০১:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে বাইডেনের রাজনৈতিক লক্ষ্য

‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’, অর্থাৎ নীতিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে। অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারিতা ও বর্ণবৈষম্যমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিন শেষ। রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্বাবলি’ উদঘাটিত হচ্ছে। কারণ গণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হয়েছে। এ কথাগুলো বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত বিদ্রোহীদের দ্বারা আক্রান্ত ক্যাপিটলে (সংসদ) শপথ গ্রহণ করার পরপরই জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমাদের হাতে সময় নেই। অতি দ্রুত করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে।’ সে লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই তিনি ২৫টি প্রশাসনিক অধ্যাদেশসহ বিভিন্ন নির্দেশ জারি করেছেন। ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেওয়ার আগেই জো বাইডেন করোনা মোকাবেলায় ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ তুলে ধরেছেন। তাতে বর্ধিত হারে বেকার ভাতা নির্ধারণ থেকে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। করোনায় এরই মধ্যে চার লাখ ৬১ হাজার মার্কিন নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। ধসে গেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদনশীল খাত। তাতে লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। তাদের সামনে এই মুহূর্তে কোনো আশার আলো নেই। করোনা বিধ্বস্ত এবং কর্মসংস্থানহীন এ ধরনের অগণিত মানুষের সামনে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন তুলে ধরার জন্যই প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিনের জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। বাইডেনের বিভিন্ন জরুরি কর্মসূচি নিয়েই এখন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক ও বিরোধী রিপাবলিকান দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা চলছে।
বাইডেন প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন করোনা টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী। এর পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে অনেক আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা। আগামী মার্চের মাঝামাঝি শেষ হয়ে যাবে সপ্তাহে ৩০০ ডলার বেকার ভাতার মেয়াদ। আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাইডেন প্রশাসন বর্ধিত ভাতা প্রদানের পাশাপাশি সাধারণ শ্রমিকদের ঘণ্টাপ্রতি ১৫ ডলার মজুরি নির্ধারণ করেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক ও শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নয়া প্রশাসন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে আবার ‘প্যারিস জলবায়ু’ চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। সে কারণে পরিবেশের দ্রুত উন্নতির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি অর্থাৎ সূর্যরশ্মিনির্ভর প্রাকৃতিক জ্বালানি উৎপাদনের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হতে পারলে ২০৩৫ সাল নাগাদ কার্বনমুক্ত জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বাইডেন এরই মধ্যে একটি প্রশাসনিক অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেছেন। করোনা মোকাবেলায় টিকার বাইরেও প্রশাসনিক ভবনে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা ছাড়া বাইডেন আশা প্রকাশ করেছেন যে তাঁর প্রশাসনের ১০০ দিনের মধ্যেই তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কুলের দরজা খুলে দেবেন। করোনা মুক্তির পাশাপাশি ক্রমে ক্রমে সব শিক্ষা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। মুক্ত হবে জল, স্থল ও আকাশপথ। করোনার মতো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেক অভিশাপ হচ্ছে বর্ণবৈষম্য। বর্তমানে বর্ণবিদ্বেষ কিংবা সাম্প্রদায়িক বিভেদের জন্য বিশ্বের এই ‘এক নম্বর পরাশক্তির দেশটি’ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতে, এই বিভেদ দূর করে সাম্প্রদায়িক সাম্য সৃষ্টি করতে হবে। দূর করতে হবে সব বর্ণবৈষম্য ও অনাচার এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমান নাগরিক অধিকার। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর প্রথাগত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে একটি কথা বারবার বলে যাচ্ছেন। আর তা হলোÑগণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হয়েছে। গত নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে অগণতান্ত্রিক, বর্ণবাদী ও স্বৈরাচারী শক্তি। সে কারণে জো বাইডেনের প্রশাসনে অশ্বেতাঙ্গদেরও যোগ্যতা অনুযায়ী স্থান দেওয়া হচ্ছে নির্বিবাদে। অশ্বেতাঙ্গদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। কৃষ্ণাঙ্গ, হিসপানিক, লাতিনো কিংবা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিগত ট্রাম্প প্রশাসনের সময় যে সমস্ত অগণতান্ত্রিক কিংবা বর্ণ, ধর্ম ও জাতি বিদ্বেষমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার দ্রুত প্রতিকার করা হচ্ছে এখন। ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ’-এর ধ্যান-ধারণা পরিহার করে মার্কিন সমাজে সমতা ও সহনশীলতার বীজ বপন করা হচ্ছে আবার নতুন উদ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী একটি গণতান্ত্রিক, পরমতসহিষ্ণু এবং সব দিক থেকে সহনশীল ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন সমাজ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে এখন। কিন্তু তাতে যে চরম দক্ষিণপন্থী কিংবা শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী উগ্রপন্থার মানুষের চক্রান্ত থেমে গিয়েছে, তা নয়। ৬ জানুয়ারি বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব কিংবা আশকারায় যে অপশক্তি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির সংসদ ভবন (ক্যাপিটল) আক্রমণ করেছিল, তারা আপাতদৃষ্টিতে নীরব হলেও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েনি। বর্তমানে ফ্লোরিডায় বসবাসরত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে উগ্রপন্থীদের সব কর্মকাণ্ড। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড এবং সর্বোপরি বর্ণবাদী উসকানির কারণে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্যাপিটলের অভ্যন্তরে সংঘটিত দাঙ্গায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। ট্রাম্পের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতিনিধি পরিষদে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সে প্রক্রিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো একটি অভিশংসন প্রস্তাব উচ্চতর সিনেটে পাঠানো হয়েছে। এখন তা নিয়ে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই শুনানি আরম্ভ হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক ও বিরোধী রিপাবলিকান দল নিয়েই বর্তমান কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও উচ্চতর সিনেটে বর্তমানে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা সমানে সমান অর্থাৎ উভয়ের রয়েছে ৫০ জন করে নির্বাচিত সদস্য। সিনেটের সভাপতি হচ্ছেন পদাধিকার বলে নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। প্রয়োজনে তিনি তাঁর ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। তাতে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১-এ। কিন্তু ট্রাম্পের অভিশংসনের জন্য সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হবে। দ্বিদলীয় সমঝোতার ওপর নির্ভর করে চলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের রাজনীতি।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়, এমপি মকবুল হোসেনের দুই ছেলের নামে মামলা

বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে বাইডেনের রাজনৈতিক লক্ষ্য

প্রকাশিত : ১২:০০:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’, অর্থাৎ নীতিগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে। অগণতান্ত্রিক, স্বেচ্ছাচারিতা ও বর্ণবৈষম্যমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিন শেষ। রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্বাবলি’ উদঘাটিত হচ্ছে। কারণ গণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হয়েছে। এ কথাগুলো বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত বিদ্রোহীদের দ্বারা আক্রান্ত ক্যাপিটলে (সংসদ) শপথ গ্রহণ করার পরপরই জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমাদের হাতে সময় নেই। অতি দ্রুত করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে।’ সে লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই তিনি ২৫টি প্রশাসনিক অধ্যাদেশসহ বিভিন্ন নির্দেশ জারি করেছেন। ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেওয়ার আগেই জো বাইডেন করোনা মোকাবেলায় ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ তুলে ধরেছেন। তাতে বর্ধিত হারে বেকার ভাতা নির্ধারণ থেকে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। করোনায় এরই মধ্যে চার লাখ ৬১ হাজার মার্কিন নাগরিক মৃত্যুবরণ করেছে। ধসে গেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদনশীল খাত। তাতে লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। তাদের সামনে এই মুহূর্তে কোনো আশার আলো নেই। করোনা বিধ্বস্ত এবং কর্মসংস্থানহীন এ ধরনের অগণিত মানুষের সামনে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন তুলে ধরার জন্যই প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিনের জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। বাইডেনের বিভিন্ন জরুরি কর্মসূচি নিয়েই এখন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক ও বিরোধী রিপাবলিকান দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা চলছে।
