০১:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

বেসরকারি ব্যাংকে সুদ মওকুফে ‘বিশেষ’ ছাড়

বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সুদ মওকুফে ‘বিশেষ’ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, তাতে বেশ কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার এক সার্কুলারে বলেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করতে পারবে না। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো আগের আয় থেকে সুদ মওকুফ করতে পারবে। বেশ কিছু দিন ধরে সুদ মওকুফ সুবিধা নিতে কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ যে অপতৎপরতা শুরু করেছিল, এই সার্কুলারের মাধ্যমে তাদের সেই তৎপরতার সুযোগ করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের পরিচালক, তাদের পরিবারের সদস্য ও পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।দেশের শীর্ষ দুই ব্যবসায়ী গ্রুপ একে অপরের ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা নিয়েছে। যার অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরও অনেক গ্রুপ নিজেদের সুদ মওকুফ করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর সবই বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ।এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার এই নির্দেশনা জারি করেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাকসুদা বেগমের সই করা সার্কুলারটি মঙ্গলবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, গত ২২ এপ্রিল দসুদ মওকুফ সম্পর্কিত নীতিমালা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক সার্কুলারে সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নীতিমালা অবলোপনকৃত ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না এ বিষয়ে অস্পষ্টতা নিরসনকল্পে এ মর্মে সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, তফসিলি ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রেও উক্ত নীতিমালা অনুসরণীয় হবে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করা যাবে না। ইতোপূর্বে জারি করা সার্কুলারে রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি সব ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নতুন নির্দেশনায় বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকের জন্য এ শর্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করতে পারবে না। মঙ্গলবারের সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, ‘সুদ মওকুফে অপরিহার্য ক্ষেত্রে তহবিল ব্যয় আদায়ের শর্ত শিথিল করার জন্য এর যৌক্তিকতা নিশ্চিতকরণে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স (এইচআইসিসি) এর মতামত গ্রহণ করতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “ব্যাংক পরিচালকেরা আগে নিজের ব্যাংক থেকে ইচ্ছেমতো ঋণ নিতেন। পরে আইনি বাধার কারণে সেই সুযোগ কমে যায়। এরপর শুরু হয় এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের আতাতের মাধ্যমে সীমার বেশি ঋণ নেওয়া। যার মাধ্যমে উভয় ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে গড়ে ওঠে অশুভ জোট। এখন সেই পরিচালকেরা ‘অশুভ আঁতাত’ এর মাধ্যমে একে অপরের ঋণের পুরো সুদ মওকুফ করে নিচ্ছেন।এতে ব্যাংকিং খাতের বড় ক্ষতি হবে বলে জানান ওই ব্যাংকার।বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপের সব ঋণের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। আবার রাজধানীর একটি গ্রুপের ঋণের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে ইসলামী ধারার ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো পড়ছে ঝুঁকিতে। আর সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছে জনগণের আমানত।

ট্যাগ :

বিএফআইইউ প্রধানের ‘ভিডিও ফাঁস’ বিশেষজ্ঞদের দাবি এআই দারা নির্মিত ষড়যন্ত্র

বেসরকারি ব্যাংকে সুদ মওকুফে ‘বিশেষ’ ছাড়

প্রকাশিত : ১২:০০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সুদ মওকুফে ‘বিশেষ’ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, তাতে বেশ কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার এক সার্কুলারে বলেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করতে পারবে না। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো আগের আয় থেকে সুদ মওকুফ করতে পারবে। বেশ কিছু দিন ধরে সুদ মওকুফ সুবিধা নিতে কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ যে অপতৎপরতা শুরু করেছিল, এই সার্কুলারের মাধ্যমে তাদের সেই তৎপরতার সুযোগ করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের পরিচালক, তাদের পরিবারের সদস্য ও পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।দেশের শীর্ষ দুই ব্যবসায়ী গ্রুপ একে অপরের ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা নিয়েছে। যার অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরও অনেক গ্রুপ নিজেদের সুদ মওকুফ করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর সবই বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ।এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার এই নির্দেশনা জারি করেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাকসুদা বেগমের সই করা সার্কুলারটি মঙ্গলবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, গত ২২ এপ্রিল দসুদ মওকুফ সম্পর্কিত নীতিমালা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক সার্কুলারে সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নীতিমালা অবলোপনকৃত ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না এ বিষয়ে অস্পষ্টতা নিরসনকল্পে এ মর্মে সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, তফসিলি ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রেও উক্ত নীতিমালা অনুসরণীয় হবে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করা যাবে না। ইতোপূর্বে জারি করা সার্কুলারে রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি সব ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নতুন নির্দেশনায় বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকের জন্য এ শর্ত তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করতে পারবে না। মঙ্গলবারের সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, ‘সুদ মওকুফে অপরিহার্য ক্ষেত্রে তহবিল ব্যয় আদায়ের শর্ত শিথিল করার জন্য এর যৌক্তিকতা নিশ্চিতকরণে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স (এইচআইসিসি) এর মতামত গ্রহণ করতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “ব্যাংক পরিচালকেরা আগে নিজের ব্যাংক থেকে ইচ্ছেমতো ঋণ নিতেন। পরে আইনি বাধার কারণে সেই সুযোগ কমে যায়। এরপর শুরু হয় এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের আতাতের মাধ্যমে সীমার বেশি ঋণ নেওয়া। যার মাধ্যমে উভয় ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে গড়ে ওঠে অশুভ জোট। এখন সেই পরিচালকেরা ‘অশুভ আঁতাত’ এর মাধ্যমে একে অপরের ঋণের পুরো সুদ মওকুফ করে নিচ্ছেন।এতে ব্যাংকিং খাতের বড় ক্ষতি হবে বলে জানান ওই ব্যাংকার।বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপের সব ঋণের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। আবার রাজধানীর একটি গ্রুপের ঋণের সুদ মওকুফ করে দিয়েছে ইসলামী ধারার ফার্স্ট সিকিউরিটি, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো পড়ছে ঝুঁকিতে। আর সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছে জনগণের আমানত।