০২:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সচেতন ও সতর্ক থাকা অতিজরুরি

১৯৯৬ সালে আরব বিশ্বের প্রথম ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা আল জাজিরা একদা বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতিতে অপরাধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, বর্তমানে পুনরায় উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী কাতারভিত্তিক এই টিভি চ্যানেল এখন বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত। এটি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার ও আল কায়েদা সম্পর্কিত খবর প্রচারের মাধ্যমে।
২০১৩ সাল থেকে তালেবান, আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুড ও আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্বের কাছে খবর পৌঁছানোর মাধ্যম হয়ে ওঠে এটি। ইতোমধ্যে কাতার থেকে জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার তথ্যপ্রমাণও প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বমিডিয়ায়। এই টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতার ভিডিও-চিত্র প্রচারিত হয়ে থাকে হরহামেশায়। আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় এমনটি সম্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কারণ ঘটনা ঘটতে পারে এ সংবাদ তাদের সংবাদকর্মীরা আগে থেকে পেয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ইতিহাসে অপসাংবাদিকতার নাম আল জাজিরা। এমনকি মিশরে বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে সংবাদ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল এই টিভির সাংবাদিকদের। ফলে একাধিক সাংবাদিক চাকরি ছেড়ে দেন। এই চ্যানেলটির বিরুদ্ধে মিশর ও অন্য আরব দেশগুলো নিয়ে গোপন তৎপরতার কথাও জানা গেছে।
এজন্যই আফগানিস্তানে আল কায়েদা পরিচালিত অপারেশন, আত্মঘাতী হামলা, ২০০৭ সালের ৭ জুলাই-এ লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা হামলা প্রভৃতি ঘটনা একমাত্র আল জাজিরায় প্রচারিত হয়েছিল। এই চ্যানেলটি উগ্রবাদী মতাদর্শে পরিচালিত ও সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের মুখপত্র। যুক্তরাষ্ট্র আল-জাজিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে এভাবে, এই মিডিয়া নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, ধর্মীয় উস্কানি ও হলুদ সাংবাদিকতার পরিপোষক।
২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের নানা ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার করে চলেছে আল জাজিরা। তাদের সংবাদ পরিবেশনায় বর্তমান সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক খবর সবসময় স্থান জুড়ে বসেছে। তবে বিশ্বব্যাপী অনেক আগে থেকে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে এই চ্যানেলটি পক্ষপাতমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত। উস্কানিমূলক ও বিতর্কিত সংবাদ পরিবেশনের জন্য ২০১৭ সালের মে মাসের শেষ দিকে আল জাজিরার ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিশর এবং বাহরাইন।
২০১৯ সালে তিনজন ব্যক্তির গুম হওয়ার সাথে বাংলাদেশের একজন উর্দ্ধতন নিরাপত্তা ও সামরিক কর্মকর্তার যোগসাজশ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই ওয়েবসাইটটি। আসলে এই মিডিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দানের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আপত্তিকর সংবাদ পরিবেশনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা। ফলে দেশে দেশে নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, বিভ্রান্তিতে পড়েছে জনগণ।
মনে রাখা দরকার, একসময় প্রতিবেদনের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে দেশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পতিত হবে বলেও তথ্য উপস্থাপন করে আল জাজিরা। সেসময় বিশ্বের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রহসন হিসেবে উপস্থাপন করেছিল এবং একাত্তরের কুখ্যাত ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ইসলামী চিন্তাবিদ সাজিয়ে তাদের ভাবমূর্তি তৈরির একটি চেষ্টা দেখা গিয়েছিল।
২০১১ সালের ১০ আগস্টে এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘ওঃ রং ঃযব ভরৎংঃ ঃরসব রহ ঃযব পড়ঁহঃৎু’ং যরংঃড়ৎু ঃযধঃ বারফবহপব ড়ভ ধিৎ পৎরসবং রিষষ নব নৎড়ঁমযঃ নবভড়ৎব ধ লঁফমব, নঁঃ ঃযবৎব ধৎব ধপপঁংধঃরড়হং ঃযধঃ ঃযব মড়াবৎহসবহঃ রং ঁংরহম ঃযব ঃৎরধষং ঃড় ৎড়ঁহফ ঁঢ় ঃযব ড়ঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ’.