০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়: বিজিএমইএ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্বেই দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। তাই, পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমদানিকারকরা একসঙ্গে বড় অর্ডার না নিয়ে ছোট স্লটে অর্ডার দিচ্ছে। ক্রেতারা সহসা অর্ডার বাতিল করছেন, আবার অনেক ক্রেতা ডেফার্ড পেমেন্টের দিকে ঝুঁকেছেন। এ মুহূর্তে পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে কারখানা চালানোর মতো কোনো অর্ডার কোনো কারখানারই কাছে নেই বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

২২ জানুারী (রোববার) দুপুরে চট্টগ্রামের বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ফারুক হাসান বলেন, সম্প্রতি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে

বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাকশিল্পে।
তিনি বলেন, যদিও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির নতুন রেকর্ড গড়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ, কাঁচামালের বাড়তি দামের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চ মূল্যের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পণ্যের এই মূল্য বৃদ্ধির সুফল উদ্যোক্তারা নিতে পারছেন না। অন্যদিকে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সবুজ শিল্পয়ায়নে বিপুল বিনিয়োগ করলেও ক্রেতারা তার যথাযথ মূল্য দিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, গত দেড় বছরে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬২ শতাংশ, কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ, ডাইস ও ক্যামিকেলের খরচ বৃদ্ধি ৬০ শতাংশ, গত বছরের শুরুতে মজুরির বৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত ৫ বছরে পোশাকশিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ।

ফারুক হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম তিন বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে যা ভবিষ্যতে কনটেইনার ও ফ্রেইট খরচ বাড়ানো ছাড়াও নন কটন পণ্য উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল পেট্রোকেমিক্যাল চিপসের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের মূল্য ২০২২ সালের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্পের ব্যয় বৃদ্ধির এই ভার বহনের সক্ষমতা নেই। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, খাতভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতে রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের অবদানের কথা বিবেচনা করে এ খাতকে আরও গুরুত্ব দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে আমদানির ওপর ভ্যাট ও টেক্স প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সিস্টেম লস কমিয়ে ও অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ করে দিয়ে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করেন। শিল্পের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন। এর পাশাপাশি এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি কন্ট্রাক্টের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকারের নীতিসহায়তার সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাকশিল্প খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিজিএমইএ। গত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ শতকাংশ। চীন থেকে গত কয়েক বছরে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে। আগামী ৮ বছরে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। চীন যেহেতু পরিবেশগত কারণে টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে, ফলে সঙ্গত কারণেই সেগুলো বাংলাদেশে আসবে বলে আমরা ধারণা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমএইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন প্রথম অবস্থানে। সরকারের নীতিগত সহযোগিতার কারণে ইউরোপের বাজারে আমরা অতি শিগগিরই এক নম্বর অবস্থান নিতে সমর্থ হবো।

তিনি বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গার্মেন্ট পার্ক স্থাপনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জমির কিস্তির জন্য বিজিএমইএ কয়েক কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছে। যত দ্রুত সম্ভব বিজিএমইকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, রাকিবুল আলম চৌধুরী, বিজিএমইএ পরিচালক আসিফ আশরাফ, মোঃ মহিউদ্দিন রুবেল,
মোঃ হাসান (জ্যাকি), এম. এহসানুল হক, বিজিএমইএ প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির, প্রাক্তন সহ-সভাপতি এ.এম. চৌধুরী সেলিম, বিজিএমইএ’র প্রাক্তন পরিচালকবৃন্দ: আ.ন.ম সাইফুদ্দিন, মোহাম্মদ মুসা, অঞ্জন শেখর দাশ, আবদুল ওহাবসহ বিজিএমএইএর অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :

পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়: বিজিএমইএ

প্রকাশিত : ০৭:২৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্বেই দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। তাই, পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমদানিকারকরা একসঙ্গে বড় অর্ডার না নিয়ে ছোট স্লটে অর্ডার দিচ্ছে। ক্রেতারা সহসা অর্ডার বাতিল করছেন, আবার অনেক ক্রেতা ডেফার্ড পেমেন্টের দিকে ঝুঁকেছেন। এ মুহূর্তে পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে কারখানা চালানোর মতো কোনো অর্ডার কোনো কারখানারই কাছে নেই বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

২২ জানুারী (রোববার) দুপুরে চট্টগ্রামের বিজিএমইএ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ফারুক হাসান বলেন, সম্প্রতি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে

বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাকশিল্পে।
তিনি বলেন, যদিও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির নতুন রেকর্ড গড়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ, কাঁচামালের বাড়তি দামের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চ মূল্যের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পণ্যের এই মূল্য বৃদ্ধির সুফল উদ্যোক্তারা নিতে পারছেন না। অন্যদিকে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সবুজ শিল্পয়ায়নে বিপুল বিনিয়োগ করলেও ক্রেতারা তার যথাযথ মূল্য দিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, গত দেড় বছরে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬২ শতাংশ, কনটেইনার ভাড়া বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ, ডাইস ও ক্যামিকেলের খরচ বৃদ্ধি ৬০ শতাংশ, গত বছরের শুরুতে মজুরির বৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত ৫ বছরে পোশাকশিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ।

ফারুক হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম তিন বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে যা ভবিষ্যতে কনটেইনার ও ফ্রেইট খরচ বাড়ানো ছাড়াও নন কটন পণ্য উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল পেট্রোকেমিক্যাল চিপসের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের মূল্য ২০২২ সালের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্পের ব্যয় বৃদ্ধির এই ভার বহনের সক্ষমতা নেই। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, খাতভিত্তিক গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতে রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের অবদানের কথা বিবেচনা করে এ খাতকে আরও গুরুত্ব দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে আমদানির ওপর ভ্যাট ও টেক্স প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সিস্টেম লস কমিয়ে ও অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ করে দিয়ে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করেন। শিল্পের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন। এর পাশাপাশি এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি কন্ট্রাক্টের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকারের নীতিসহায়তার সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাকশিল্প খাত থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিজিএমইএ। গত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ শতকাংশ। চীন থেকে গত কয়েক বছরে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে। আগামী ৮ বছরে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। চীন যেহেতু পরিবেশগত কারণে টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে, ফলে সঙ্গত কারণেই সেগুলো বাংলাদেশে আসবে বলে আমরা ধারণা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমএইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন প্রথম অবস্থানে। সরকারের নীতিগত সহযোগিতার কারণে ইউরোপের বাজারে আমরা অতি শিগগিরই এক নম্বর অবস্থান নিতে সমর্থ হবো।

তিনি বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গার্মেন্ট পার্ক স্থাপনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জমির কিস্তির জন্য বিজিএমইএ কয়েক কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছে। যত দ্রুত সম্ভব বিজিএমইকে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, রাকিবুল আলম চৌধুরী, বিজিএমইএ পরিচালক আসিফ আশরাফ, মোঃ মহিউদ্দিন রুবেল,
মোঃ হাসান (জ্যাকি), এম. এহসানুল হক, বিজিএমইএ প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির, প্রাক্তন সহ-সভাপতি এ.এম. চৌধুরী সেলিম, বিজিএমইএ’র প্রাক্তন পরিচালকবৃন্দ: আ.ন.ম সাইফুদ্দিন, মোহাম্মদ মুসা, অঞ্জন শেখর দাশ, আবদুল ওহাবসহ বিজিএমএইএর অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