সারা দেশেই দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। দিনাজপুরের লিচুর নাম শুনলেই মুখে জল এসে যায়। জেলার লিচুর বাগানগুলোতে থোকায় থোকায় সবুজ লিচু ঝুলছে। আগামী ১৫ দিন পর থেকেই সবুজ লিচু রঙ্গিন হতে শুরু করবে, লিচু খাওয়ার উপযোগী হবে। তবে এ বছর গত বছরের তুলনায় লিচু উৎপাদন তুলনামূলক কম।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার কারণে অনেক লিচুরই মুকুল অবস্থায় ঝরে পড়ে যায়। আবার দেশব্যাপি করোনার কারণে বাজার নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ফলে এখন থেকেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে লিচু চাষি ও বাগানিদের মাথায়।
লিচুর ফলনে বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে কৃষিবিদরা বলছেন, শীতকালে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম ছিল। এ কারণে গাছে ফুল না ধরে কচি পাতা বের হয়েছে। একইসঙ্গে লিচু গাছে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে গাছের উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচালক প্রতীপ কুমার গুহ বলেন, জেলায় এ বছর সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। সেখানে গাছ রয়েছে সাত লাখের ওপরে। যা থেকে গত বছরে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লিচুর ফলন হয়েছিল। চলতি বছর লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। প্রতি বছর এই জেলায় ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার বেশি লিচু বেচাকেনা হয়।
জেলায় যেসব লিচু আবাদ হয় তার মধ্যে বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না থ্রি, চায়না টু, কাঠালি, বেদানাসহ বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হয়। তার মধ্যে বেশি আবাদ হয় বোম্বাই ও মাদ্রাজি জাতের লিচু। চলতি বছরে এই দুই জাতের লিচু কম।
দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার বাগানী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, আমার বাগানে গত বছর ১০ লাখ লিচু পেয়েছিলাম। এ বছর ছয় লাখও পাবো কিনা সন্দেহ আছে। আমার মনে হয় এ বছর ফলন কম হওয়ার কারণ মূলত আবহাওয়া। এ বছর শেষের দিকে প্রচুর কুয়াশা হয়েছে। যার কারণে যে সময় মুকুল ফুটে বের হওয়ার কথা, তখন বের হয়েছে নতুন পাতা।
মাসিমপুরের লিচু চাষি মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমার মতো লিচু বাগানি যারা আছে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বছর লাভবান হওয়ার সুযোগ খুবই কম। কারণ আমরা যে খরচ করি, যেমন পাহারাদার, লোকজন রাখা, গাছ থেকে লিচু নামানোর খরচ, তার সবটা মিলিয়ে লোকশান না হলেও আশা করছি গায়ে গায়ে যাবে। জানি না এ বছরের বাজার কেমন হবে। ভালো হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিবরামপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার বাগানে ১৮০টি গাছ আছে। গত বছর ৪০টি গাছে ফল আসেনি। আর এ বছর ৭০টি গাছে ফল আসেনি। গত বার লিচু খুব ভালো হয়েছিল। এ বছর কুয়াশা বেশি, তাই ফলন কম। গত বছর ফলন দেখে আমি বাগান কিনছি। এ বছরের ফলনের জন্য ভালোমত পরিচর্যা করেছি। আমি বাগানে ফলের জন্য খুবই চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ বছর ফলন নাই। যা ফল দেখছি এতে করে ভাগ্যে যা আছে, যা হয় হবে।
বিরলের ধুকুরঝাড়ী এলাকার লিচু চাষি রশিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই একটু লোকসানের মধ্যে আছি। দুই বছরে লিচুর মৌসুমে রোজার মাস পড়েছিল, আর গত বছর ছিল করোনা। এবারে করোনা তো আছেই। আবার মুকুলও কম এসেছে। তাই লাভের আশা এবার ছেড়ে দিয়েছি। পরিচর্যা যতটুকু না করলেই নয় ততটুকু করছি। কারণ অব্যাহত লোকসানে আর আশা ভর করছে না।