১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

কেএসআরএম এর বিরুদ্ধে সীতাকুন্ডে কুমিরায় মানববন্ধন

চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ পরীর রাস্তা সড়কটি খুঁড়ে চলাচলের অনুপযোগী করে দিয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। এতে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে ওই রাস্তায় চলাচলকারী হাজারো বাসিন্দা। বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করে ২২ ও ২৩ জুন দুই দিনব্যাপী মানববন্ধন করেছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।সরজমিনে দেখা যায়, কুমিরা রয়েল গেটের সামনের রাস্তা দিয়ে কর্ণফুলী গ্যাসের লাইন থেকে একটি লাইন আলেকদিয়া শিশু বিদ্যানিকেতন রাস্তার মাঝখানে খুঁড়ে কেএসআরএমের একাধিক কারখানায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কেএসআরএমের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে কয়েকবার সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধনও করেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা খুঁড়ে গ্যাস সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সংবদ্ধ অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে। এতে নতুন রাস্তাটির অবস্থা খুবই বেহাল, যে কোন মুহূর্তে রাস্তাটি ডেবে যাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ।স্থানীয়রা জানান, প্রশস্ত আরসিসিঢাালাইকৃত ওই রাস্তা খুড়ে এ সংযোগ নিচ্ছে কারখানায়। পশ্চিমে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কটির মধ্যখান দিয়ে খুঁড়ে চলাচলের অনুপযোগী করে দিয়েছে কেএসআরএম। ওই প্রতিষ্ঠানটি মহাসড়কের পূর্ব পাশে তাদের কারখানায় গ্যাস সংযোগ নেয়ার জন্য এ হাল করেছে সড়কের। এতে ছোট্ট সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এমনকি সড়কটি এভাবে খুঁড়ে ফেলে রেখেছে দীর্ঘদিন। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী।

এক সময় বাধার মুখে পরিস্থিতি সামাল দিতে কেএসআরএম কতৃপক্ষ সড়কে আকস্মিক ট্রাকে করে স্টিল মিলের স্টিল বর্জ্য (রাবিশ) ছিটিয়ে দেয়। এতে জনগণের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। কেনোনা লোহার এসব বর্জ্যে মানুষের পা কেটে যায়। জুতা পায়ে হাঁটতেও সমস্যা হয় পথচারীদের।

স্থানীয় যুবক ফরহাদ, মাহবুব ও জোনাব আলী বলেন, রাস্তা খুঁড়ার আগে মেরামত করে দেয়ার আশ্বাস দেয় কেএসআরএম কতৃপক্ষ। কিন্তু নিজেদের প্রয়োজন পুরিয়ে গেলে জনগণকে দেওয়া আশ্বাসের কথা তাঁরা ভুলে যান।
এ বিষয়ে সীতাকু- উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে সময় করে কথা বলব। এলজিআরডিকে যদি টাকা দিয়ে থাকে তাহলে রাস্তা নতুন ভাবে তৈরি হবে।’

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, রাস্তাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের। ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে কেএসআরএম পাইপলাইন নেওয়ার অনুমতি নিয়েছে। এ জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে। করোনার কারণে কাজ করতে পারছে না।’ যদিও শর্ত ছিলো ভিন্ন।

সীতাকুন্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, ‘রাস্তা খুঁড়ে কেএসআরএম গ্যাসের লাইন নেয়ায় চলাচলে এলাকাবাসীর সমস্যা হচ্ছিল। সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারাই কাজ করবে। তিনি বলেন, কাজ যেহেতু কেএসআরএমের জন্য করা হয়েছে ; তাই তাদের এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজটি করিয়ে নিতে তাগাদা দিতে বলেছি।’

সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। কেএসআরএম কতৃপক্ষ এলজিআরডিকে রাস্তাটির ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তবে কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। সে বিষয়ে জানাতে পারেননি ইউএনও।

এ বিষয়ে জানতে কেএসআরএমের জিএম মোঃ কবির ও মিডিয়া এ্যাডভাইজার মোঃ রিয়াদ এর মুঠোফোনে গত দুদিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তথ্য পাওয়া যায়, গত বছরের জুলাই মাসে গ্যাস সংযোগ কাজের জন্য রাস্তা কাটার অনুমতি প্রদানে ১৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৫’শত টাকা সরকারি খাতে জমা করে কেএসআরএম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিঃ। বিষয়টি চিঠি দিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ’কে জানিয়ে দেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (চট্টগ্রাম)।

কিন্তু শর্ত ছিলো যে, রাস্তা খননকালে প্রতিনিয়ত সীতাকুন্ড এলজিইডির সাথে আলোচনা করে কাজ আরম্ভ করবে। খননকৃত কাঁচা/ পাকা সড়ক বিদ্যমান ডিজাইন মোতাবেক তাৎক্ষনিকভাবে মেরামত করে সড়কটির পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন। যেন যান চলাচলের উপযোগি থাকে। যতদুর সম্ভব সড়কের পাঁচ ফুট বাহিরে দিয়ে ম্যাচ অনুযায়ি এবং সড়কের কার্পেটিং হতে পাঁচ ফুট নীচু দিয়ে গ্যাস লাইন স্থাপন করবেন। প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক সাইন সিগন্যাল স্থাপন করবেন। কিন্তু বর্তমানে কেএসআরএম কতৃপক্ষ কোন শর্তই মানছেন না। মাসের পর মাস রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের পথ চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও চলাচলের সড়ক বন্ধ করা নিয়ে সীতাকুন্ডে বাড়বকুন্ডে এলাকাবাসীর সাথে কেএসআরএমের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে মানববন্ধন হয়। ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা সংবাদ সম্মেলনও করে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

