গেল কারফিউ! গণ-অভ্যুত্থান ঘটে গেল। তার পর লাগাতার বিক্ষোভ। একটা দিনের বিরাম নেই। সারা বাংলায় আগুন জ্বলছে। ১৯৬৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে জনসভা হলো। তোফায়েল আহমেদ সেদিন বক্তৃতায় বললেন, ‘আজ এই বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আমরা শপথ নিচ্ছি আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে যতদিনে কারাগার থেকে মুক্ত না করতে পারব ততদিনে আমাদের সংগ্রাম থামবে না। এক মুহূর্তের জন্যও আমরা বিশ্রাম নেব না।’ (তোফায়েল আহমেদ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২৩)। এই ব্যাপক গণজাগরণের পেছনে নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে শ্রমজীবী মানুষসহ পূর্ববাংলার সব শ্রেণির মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এই আন্দোলনের চরিত্রে সামাজিক বিপ্লবের নানা চিহ্ন স্পষ্টতর হয়ে উঠেছিল। তবে সেই আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছিলেন আজীবন দুঃখী মানুষের সমব্যথী গণমানুষের আশা-ভরসার প্রতীক শেখ মুজিব। তাই তখন দাবি উঠেছিল ‘জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব।’ তদ্দিনে তিনি বাঙালির সব চাওয়া-পাওয়ার মুখপাত্রে পরিণত হয়ে গেছেন। (চলবে)