১১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

কুষ্টিয়ায় গো খাদ্যের সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে খামারিরা দিশেহারা

কুষ্টিয়া জেলায় গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারি ও কৃষকেরা। এই গো খাদ্যের সংকট থেকে মুক্তি পেতে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলার কৃষক ও খামারিরা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছে। বিছালি, ভূষি, খুদ ও খড়ের সংকট ও দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর বিকল্প খাদ্য হিসেবে তারা নেপিয়ার ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে ৬টি উপজেলায় প্রতিবছর বাড়ছে এই ঘাসচাষ।

কুমারখালী উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫ শত বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে ৬ শতাধিক কৃষক ও খামারি। কৃষক থেকে কৃষক বীজ বা চারা নিয়ে নিজেরাই এই চাষে ঝুঁকছে। পরামর্শ ও ঘাসের কাটিং দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতাল।

কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের কৃষক নজরুল ও আমিরুল ইসলাম ঘাস চাষ করছেন কয়েক বছর যাবত। কৃষক নজরুল ইসলাম ৪০শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। তাঁর নিজের ৬টি গরু রয়েছে। তিনি জানান, তিন বছর ধরে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছি। এতে লাভ বেশি। খরচ খুবই কম। গাভির দুধও বেশি হয়। এই ঘাস চাষের জন্য বীজ বোনা এবং চারা লাগানো যায়। বীজ বুনলে দেড় মাস এবং চারা লাগালে এক মাসের মধ্যে ঘাস বড় হয়ে যায়। প্রতিমাসে নিয়মিত অল্প ফসফেট, পটাশ এবং ইউরিয়া সার দিতে হয়। মাঝেমধ্যে সেচও দিতে হয়।

একই গ্রামের কৃষক আমিরুল বলেন, ‘৩০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছি। এই জমির ঘাস থেকে আমার ৫টি গরুর খাদ্যের চাহিদা মিটে যায়। এই ঘাসে পুষ্টি বেশি।

উপজেলার সদকী গ্রামের হাসান সেখ গরু পালন করেন। তাঁর গোয়ালে সব সময় ৬ থেকে ১২টি গরু থাকে। তিনি গরু মোটাতাজাকরণ করেন। তিনি ১০০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছেন। এই খামারী বলেন, আগে বিচালি এবং খড়ের অভাবে গরু পালন করতে পারতাম না। দামও অনেক বেশি ছিল। এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ করে আমার গো-খাদ্যের সংকট দূর হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাড়াদী গ্রামের নওশের আলী বলেন, ‘আমার ৫টি গরু আছে। এর মধ্যে ৩টি গাভি। আমি ৪০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছি। তার খামারের গরুগুলো এখন এই পাকচং-১ জাতের ঘাস খেয়ে মোটাতাজা হচ্ছে। দুধ ও পাচ্ছে ভালো। দুধ বেচে সংসার ভালোই চলছে।

নেপিয়ার ঘাস কাটার জন্য অধিকাংশ কৃষক ও খামারী বিদ্যুৎ চালিত কাটার যন্ত্র স্থাপন করেছেন। নেপিয়ার ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই ঘাসে খাবারের ছয়টি উপাদানের সুষম চাহিদা পূরণ করে। অন্যান্য দানাদার খাবার গরুকে বেশি খাওয়ালে তাতে সব খাদ্যগুণ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খাদ্য হিসেবে শুধু ঘাস দিলে গরুর পরিপাকব্যবস্থা ভালো থাকে। এ জাতের ঘাস রোপণের এক থেকে দুই মাসের মাথায় কাটার উপযোগী হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই গোছা (গোড়া) থেকে চারা গজায়। সে ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়। একটি গোছা থেকে ১২ থেকে ১৫ কেজি ঘাস হয়। একটি গরুর জন্য প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি ঘাস প্রয়োজন হয়। একবার বীজ বুনলে বা চারা রোপণ করলে কয়েক বছর অনবরত ঘাস পাওয়া যায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নূরে আলম সিদ্দিকী এব্যাপারে বলেন, নেপিয়ার ঘাস একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। একবার লাগালে অনেক দিন ধরে ঘাস পাওয়া যায়। অন্য ফসলের মতো নেপিয়ার ঘাসের যতœ নেওয়া লাগে না। সময়মতো সেচ আর সামান্য সার দিলেই ভালো ফলন হয়। শুকনা বিচালির তুলনায় সবুজ ঘাসে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। এই ঘাস পশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুস্থ্যসবল পশু পালনে সবুজ ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। কুমারখালীর অনেক কৃষক এবং খামারি এখন নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এই ঘাসের উপকারিতা জেনে তাঁদের দেখে অন্যরাও চাষ করছেন। প্রতিবছর এই নেপিয়ার ঘাস চাষ বাড়ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

রংপুরে রেল স্টেশনে বৈষম্য উন্নয়ন হয়নি,প্রতিবাদে অবরোধ

কুষ্টিয়ায় গো খাদ্যের সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে খামারিরা দিশেহারা