২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ‘দি পলিটিকালাইজেশন অব বাংলাদেশস ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তালহা আহমেদ নামের একজন প্রতিবেদক বাংলাদেশের চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করেন। আল জাজিরা টেলিভিশন তথা মিডিয়ার সম্পর্ক এদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচারণ করে এসেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টিতে এ দলটি অপরাধী। আল জাজিরার আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে জামায়াতের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়। বিশেষ করে ‘বাংলাদেশ পলিটিশিয়ান অ্যাকিউজড অফ ওয়্যার ক্রাইম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রতিবেদক যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের পক্ষে সাফাই গেয়েছিল। ২০১৪ সালে আমরা দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধারাবাহিক নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করেছিল কাতারি রাজ পরিবারের মালিকানাধীন এই টেলিভিশন চ্যানেলটি। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত যে কোনো সংবাদ উপস্থাপনের ধরন দেখে মনে হয়েছিল তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
সেই অপপ্রচারের মাত্রা এখন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে ডাল-পালায় বিস্তার লাভ করেছে। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরও আল জাজিরার ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপন করা হয় একটি অনুষ্ঠানে যেখানে টবি ক্যাডম্যান এবং ডেভিড বার্গম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে দর্শকশ্রোতার মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
এমনকি যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক সম্প্রচারে ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলা হয় ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। আল-জাজিরাকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিল। এখনও এখানকার অপরাধীদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে এই চ্যানেলটি। আল জাজিরা জঙ্গিবাদকে উস্কে দিয়েছে এবং ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীদের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে সকল শুভপ্রয়াসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল আল জাজিরা। কেবল এই ইস্যু নয় আরো অনেক বিষয়ে তাদের নাক গলাতে দেখা গেছে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে সাভারের একটি ইটভাটা থেকে শিশু ও নারীসহ শেকলবন্দী ৩০ জনকে উদ্ধার করে র‌্যাব। সে সময় দেশ-বিদেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছিলো ওই ঘটনা। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুই মাস পর পুনরায় ভিডিও চিত্রসহ ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে আল জাজিরা। আল জাজিরার ওয়েবসাইটের এশিয়া বিভাগের “হোয়াট’স হট” অংশে গুরুত্বের সঙ্গে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারির ওই ঘটনাটির ভিডিওচিত্র প্রচার করা হয় ‘পুলিশ রেইড বাংলাদেশ স্লেভ ক্যাম্প’ শিরোনামে। শ্রমিকদের নির্যাতনের যে চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছিল তা ছিল অতিরঞ্জিত। মূলত শেখ হাসিনা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের একমাত্র কাজে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার হীন প্রয়াস এখনো চলছে। এর আগেও একাধিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম বেড়েছে বলে প্রচার করা হয় যা ছিল ভিত্তিহীন। ‘র‌্যাব’ও তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিল। টিভি চ্যানেলটি বিএনপি-জামায়াতের পক্ষাবলম্বী হওয়ায় বাংলাদেশের এলিটফোর্সকে নিয়ে তারা একাধিক প্রতিবেদন প্রচার করে। ‘ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেনসেস সার্জ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনের লেখক ছিলেন ডেভিড বার্গম্যান। এই লেখকও বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ইতিহাসে অপসাংবাদিকতার নাম আল জাজিরা। এমনকি মিশরে বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে সংবাদ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল এই টিভির সাংবাদিকদের। ফলে একাধিক সাংবাদিক চাকরি ছেড়ে দেন। এই চ্যানেলটির বিরুদ্ধে মিশর ও অন্য আরব দেশগুলো নিয়ে গোপন তৎপরতার কথাও জানা গেছে একাধিক সূত্রে। ২০১৪ সালে দোহায় আল জাজিরার সম্পাদকীয় বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন চার সদস্য। মিশর নিয়ে আল-জাজিরার ‘পক্ষপাতমূলক সম্পাদকীয় নীতি’কে নিজেদের পদত্যাগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তারা।
পশ্চিমা বিশ্বেও এই টেলিভিশন চ্যানেলটিকে দেখা হয় সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের পরোক্ষ কিংবা কখনো প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে এর জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে। বলা হয়ে থাকে, এর রয়েছে টেররিস্ট নেটওয়ার্ক। আল জাজিরার বিরুদ্ধে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচারের কারণে ২০১০ সালে আল জাজিরা টেলিভিশনের কুয়েত শাখার কার্যালয় বন্ধ করে দেয় সেখানকার সরকার। এর আগেও একবার ২০০২ সালের নভেম্বরে আল জাজিরা কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল কুয়েত সরকার। দীর্ঘ আড়াই বছর পর ২০০৫ সালের মে মাসে কার্যালয়টি পুনরায় চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে আল-জাজিরার একাধিক সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেয় মিশরের আদালত। অভিযুক্ত সকলেই জঙ্গি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে দোষী ছিল। ২০১৫ সালে ‘মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর’ অভিযোগে আল জাজিরার তিনজন সাংবাদিককে দোষী সাব্যস্ত করে মিশর। ২০০২ সালে আল জাজিরায় সৌদিদের ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি পরিকল্পনার কভারেজ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কাতার থেকে রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয় সৌদি আরব। ২০০৮ সালে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠানো হয়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ এবং অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ মিশরে ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন। একই অভিযোগ এনে এবং জাজিরাকে অপপ্রচারের মেশিন হিসেবে অভিহিত করে পদত্যাগ করেন লিবিয়া প্রতিনিধি আলী হাশেম, বার্লিন প্রতিনিধি আখতাম সুলেমান।
ধর্মীয় উস্কানি, জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী ধারণা প্রচার, জঙ্গিদের দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যা দেয়া, বোমা হামলা ও আত্মঘাতী হামলাকে জান্নাতের সফর বলে উল্লেখ করাসহ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিতর্কিত অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে এই মিডিয়া। মূলত আল জাজিরা আরববিশ্বের কলঙ্ক। পৃথিবীর মানুষ যেখানে শান্তির পক্ষপাতী সেখানে একটি টিভি চ্যানেল রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার করে চলেছে অশান্তির বার্তা। এই মিডিয়ার সকল কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকা অতিজরুরি। গণতন্ত্র ও মানবতাকে রক্ষা করতে হলে আল জাজিরার বিরুদ্ধে কথা বলতেই হবে।
লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় বহিস্কৃত যুবদলের দুই নেতা, নিহত জুবায়ের যুবলীগের কর্মী

সচেতন ও সতর্ক থাকা অতিজরুরি

প্রকাশিত : ১২:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

১৯৯৬ সালে আরব বিশ্বের প্রথম ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা আল জাজিরা একদা বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতিতে অপরাধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, বর্তমানে পুনরায় উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে শান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী কাতারভিত্তিক এই টিভি চ্যানেল এখন বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত। এটি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার ও আল কায়েদা সম্পর্কিত খবর প্রচারের মাধ্যমে।
২০১৩ সাল থেকে তালেবান, আল কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুড ও আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্বের কাছে খবর পৌঁছানোর মাধ্যম হয়ে ওঠে এটি। ইতোমধ্যে কাতার থেকে জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার তথ্যপ্রমাণও প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বমিডিয়ায়। এই টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতার ভিডিও-চিত্র প্রচারিত হয়ে থাকে হরহামেশায়। আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় এমনটি সম্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কারণ ঘটনা ঘটতে পারে এ সংবাদ তাদের সংবাদকর্মীরা আগে থেকে পেয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ইতিহাসে অপসাংবাদিকতার নাম আল জাজিরা। এমনকি মিশরে বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে সংবাদ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল এই টিভির সাংবাদিকদের। ফলে একাধিক সাংবাদিক চাকরি ছেড়ে দেন। এই চ্যানেলটির বিরুদ্ধে মিশর ও অন্য আরব দেশগুলো নিয়ে গোপন তৎপরতার কথাও জানা গেছে।
এজন্যই আফগানিস্তানে আল কায়েদা পরিচালিত অপারেশন, আত্মঘাতী হামলা, ২০০৭ সালের ৭ জুলাই-এ লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা হামলা প্রভৃতি ঘটনা একমাত্র আল জাজিরায় প্রচারিত হয়েছিল। এই চ্যানেলটি উগ্রবাদী মতাদর্শে পরিচালিত ও সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের মুখপত্র। যুক্তরাষ্ট্র আল-জাজিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে এভাবে, এই মিডিয়া নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, ধর্মীয় উস্কানি ও হলুদ সাংবাদিকতার পরিপোষক।