কেএসআরএম এর বিরুদ্ধে সীতাকুন্ডে কুমিরায় মানববন্ধন

প্রকাশিত : ১২:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুন ২০২১

চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ পরীর রাস্তা সড়কটি খুঁড়ে চলাচলের অনুপযোগী করে দিয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। এতে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে ওই রাস্তায় চলাচলকারী হাজারো বাসিন্দা। বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করে ২২ ও ২৩ জুন দুই দিনব্যাপী মানববন্ধন করেছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।সরজমিনে দেখা যায়, কুমিরা রয়েল গেটের সামনের রাস্তা দিয়ে কর্ণফুলী গ্যাসের লাইন থেকে একটি লাইন আলেকদিয়া শিশু বিদ্যানিকেতন রাস্তার মাঝখানে খুঁড়ে কেএসআরএমের একাধিক কারখানায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কেএসআরএমের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে কয়েকবার সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধনও করেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা খুঁড়ে গ্যাস সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সংবদ্ধ অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে। এতে নতুন রাস্তাটির অবস্থা খুবই বেহাল, যে কোন মুহূর্তে রাস্তাটি ডেবে যাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ।স্থানীয়রা জানান, প্রশস্ত আরসিসিঢাালাইকৃত ওই রাস্তা খুড়ে এ সংযোগ নিচ্ছে কারখানায়। পশ্চিমে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কটির মধ্যখান দিয়ে খুঁড়ে চলাচলের অনুপযোগী করে দিয়েছে কেএসআরএম। ওই প্রতিষ্ঠানটি মহাসড়কের পূর্ব পাশে তাদের কারখানায় গ্যাস সংযোগ নেয়ার জন্য এ হাল করেছে সড়কের। এতে ছোট্ট সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এমনকি সড়কটি এভাবে খুঁড়ে ফেলে রেখেছে দীর্ঘদিন। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী।

এক সময় বাধার মুখে পরিস্থিতি সামাল দিতে কেএসআরএম কতৃপক্ষ সড়কে আকস্মিক ট্রাকে করে স্টিল মিলের স্টিল বর্জ্য (রাবিশ) ছিটিয়ে দেয়। এতে জনগণের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। কেনোনা লোহার এসব বর্জ্যে মানুষের পা কেটে যায়। জুতা পায়ে হাঁটতেও সমস্যা হয় পথচারীদের।

স্থানীয় যুবক ফরহাদ, মাহবুব ও জোনাব আলী বলেন, রাস্তা খুঁড়ার আগে মেরামত করে দেয়ার আশ্বাস দেয় কেএসআরএম কতৃপক্ষ। কিন্তু নিজেদের প্রয়োজন পুরিয়ে গেলে জনগণকে দেওয়া আশ্বাসের কথা তাঁরা ভুলে যান।
এ বিষয়ে সীতাকু- উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে সময় করে কথা বলব। এলজিআরডিকে যদি টাকা দিয়ে থাকে তাহলে রাস্তা নতুন ভাবে তৈরি হবে।’

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, রাস্তাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের। ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে কেএসআরএম পাইপলাইন নেওয়ার অনুমতি নিয়েছে। এ জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে। করোনার কারণে কাজ করতে পারছে না।’ যদিও শর্ত ছিলো ভিন্ন।

সীতাকুন্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, ‘রাস্তা খুঁড়ে কেএসআরএম গ্যাসের লাইন নেয়ায় চলাচলে এলাকাবাসীর সমস্যা হচ্ছিল। সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারাই কাজ করবে। তিনি বলেন, কাজ যেহেতু কেএসআরএমের জন্য করা হয়েছে ; তাই তাদের এলজিইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজটি করিয়ে নিতে তাগাদা দিতে বলেছি।’

সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। কেএসআরএম কতৃপক্ষ এলজিআরডিকে রাস্তাটির ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তবে কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। সে বিষয়ে জানাতে পারেননি ইউএনও।

এ বিষয়ে জানতে কেএসআরএমের জিএম মোঃ কবির ও মিডিয়া এ্যাডভাইজার মোঃ রিয়াদ এর মুঠোফোনে গত দুদিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তথ্য পাওয়া যায়, গত বছরের জুলাই মাসে গ্যাস সংযোগ কাজের জন্য রাস্তা কাটার অনুমতি প্রদানে ১৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৫’শত টাকা সরকারি খাতে জমা করে কেএসআরএম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিঃ। বিষয়টি চিঠি দিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ’কে জানিয়ে দেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (চট্টগ্রাম)।

কিন্তু শর্ত ছিলো যে, রাস্তা খননকালে প্রতিনিয়ত সীতাকুন্ড এলজিইডির সাথে আলোচনা করে কাজ আরম্ভ করবে। খননকৃত কাঁচা/ পাকা সড়ক বিদ্যমান ডিজাইন মোতাবেক তাৎক্ষনিকভাবে মেরামত করে সড়কটির পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিবেন। যেন যান চলাচলের উপযোগি থাকে। যতদুর সম্ভব সড়কের পাঁচ ফুট বাহিরে দিয়ে ম্যাচ অনুযায়ি এবং সড়কের কার্পেটিং হতে পাঁচ ফুট নীচু দিয়ে গ্যাস লাইন স্থাপন করবেন। প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক সাইন সিগন্যাল স্থাপন করবেন। কিন্তু বর্তমানে কেএসআরএম কতৃপক্ষ কোন শর্তই মানছেন না। মাসের পর মাস রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রেখেছেন। ফলে সাধারণ মানুষের পথ চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও চলাচলের সড়ক বন্ধ করা নিয়ে সীতাকুন্ডে বাড়বকুন্ডে এলাকাবাসীর সাথে কেএসআরএমের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে মানববন্ধন হয়। ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা সংবাদ সম্মেলনও করে।