প্রকাশিত : ০৩:০৯:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

কুষ্টিয়া জেলায় গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারি ও কৃষকেরা। এই গো খাদ্যের সংকট থেকে মুক্তি পেতে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলার কৃষক ও খামারিরা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস চাষে ঝুঁকছে। বিছালি, ভূষি, খুদ ও খড়ের সংকট ও দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর বিকল্প খাদ্য হিসেবে তারা নেপিয়ার ঘাস চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে ৬টি উপজেলায় প্রতিবছর বাড়ছে এই ঘাসচাষ।

কুমারখালী উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫ শত বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে ৬ শতাধিক কৃষক ও খামারি। কৃষক থেকে কৃষক বীজ বা চারা নিয়ে নিজেরাই এই চাষে ঝুঁকছে। পরামর্শ ও ঘাসের কাটিং দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারী হাসপাতাল।

কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের কৃষক নজরুল ও আমিরুল ইসলাম ঘাস চাষ করছেন কয়েক বছর যাবত। কৃষক নজরুল ইসলাম ৪০শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। তাঁর নিজের ৬টি গরু রয়েছে। তিনি জানান, তিন বছর ধরে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছি। এতে লাভ বেশি। খরচ খুবই কম। গাভির দুধও বেশি হয়। এই ঘাস চাষের জন্য বীজ বোনা এবং চারা লাগানো যায়। বীজ বুনলে দেড় মাস এবং চারা লাগালে এক মাসের মধ্যে ঘাস বড় হয়ে যায়। প্রতিমাসে নিয়মিত অল্প ফসফেট, পটাশ এবং ইউরিয়া সার দিতে হয়। মাঝেমধ্যে সেচও দিতে হয়।

একই গ্রামের কৃষক আমিরুল বলেন, ‘৩০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছি। এই জমির ঘাস থেকে আমার ৫টি গরুর খাদ্যের চাহিদা মিটে যায়। এই ঘাসে পুষ্টি বেশি।

উপজেলার সদকী গ্রামের হাসান সেখ গরু পালন করেন। তাঁর গোয়ালে সব সময় ৬ থেকে ১২টি গরু থাকে। তিনি গরু মোটাতাজাকরণ করেন। তিনি ১০০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছেন। এই খামারী বলেন, আগে বিচালি এবং খড়ের অভাবে গরু পালন করতে পারতাম না। দামও অনেক বেশি ছিল। এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ করে আমার গো-খাদ্যের সংকট দূর হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাড়াদী গ্রামের নওশের আলী বলেন, ‘আমার ৫টি গরু আছে। এর মধ্যে ৩টি গাভি। আমি ৪০ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছি। তার খামারের গরুগুলো এখন এই পাকচং-১ জাতের ঘাস খেয়ে মোটাতাজা হচ্ছে। দুধ ও পাচ্ছে ভালো। দুধ বেচে সংসার ভালোই চলছে।

নেপিয়ার ঘাস কাটার জন্য অধিকাংশ কৃষক ও খামারী বিদ্যুৎ চালিত কাটার যন্ত্র স্থাপন করেছেন। নেপিয়ার ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এই ঘাসে খাবারের ছয়টি উপাদানের সুষম চাহিদা পূরণ করে। অন্যান্য দানাদার খাবার গরুকে বেশি খাওয়ালে তাতে সব খাদ্যগুণ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খাদ্য হিসেবে শুধু ঘাস দিলে গরুর পরিপাকব্যবস্থা ভালো থাকে। এ জাতের ঘাস রোপণের এক থেকে দুই মাসের মাথায় কাটার উপযোগী হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই গোছা (গোড়া) থেকে চারা গজায়। সে ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়। একটি গোছা থেকে ১২ থেকে ১৫ কেজি ঘাস হয়। একটি গরুর জন্য প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি ঘাস প্রয়োজন হয়। একবার বীজ বুনলে বা চারা রোপণ করলে কয়েক বছর অনবরত ঘাস পাওয়া যায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ নূরে আলম সিদ্দিকী এব্যাপারে বলেন, নেপিয়ার ঘাস একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। একবার লাগালে অনেক দিন ধরে ঘাস পাওয়া যায়। অন্য ফসলের মতো নেপিয়ার ঘাসের যতœ নেওয়া লাগে না। সময়মতো সেচ আর সামান্য সার দিলেই ভালো ফলন হয়। শুকনা বিচালির তুলনায় সবুজ ঘাসে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। এই ঘাস পশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও মাংস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুস্থ্যসবল পশু পালনে সবুজ ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। কুমারখালীর অনেক কৃষক এবং খামারি এখন নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এই ঘাসের উপকারিতা জেনে তাঁদের দেখে অন্যরাও চাষ করছেন। প্রতিবছর এই নেপিয়ার ঘাস চাষ বাড়ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব