০৪:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দাম বাড়ানোর পরিবর্তে টিসিবি পণ্যে ভর্তুকি বাড়াবে সরকার

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে দেশে ভোজ্যতেল ও মসুর ডালের দাম বাড়ায় ভর্তুকি কমাতে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী দরিদ্র পরিবারের মাঝে পণ্য বিতরণ শুরুর আগে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে পণ্যমূল্য বাড়ার চাপ দেশের দরিদ্র ভোক্তাদের কাঁধে না দিয়ে সরকার ভতুর্কি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ঈদ উল ফিতরের আগে ভোক্তারা টিসিবি থেকে যে দামে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি পেয়েছেন, ঈদ উল আযহার আগেও একই দামে পাবেন। ভর্তুকি কমাতে টিসিবি প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং মসুর ডালের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন না করায় আগের দামেই তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান।

আগামী ২২ জুন থেকে সারাদেশে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হবে। ৫ জুলাইয়ের মধ্যে সারাদেশের এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মাঝে পণ্য বিক্রি সম্পন্ন করবে সংস্থাটি। ১৬-৩০ জুলাই সময়কালে এসব পণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও সময়মত সয়াবিন তেল সংগ্রহ করতে পারেনি টিসিবি। দাম বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরে টিসিবি মন্ত্রণালয়কে জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দেশের বাজারেও বেড়েছে। বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে টিসিবির ভোক্তামূল্যের পার্থক্য বেশি হওয়ায় সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ডিলার ও ভোক্তার মাধ্যমে টিসিবির পণ্য অবৈধভাবে বিক্রির সম্ভাবনা বেড়েছে। এ কারণে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বাজারমূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে।

এ অবস্থায় টিসিবির সরবরাহ করা পণ্যের দাম বাড়ানো হলে তা বহন করা ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই সরকার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনা করেনি। টিসিবি ঈদ উল আযহার আগে এক কোটি পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিতরণ করবে। বাজারে বর্তমানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ২০৫ টাকা। যেখানে টিসিবি বিক্রি করবে ১১০ টাকা লিটারে। অর্থাৎ এখানে টিসিবি বাজারমূল্যের চেয়ে ৯৫ টাকা কমে তেল বিক্রি করছে। তবে ঈদ উল ফিতরের আগে যখন ১১০ টাকা লিটার করে টিসিবি তেল বিক্রি করেছে, ওই সময় টিসিবির ক্রয়মূল্য ছিল ১৬৮ টাকা। অর্থাৎ, দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটার তেলে টিসিবির ভর্তুকি বাড়ছে ২৭ টাকা। বর্তমানে বাজারে এক কেজি দেশি মসুর ডাল কিনতে হচ্ছে ১৩০ টাকায়। টিসিবি এই ডাল বিক্রি করবে ৬৫ টাকায়, এখানে সরকার বাজারমূল্যের চেয়ে ৬৫ টাকা কমে পণ্য বিক্রি করছে। এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, টিসিবি বিক্রি করবে ৫৫ টাকায়, এখানে বাজারমূল্যের তুলনায় সরকার ৩০ টাকা কম নিচ্ছে।

আসন্ন ঈদ উল আযহার আগে এক কোটি পরিবারের প্রত্যেকের কাছে ২ লিটার করে সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি বিক্রি করা হবে। সে হিসেবে একটি পরিবারের এই তিনটি পণ্য বাজার থেকে কিনতে যে টাকা লাগতো তার চেয়ে ৩৫০ টাকা সাশ্রয়ে নিতে পারবে। টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, টিসিবির এক কোটি পরিবারের মাঝে এসব পণ্য বিক্রির জন্য দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ২০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১০ হাজার টন চিনি দরকার। টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ‘আমরা ২২ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত পণ্য বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।’

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

দাম বাড়ানোর পরিবর্তে টিসিবি পণ্যে ভর্তুকি বাড়াবে সরকার

প্রকাশিত : ১২:০০:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে দেশে ভোজ্যতেল ও মসুর ডালের দাম বাড়ায় ভর্তুকি কমাতে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী দরিদ্র পরিবারের মাঝে পণ্য বিতরণ শুরুর আগে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে পণ্যমূল্য বাড়ার চাপ দেশের দরিদ্র ভোক্তাদের কাঁধে না দিয়ে সরকার ভতুর্কি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ঈদ উল ফিতরের আগে ভোক্তারা টিসিবি থেকে যে দামে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি পেয়েছেন, ঈদ উল আযহার আগেও একই দামে পাবেন। ভর্তুকি কমাতে টিসিবি প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং মসুর ডালের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন না করায় আগের দামেই তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান।

আগামী ২২ জুন থেকে সারাদেশে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হবে। ৫ জুলাইয়ের মধ্যে সারাদেশের এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মাঝে পণ্য বিক্রি সম্পন্ন করবে সংস্থাটি। ১৬-৩০ জুলাই সময়কালে এসব পণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও সময়মত সয়াবিন তেল সংগ্রহ করতে পারেনি টিসিবি। দাম বাড়ানোর যুক্তি তুলে ধরে টিসিবি মন্ত্রণালয়কে জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দেশের বাজারেও বেড়েছে। বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে টিসিবির ভোক্তামূল্যের পার্থক্য বেশি হওয়ায় সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ডিলার ও ভোক্তার মাধ্যমে টিসিবির পণ্য অবৈধভাবে বিক্রির সম্ভাবনা বেড়েছে। এ কারণে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বাজারমূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে।

এ অবস্থায় টিসিবির সরবরাহ করা পণ্যের দাম বাড়ানো হলে তা বহন করা ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই সরকার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনা করেনি। টিসিবি ঈদ উল আযহার আগে এক কোটি পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিতরণ করবে। বাজারে বর্তমানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ২০৫ টাকা। যেখানে টিসিবি বিক্রি করবে ১১০ টাকা লিটারে। অর্থাৎ এখানে টিসিবি বাজারমূল্যের চেয়ে ৯৫ টাকা কমে তেল বিক্রি করছে। তবে ঈদ উল ফিতরের আগে যখন ১১০ টাকা লিটার করে টিসিবি তেল বিক্রি করেছে, ওই সময় টিসিবির ক্রয়মূল্য ছিল ১৬৮ টাকা। অর্থাৎ, দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি লিটার তেলে টিসিবির ভর্তুকি বাড়ছে ২৭ টাকা। বর্তমানে বাজারে এক কেজি দেশি মসুর ডাল কিনতে হচ্ছে ১৩০ টাকায়। টিসিবি এই ডাল বিক্রি করবে ৬৫ টাকায়, এখানে সরকার বাজারমূল্যের চেয়ে ৬৫ টাকা কমে পণ্য বিক্রি করছে। এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, টিসিবি বিক্রি করবে ৫৫ টাকায়, এখানে বাজারমূল্যের তুলনায় সরকার ৩০ টাকা কম নিচ্ছে।

আসন্ন ঈদ উল আযহার আগে এক কোটি পরিবারের প্রত্যেকের কাছে ২ লিটার করে সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি বিক্রি করা হবে। সে হিসেবে একটি পরিবারের এই তিনটি পণ্য বাজার থেকে কিনতে যে টাকা লাগতো তার চেয়ে ৩৫০ টাকা সাশ্রয়ে নিতে পারবে। টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, টিসিবির এক কোটি পরিবারের মাঝে এসব পণ্য বিক্রির জন্য দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ২০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১০ হাজার টন চিনি দরকার। টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ‘আমরা ২২ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত পণ্য বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছি এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।’