০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

ঋণ খেলাপিদের প্রয়োজনে গ্রেফতার করে আনা হবে

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি ঋণ খেলাপিরা তলবে আদালতে হাজির না হলে তাদের প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পিপলস লিজিংয়ের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ১৪৩ জন ঋণখেলাপির হাজির হওয়ার কথা ছিল। সেখানে ৫১ জন হাজির হয়েছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট বলেন, আদালতের তলবে যারা আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে কোর্টে হাজির করা হবে। আদালতে ঋণখেলাপিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মোস্তাক আহমেদ। গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি অর্থঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া এমন ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেন হাইকোর্ট।
২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির হয়ে ঋণ ও তা পরিশোধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ১৪৩ জন ঋণ খেলাপির হাজির হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।
গত বছরের নভেম্বর মাসে কোম্পানি আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণগ্রহীতাদের তালিকা দাখিল করতে বলেন বলে জানান আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। তিনি বলেন, সে অনুসারে ঋণগ্রহীতা ৫০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা গত বছরের ২৩ নভেম্বর আদালতে দাখিল করা হয়। ওই ঋণগ্রহীতাদের তালিকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি অর্থঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া ২৮০ জনকে কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালতে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে বলা হয়। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণসহ ২৮০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলস লিজিংয়ের পাওনা ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার বেশি বলে জানান মেজবাহুর রহমান। তিনি বলেন, এ ঋণ ও ঋণ পরিশোধ বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ২৮০ ব্যক্তিকে ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালককে ‘ডাকাত’ বললেন হাইকোর্ট : পিপলস লিজিংয়ের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। ভার্চুয়ালে যুক্ত এক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে মঙ্গলবার হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ ঋণখেলাপিদের আইনজীবীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন। আদালতে এদিন উপস্থিত ৫১ ঋণখেলাপির পক্ষে আইনজীবী মুশতাক আহমেদ শুনানি করেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘পি কে হালদার এবং এস কে সুর কী আকাম-কুকাম করছে সেটা তো চলবেই। আমরা দেখছি হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি-না। আমানতকারীরা আজকে খেয়ে, না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের। একটি কোম্পানি অবসায়ন করতে হলেও তার একটা প্রসিডিং আছে। আমরা সেটাও দেখছি। টাকাগুলো উদ্ধারের একটা পথ বের করার চেষ্টা করছি।’ এ সময় অনেক ঋণখেলাপি টাকা পরিশোধে সময় প্রার্থনা করছেন। এরই এক পর্যায়ে ভার্চুয়ালে যুক্ত আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘শাহ আলম একটা চোর, ডাকাত।’ এর আগে, এই দুর্নীতির অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হককে গ্রেফতার করে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেয়া হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক অফিসিয়াল আদেশে বিষয়টি জানানো হয়। তবে একটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে এখনও বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যানসিয়াল স্টাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট, ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ডিপার্টমেন্ট এবং স্পেশাল স্টাডিজ সেলের নির্বাহী পরিচালক।

ট্যাগ :

বীরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ঋণ খেলাপিদের প্রয়োজনে গ্রেফতার করে আনা হবে

প্রকাশিত : ১২:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি ঋণ খেলাপিরা তলবে আদালতে হাজির না হলে তাদের প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পিপলস লিজিংয়ের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ১৪৩ জন ঋণখেলাপির হাজির হওয়ার কথা ছিল। সেখানে ৫১ জন হাজির হয়েছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট বলেন, আদালতের তলবে যারা আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে কোর্টে হাজির করা হবে। আদালতে ঋণখেলাপিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মোস্তাক আহমেদ। গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি অর্থঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া এমন ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেন হাইকোর্ট।
২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির হয়ে ঋণ ও তা পরিশোধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ১৪৩ জন ঋণ খেলাপির হাজির হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।
গত বছরের নভেম্বর মাসে কোম্পানি আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণগ্রহীতাদের তালিকা দাখিল করতে বলেন বলে জানান আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। তিনি বলেন, সে অনুসারে ঋণগ্রহীতা ৫০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা গত বছরের ২৩ নভেম্বর আদালতে দাখিল করা হয়। ওই ঋণগ্রহীতাদের তালিকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি অর্থঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া ২৮০ জনকে কারণ দর্শাতে বলেছেন আদালতে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে বলা হয়। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণসহ ২৮০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলস লিজিংয়ের পাওনা ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার বেশি বলে জানান মেজবাহুর রহমান। তিনি বলেন, এ ঋণ ও ঋণ পরিশোধ বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ২৮০ ব্যক্তিকে ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালককে ‘ডাকাত’ বললেন হাইকোর্ট : পিপলস লিজিংয়ের শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। ভার্চুয়ালে যুক্ত এক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে মঙ্গলবার হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ ঋণখেলাপিদের আইনজীবীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ কথা বলেন। আদালতে এদিন উপস্থিত ৫১ ঋণখেলাপির পক্ষে আইনজীবী মুশতাক আহমেদ শুনানি করেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘পি কে হালদার এবং এস কে সুর কী আকাম-কুকাম করছে সেটা তো চলবেই। আমরা দেখছি হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি-না। আমানতকারীরা আজকে খেয়ে, না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের। একটি কোম্পানি অবসায়ন করতে হলেও তার একটা প্রসিডিং আছে। আমরা সেটাও দেখছি। টাকাগুলো উদ্ধারের একটা পথ বের করার চেষ্টা করছি।’ এ সময় অনেক ঋণখেলাপি টাকা পরিশোধে সময় প্রার্থনা করছেন। এরই এক পর্যায়ে ভার্চুয়ালে যুক্ত আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘শাহ আলম একটা চোর, ডাকাত।’ এর আগে, এই দুর্নীতির অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হকের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হককে গ্রেফতার করে। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেয়া হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক অফিসিয়াল আদেশে বিষয়টি জানানো হয়। তবে একটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে এখনও বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যানসিয়াল স্টাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট, ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ডিপার্টমেন্ট এবং স্পেশাল স্টাডিজ সেলের নির্বাহী পরিচালক।