২০০৯ সালের পর শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের নানা ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার করে চলেছে আল জাজিরা। তাদের সংবাদ পরিবেশনায় বর্তমান সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক খবর সবসময় স্থান জুড়ে বসেছে। তবে বিশ্বব্যাপী অনেক আগে থেকে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে এই চ্যানেলটি পক্ষপাতমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত। উস্কানিমূলক ও বিতর্কিত সংবাদ পরিবেশনের জন্য ২০১৭ সালের মে মাসের শেষ দিকে আল জাজিরার ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিশর এবং বাহরাইন।
২০১৯ সালে তিনজন ব্যক্তির গুম হওয়ার সাথে বাংলাদেশের একজন উর্দ্ধতন নিরাপত্তা ও সামরিক কর্মকর্তার যোগসাজশ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই ওয়েবসাইটটি। আসলে এই মিডিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দানের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আপত্তিকর সংবাদ পরিবেশনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা। ফলে দেশে দেশে নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, বিভ্রান্তিতে পড়েছে জনগণ।
মনে রাখা দরকার, একসময় প্রতিবেদনের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে দেশ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পতিত হবে বলেও তথ্য উপস্থাপন করে আল জাজিরা। সেসময় বিশ্বের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রহসন হিসেবে উপস্থাপন করেছিল এবং একাত্তরের কুখ্যাত ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ইসলামী চিন্তাবিদ সাজিয়ে তাদের ভাবমূর্তি তৈরির একটি চেষ্টা দেখা গিয়েছিল।
২০১১ সালের ১০ আগস্টে এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘ওঃ রং ঃযব ভরৎংঃ ঃরসব রহ ঃযব পড়ঁহঃৎু’ং যরংঃড়ৎু ঃযধঃ বারফবহপব ড়ভ ধিৎ পৎরসবং রিষষ নব নৎড়ঁমযঃ নবভড়ৎব ধ লঁফমব, নঁঃ ঃযবৎব ধৎব ধপপঁংধঃরড়হং ঃযধঃ ঃযব মড়াবৎহসবহঃ রং ঁংরহম ঃযব ঃৎরধষং ঃড় ৎড়ঁহফ ঁঢ় ঃযব ড়ঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ’.২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ‘দি পলিটিকালাইজেশন অব বাংলাদেশস ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তালহা আহমেদ নামের একজন প্রতিবেদক বাংলাদেশের চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করেন। আল জাজিরা টেলিভিশন তথা মিডিয়ার সম্পর্ক এদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। যে দলটি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচারণ করে এসেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দৃষ্টিতে এ দলটি অপরাধী। আল জাজিরার আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে জামায়াতের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়। বিশেষ করে ‘বাংলাদেশ পলিটিশিয়ান অ্যাকিউজড অফ ওয়্যার ক্রাইম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রতিবেদক যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের পক্ষে সাফাই গেয়েছিল। ২০১৪ সালে আমরা দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধারাবাহিক নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করেছিল কাতারি রাজ পরিবারের মালিকানাধীন এই টেলিভিশন চ্যানেলটি। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত যে কোনো সংবাদ উপস্থাপনের ধরন দেখে মনে হয়েছিল তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
সেই অপপ্রচারের মাত্রা এখন বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে ডাল-পালায় বিস্তার লাভ করেছে। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পরও আল জাজিরার ভূমিকা ছিল ন্যক্কারজনক। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উপস্থাপন করা হয় একটি অনুষ্ঠানে যেখানে টবি ক্যাডম্যান এবং ডেভিড বার্গম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে দর্শকশ্রোতার মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
এমনকি যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক সম্প্রচারে ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলা হয় ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। আল-জাজিরাকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিল। এখনও এখানকার অপরাধীদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে এই চ্যানেলটি। আল জাজিরা জঙ্গিবাদকে উস্কে দিয়েছে এবং ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীদের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে সকল শুভপ্রয়াসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল আল জাজিরা। কেবল এই ইস্যু নয় আরো অনেক বিষয়ে তাদের নাক গলাতে দেখা গেছে।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে সাভারের একটি ইটভাটা থেকে শিশু ও নারীসহ শেকলবন্দী ৩০ জনকে উদ্ধার করে র‌্যাব। সে সময় দেশ-বিদেশি মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছিলো ওই ঘটনা। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুই মাস পর পুনরায় ভিডিও চিত্রসহ ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে আল জাজিরা। আল জাজিরার ওয়েবসাইটের এশিয়া বিভাগের “হোয়াট’স হট” অংশে গুরুত্বের সঙ্গে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারির ওই ঘটনাটির ভিডিওচিত্র প্রচার করা হয় ‘পুলিশ রেইড বাংলাদেশ স্লেভ ক্যাম্প’ শিরোনামে। শ্রমিকদের নির্যাতনের যে চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছিল তা ছিল অতিরঞ্জিত। মূলত শেখ হাসিনা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাদের একমাত্র কাজে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার হীন প্রয়াস এখনো চলছে। এর আগেও একাধিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম বেড়েছে বলে প্রচার করা হয় যা ছিল ভিত্তিহীন। ‘র‌্যাব’ও তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিল। টিভি চ্যানেলটি বিএনপি-জামায়াতের পক্ষাবলম্বী হওয়ায় বাংলাদেশের এলিটফোর্সকে নিয়ে তারা একাধিক প্রতিবেদন প্রচার করে। ‘ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেনসেস সার্জ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনের লেখক ছিলেন ডেভিড বার্গম্যান। এই লেখকও বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ইতিহাসে অপসাংবাদিকতার নাম আল জাজিরা। এমনকি মিশরে বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে সংবাদ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল এই টিভির সাংবাদিকদের। ফলে একাধিক সাংবাদিক চাকরি ছেড়ে দেন। এই চ্যানেলটির বিরুদ্ধে মিশর ও অন্য আরব দেশগুলো নিয়ে গোপন তৎপরতার কথাও জানা গেছে একাধিক সূত্রে। ২০১৪ সালে দোহায় আল জাজিরার সম্পাদকীয় বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন চার সদস্য। মিশর নিয়ে আল-জাজিরার ‘পক্ষপাতমূলক সম্পাদকীয় নীতি’কে নিজেদের পদত্যাগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তারা।
পশ্চিমা বিশ্বেও এই টেলিভিশন চ্যানেলটিকে দেখা হয় সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের পরোক্ষ কিংবা কখনো প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে এর জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে পৌঁছেছে। বলা হয়ে থাকে, এর রয়েছে টেররিস্ট নেটওয়ার্ক। আল জাজিরার বিরুদ্ধে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
উস্কানিমূলক সংবাদ প্রচারের কারণে ২০১০ সালে আল জাজিরা টেলিভিশনের কুয়েত শাখার কার্যালয় বন্ধ করে দেয় সেখানকার সরকার। এর আগেও একবার ২০০২ সালের নভেম্বরে আল জাজিরা কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল কুয়েত সরকার। দীর্ঘ আড়াই বছর পর ২০০৫ সালের মে মাসে কার্যালয়টি পুনরায় চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে আল-জাজিরার একাধিক সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেয় মিশরের আদালত। অভিযুক্ত সকলেই জঙ্গি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে দোষী ছিল। ২০১৫ সালে ‘মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর’ অভিযোগে আল জাজিরার তিনজন সাংবাদিককে দোষী সাব্যস্ত করে মিশর। ২০০২ সালে আল জাজিরায় সৌদিদের ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি পরিকল্পনার কভারেজ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কাতার থেকে রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেয় সৌদি আরব। ২০০৮ সালে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত পাঠানো হয়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সাংবাদিকদের হলুদ সাংবাদিকতায় বাধ্য করা, জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ এবং অনৈতিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগ এনে আল জাজিরার ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ ফাহমিসহ মিশরে ২২ জন সাংবাদিক পদত্যাগ করেন। একই অভিযোগ এনে এবং জাজিরাকে অপপ্রচারের মেশিন হিসেবে অভিহিত করে পদত্যাগ করেন লিবিয়া প্রতিনিধি আলী হাশেম, বার্লিন প্রতিনিধি আখতাম সুলেমান।
ধর্মীয় উস্কানি, জিহাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী ধারণা প্রচার, জঙ্গিদের দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যা দেয়া, বোমা হামলা ও আত্মঘাতী হামলাকে জান্নাতের সফর বলে উল্লেখ করাসহ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিতর্কিত অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে এই মিডিয়া। মূলত আল জাজিরা আরববিশ্বের কলঙ্ক। পৃথিবীর মানুষ যেখানে শান্তির পক্ষপাতী সেখানে একটি টিভি চ্যানেল রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার করে চলেছে অশান্তির বার্তা। এই মিডিয়ার সকল কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকা অতিজরুরি। গণতন্ত্র ও মানবতাকে রক্ষা করতে হলে আল জাজিরার বিরুদ্ধে কথা বলতেই হবে।
লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।