১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

দখলমুক্ত ৫৫১২ একর খাসজমি

সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর সরকার। এজন্য যেখানেই সরকারের খাস জমি রয়েছে সেখানেই করা হচ্ছে বাড়ি। আর যেসব জায়গায় পর্যাপ্ত জমি নেই, সেখানে কেনা হচ্ছে জমি। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা খাসজমি উদ্ধার করে আশ্রয়ণের ঘর করা হচ্ছে। এভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার ৫১২ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। যার দাম তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে। এসব জমিতে এরই মধ্যে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য তৃতীয় ধাপে ঘর নির্মাণ শুরু হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে সরকারি খাসজমিতে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি ঘর দেওয়া হয়েছে।

এতে ঘরপ্রতি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই শতক বা শতাংশ জমি। ফলে অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না খাসজমি। আবার কোথাও থাকলেও সেটি ঘর করার উপযোগী নয়। সেখানে নতুন জমি কিনে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছে সরকার। এজন্য ১০৮ কোটি ৯১ লাখ ২০ টাকা বরাদ্দও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পে ১৫৫ একর জমি কেনাও হয়েছে। এছাড়া কিছু জায়গায় সরকারি খাসজমি প্রভাবশালীদের দখলে আছে। যেগুলো তারা ভুয়া কাগজপত্র করে দীর্ঘদিন করছেন ভোগ। সারাদেশে এমন প্রায় পাঁচ হাজার ৫১২ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। যার দাম তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দেওয়ার প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। আমরা এই প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে তৃতীয় পর্যায়ে ৬৫ হাজার ৪৭৪টি সেমিপাকা বাড়ি করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, সারাদেশে তিন ধরনের জমিতে ঘর করছি। কিছু সরাসরি খাসজমি, কিছু অপদখলীয় সরকারি জমি, যেগুলো উদ্ধার করতে হচ্ছে। আর কিছু কেনা জমি। এরই মধ্যে প্রভাবশালীদের দখল থেকে পাঁচ হাজার ৫১২ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। আর নতুন করে ১৫৫ একর জমি কেনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে- দেশে কোনো গৃহহীন থাকবে না।

সবার জন্য ঘর নিশ্চিত করতে সরকারি জমি না থাকলে প্রয়োজনে জমি কিনে ঘর করে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ক্রয় করা জমিতে পুনর্বাসন হয়েছে ছয় হাজার ৮৯১ পরিবারের। যেসব জায়গায় পর্যাপ্ত জমি নেই, সেখানে কেনা হচ্ছে জমি সরকারের এই প্রকল্প পরিদর্শনে ঢাকার সাভারে যান এই প্রতিবেদক। সরেজমিনে দেখা যায়, সাভারে ১ দশমিক ৪১০০ একর খাসজমি দখলমুক্ত করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি ও তৃতীয় ধাপে ৪০টি ঘর নির্মাণ হবে। সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম (সুরুজ) বলেন, এখানকার ১ দশমিক ৪১০০ একর খাস জমি ইদ্রিস নামের এক ব্যবসায়ীর দখলে ছিল।

তারপর ঢাকা সাংহাই সিরামিকস কোম্পানি এটি কিনে নেয় ২০১৩ সালে। তারা এখানে সিরামিক তৈরির মাটি রাখতো। ২০২১ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য এটা করা হয় উদ্ধার। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটি সরকারের রেকর্ডে খাসজমি ছিল। যা দখলে ছিল ঢাকা সাংহাই সিরামিক কোম্পানির। আমরা উদ্ধার করে গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। তিনি বলেন, জমি উদ্ধার করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। এদিকে সিরাজগঞ্জ সদরেও অপদখল মুক্ত করে ১০ একর খাসজমিতে ২৬৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুকাতে রাব্বি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১০ একর খাসজমি দখলমুক্ত করেছি। সেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, সরকারি খাসজমি আশপাশের মানুষজন চাষাবাদ করে খেতো। আমরা সেগুলো নিয়ে নিয়েছি। এভাবে সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা পর্যন্ত জমি দখলমুক্ত করে ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুনভাবে কেনা হয়েছে ১৫৫ একর জমি।

ট্যাগ :

ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

দখলমুক্ত ৫৫১২ একর খাসজমি

প্রকাশিত : ১২:০০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ এপ্রিল ২০২২

সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর সরকার। এজন্য যেখানেই সরকারের খাস জমি রয়েছে সেখানেই করা হচ্ছে বাড়ি। আর যেসব জায়গায় পর্যাপ্ত জমি নেই, সেখানে কেনা হচ্ছে জমি। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা খাসজমি উদ্ধার করে আশ্রয়ণের ঘর করা হচ্ছে। এভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার ৫১২ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। যার দাম তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে। এসব জমিতে এরই মধ্যে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য তৃতীয় ধাপে ঘর নির্মাণ শুরু হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে সরকারি খাসজমিতে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি ঘর দেওয়া হয়েছে।

এতে ঘরপ্রতি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই শতক বা শতাংশ জমি। ফলে অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না খাসজমি। আবার কোথাও থাকলেও সেটি ঘর করার উপযোগী নয়। সেখানে নতুন জমি কিনে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছে সরকার। এজন্য ১০৮ কোটি ৯১ লাখ ২০ টাকা বরাদ্দও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পে ১৫৫ একর জমি কেনাও হয়েছে। এছাড়া কিছু জায়গায় সরকারি খাসজমি প্রভাবশালীদের দখলে আছে। যেগুলো তারা ভুয়া কাগজপত্র করে দীর্ঘদিন করছেন ভোগ। সারাদেশে এমন প্রায় পাঁচ হাজার ৫১২ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। যার দাম তিন হাজার কোটি টাকার ওপরে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, গৃহহীন মানুষকে ঘর দেওয়ার প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। আমরা এই প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নিতে তৃতীয় পর্যায়ে ৬৫ হাজার ৪৭৪টি সেমিপাকা বাড়ি করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, সারাদেশে তিন ধরনের জমিতে ঘর করছি। কিছু সরাসরি খাসজমি, কিছু অপদখলীয় সরকারি জমি, যেগুলো উদ্ধার করতে হচ্ছে। আর কিছু কেনা জমি। এরই মধ্যে প্রভাবশালীদের দখল থেকে পাঁচ হাজার ৫১২ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। আর নতুন করে ১৫৫ একর জমি কেনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে- দেশে কোনো গৃহহীন থাকবে না।

সবার জন্য ঘর নিশ্চিত করতে সরকারি জমি না থাকলে প্রয়োজনে জমি কিনে ঘর করে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে ক্রয় করা জমিতে পুনর্বাসন হয়েছে ছয় হাজার ৮৯১ পরিবারের। যেসব জায়গায় পর্যাপ্ত জমি নেই, সেখানে কেনা হচ্ছে জমি সরকারের এই প্রকল্প পরিদর্শনে ঢাকার সাভারে যান এই প্রতিবেদক। সরেজমিনে দেখা যায়, সাভারে ১ দশমিক ৪১০০ একর খাসজমি দখলমুক্ত করে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি ও তৃতীয় ধাপে ৪০টি ঘর নির্মাণ হবে। সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবিএম আজহারুল ইসলাম (সুরুজ) বলেন, এখানকার ১ দশমিক ৪১০০ একর খাস জমি ইদ্রিস নামের এক ব্যবসায়ীর দখলে ছিল।

তারপর ঢাকা সাংহাই সিরামিকস কোম্পানি এটি কিনে নেয় ২০১৩ সালে। তারা এখানে সিরামিক তৈরির মাটি রাখতো। ২০২১ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য এটা করা হয় উদ্ধার। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটি সরকারের রেকর্ডে খাসজমি ছিল। যা দখলে ছিল ঢাকা সাংহাই সিরামিক কোম্পানির। আমরা উদ্ধার করে গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। তিনি বলেন, জমি উদ্ধার করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। এদিকে সিরাজগঞ্জ সদরেও অপদখল মুক্ত করে ১০ একর খাসজমিতে ২৬৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুকাতে রাব্বি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১০ একর খাসজমি দখলমুক্ত করেছি। সেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, সরকারি খাসজমি আশপাশের মানুষজন চাষাবাদ করে খেতো। আমরা সেগুলো নিয়ে নিয়েছি। এভাবে সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা পর্যন্ত জমি দখলমুক্ত করে ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুনভাবে কেনা হয়েছে ১৫৫ একর জমি।