বাইডেন প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন করোনা টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী। এর পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে অনেক আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা। আগামী মার্চের মাঝামাঝি শেষ হয়ে যাবে সপ্তাহে ৩০০ ডলার বেকার ভাতার মেয়াদ। আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাইডেন প্রশাসন বর্ধিত ভাতা প্রদানের পাশাপাশি সাধারণ শ্রমিকদের ঘণ্টাপ্রতি ১৫ ডলার মজুরি নির্ধারণ করেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক ও শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নয়া প্রশাসন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে আবার ‘প্যারিস জলবায়ু’ চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। সে কারণে পরিবেশের দ্রুত উন্নতির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি অর্থাৎ সূর্যরশ্মিনির্ভর প্রাকৃতিক জ্বালানি উৎপাদনের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হতে পারলে ২০৩৫ সাল নাগাদ কার্বনমুক্ত জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে বাইডেন এরই মধ্যে একটি প্রশাসনিক অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেছেন। করোনা মোকাবেলায় টিকার বাইরেও প্রশাসনিক ভবনে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা ছাড়া বাইডেন আশা প্রকাশ করেছেন যে তাঁর প্রশাসনের ১০০ দিনের মধ্যেই তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কুলের দরজা খুলে দেবেন। করোনা মুক্তির পাশাপাশি ক্রমে ক্রমে সব শিক্ষা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে। মুক্ত হবে জল, স্থল ও আকাশপথ। করোনার মতো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেক অভিশাপ হচ্ছে বর্ণবৈষম্য। বর্তমানে বর্ণবিদ্বেষ কিংবা সাম্প্রদায়িক বিভেদের জন্য বিশ্বের এই ‘এক নম্বর পরাশক্তির দেশটি’ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতে, এই বিভেদ দূর করে সাম্প্রদায়িক সাম্য সৃষ্টি করতে হবে। দূর করতে হবে সব বর্ণবৈষম্য ও অনাচার এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমান নাগরিক অধিকার। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর প্রথাগত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে একটি কথা বারবার বলে যাচ্ছেন। আর তা হলোÑগণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হয়েছে। গত নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে অগণতান্ত্রিক, বর্ণবাদী ও স্বৈরাচারী শক্তি। সে কারণে জো বাইডেনের প্রশাসনে অশ্বেতাঙ্গদেরও যোগ্যতা অনুযায়ী স্থান দেওয়া হচ্ছে নির্বিবাদে। অশ্বেতাঙ্গদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে। কৃষ্ণাঙ্গ, হিসপানিক, লাতিনো কিংবা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বিগত ট্রাম্প প্রশাসনের সময় যে সমস্ত অগণতান্ত্রিক কিংবা বর্ণ, ধর্ম ও জাতি বিদ্বেষমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার দ্রুত প্রতিকার করা হচ্ছে এখন। ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ’-এর ধ্যান-ধারণা পরিহার করে মার্কিন সমাজে সমতা ও সহনশীলতার বীজ বপন করা হচ্ছে আবার নতুন উদ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী একটি গণতান্ত্রিক, পরমতসহিষ্ণু এবং সব দিক থেকে সহনশীল ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন সমাজ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে এখন। কিন্তু তাতে যে চরম দক্ষিণপন্থী কিংবা শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ববাদে বিশ্বাসী উগ্রপন্থার মানুষের চক্রান্ত থেমে গিয়েছে, তা নয়। ৬ জানুয়ারি বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব কিংবা আশকারায় যে অপশক্তি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির সংসদ ভবন (ক্যাপিটল) আক্রমণ করেছিল, তারা আপাতদৃষ্টিতে নীরব হলেও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েনি। বর্তমানে ফ্লোরিডায় বসবাসরত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে উগ্রপন্থীদের সব কর্মকাণ্ড। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড এবং সর্বোপরি বর্ণবাদী উসকানির কারণে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্যাপিটলের অভ্যন্তরে সংঘটিত দাঙ্গায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। ট্রাম্পের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রতিনিধি পরিষদে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সে প্রক্রিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো একটি অভিশংসন প্রস্তাব উচ্চতর সিনেটে পাঠানো হয়েছে। এখন তা নিয়ে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই শুনানি আরম্ভ হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক ও বিরোধী রিপাবলিকান দল নিয়েই বর্তমান কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ) ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও উচ্চতর সিনেটে বর্তমানে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা সমানে সমান অর্থাৎ উভয়ের রয়েছে ৫০ জন করে নির্বাচিত সদস্য। সিনেটের সভাপতি হচ্ছেন পদাধিকার বলে নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। প্রয়োজনে তিনি তাঁর ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন। তাতে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১-এ। কিন্তু ট্রাম্পের অভিশংসনের জন্য সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হবে। দ্বিদলীয় সমঝোতার ওপর নির্ভর করে চলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের রাজনীতি।