১২:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

ব্রিজ নির্মান না করেই ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিল ঠিকাদার

কুষ্টিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ( এলজিইডি) টেন্ডারকৃত দু’টি ব্রিজ নির্মানের বেধে দেয়া সময় পার হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওই ব্রিজ দু’টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারেনি। ফলে বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের এক মাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নিরব। পরে ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হলেও এখনো কাজ শুরু করেনি ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ দু’টি নির্মাণ না হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া-ঝাউদিয়া হয়ে আলমডাঙ্গা সড়কটি খানাখন্দে রূপধারণ করার পাশাপাশি বিশাল জনগোষ্ঠি পড়েছে বেকায়দায়।

২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১ মার্চ ২০২১ তারিখে বৃত্তিপাড়া হাট আরএন্ডএইচ জামজামী ভায়া ঝাউদিয়া হাট সড়কে ১৪’শ মিটার চেইনেজে ৮১ মিটার প্রিস্টেসড গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। বাস্তবায়ন করছেন এলজিইডি কুষ্টিয়া সদর। কিন্তু ব্রীজ নির্মাণ প্রথম দিকে কিছুটা কাজ করা হলেও পরবর্তিতে আর আলোর মুখ দেখেনি। কবে শেষ হবে এ ব্রীজ নির্মাণ তাও কেউ জানেনা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া আলমডাঙ্গা সড়কের বিত্তিপাড়া হতে ঝাউদিয়া বাজার যেতে উজানগ্রাম এলাকার গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) খালের উপর ২৫ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য সেতু নির্মানের আদেশ দেয়া হয়।

এই ব্রীজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। একই বছরের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পাওয়া সেতু নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর শেষ করার কথা। নির্ধারিত সময় পার হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০% । ওই সেতু থেকে মাত্র এক কিঃমিঃ দুরে একই সড়কের কুমার নদীর উপর ৮১ মিটার দৈর্ঘের আরেকটি সেতু নির্মানের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই সেতুটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ দেয়ার পর চলতি বছরের ৮মার্চ সেতু নির্মান শেষ হবার কথা। কিন্তু কাজ হয়েছে আনুমানিক মাত্র ৩০%। শুধু মাত্র কয়েকটি পিলার দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ এক বছর কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদার পালিয়ে যাবার পর ঠিকাদার চালাক চতুর হওয়ায় ঈদুল আযহার আগে সামন্য রডের খাচা নির্মাণ করে শুর করে কাজ চলমান দেখিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা অগ্রিম তুলে নেন। সেতু দু’টি নির্মাণের কাজ পান কুষ্টিয়ার সৈয়কত এন্টারপ্রাইজ পরে কাজ পাবনা জেলার এমএনএম এ্্যান্ড এসই (জেভি) নামের যৌথ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া। সোমবার সকালে সরেজমিনে ব্রীজ দু’টি দেখতে গেলে এলাকাবাসী জানায়, কুষ্টিয়া জেলার সঙ্গে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ড ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাকে সরাসরি যুক্ত করেছে এই সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও ছোটবড় যানবাহন চলাচল করে ।

সেতু দু’টি নির্ধারিত সময়ে তৈরী না হওয়ায় ওই সব মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে চরম পর্যায়। সেতু দু’টি নির্মানের সময় পার হলেও শুধুমাত্র কয়েকটি পিলার ও রড খাড়া হয়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার আলী আকবর নামের এক চাষীর সাথে কথা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাবারে আপনারাতো স্বচক্ষে দেখচ্ছেন সেতুর কি হাল অবস্থা। প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে কোন কাজই হচ্ছে না। হঠাৎ ২/১জন লেবার আসে কি করে আবার চলে যায়। সেতু নির্মানের কোন কাজই হচ্ছেনা। আব্দুল আলিম নামের এক পথচারী বলেন, ঈদের আগে এসে রডের খাচা একটি তৈরী করে ঠিকাদার পালিয়ে গেছে। আর আসেনি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক নুরুজ্জামান মিয়ার সাথে মুঠো ফোনে কথা বলতে গেলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এলজিইডি সাবেক কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মন্ডল বলেন, কাজ ধীরগতিতে চলছে এটা আমরা জানি। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সমস্যা থাকায় তিনি সময়মত কাজ করতে পারেনি। কাজের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। তবে কাজ বন্ধ হয়নি।

এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলী জানান, ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ বারানো হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করবে। কিন্তু সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেল উল্টো। ঠিকাদার কোন কাজই করছেনা। সবই চলছে চালাকির উপর। আদৌ এই ব্রীজ দুটি নির্মান হবেকি তা নিয়ে সন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করছে এলজিইডির যোগসাজসেই অধিক টাকা ব্যয়ে এই ব্রীজ পুনরায় টেন্ডার করার পায়তারা হচ্ছে। এতে করে সরকার মোটা অংকের টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই ঠিকাদারকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশী টাকা গচ্ছিত থাকায় এই ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

ট্যাগ :

ডাকসু নির্বাচনে দুপুরের মধ্যে প্যানেল ঘোষণা করবে ছাত্রদল

ব্রিজ নির্মান না করেই ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিল ঠিকাদার

প্রকাশিত : ০৩:১১:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩

কুষ্টিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ( এলজিইডি) টেন্ডারকৃত দু’টি ব্রিজ নির্মানের বেধে দেয়া সময় পার হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওই ব্রিজ দু’টি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে পারেনি। ফলে বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের এক মাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নিরব। পরে ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হলেও এখনো কাজ শুরু করেনি ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ দু’টি নির্মাণ না হওয়ায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়া-ঝাউদিয়া হয়ে আলমডাঙ্গা সড়কটি খানাখন্দে রূপধারণ করার পাশাপাশি বিশাল জনগোষ্ঠি পড়েছে বেকায়দায়।

২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১ মার্চ ২০২১ তারিখে বৃত্তিপাড়া হাট আরএন্ডএইচ জামজামী ভায়া ঝাউদিয়া হাট সড়কে ১৪’শ মিটার চেইনেজে ৮১ মিটার প্রিস্টেসড গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। বাস্তবায়ন করছেন এলজিইডি কুষ্টিয়া সদর। কিন্তু ব্রীজ নির্মাণ প্রথম দিকে কিছুটা কাজ করা হলেও পরবর্তিতে আর আলোর মুখ দেখেনি। কবে শেষ হবে এ ব্রীজ নির্মাণ তাও কেউ জানেনা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া আলমডাঙ্গা সড়কের বিত্তিপাড়া হতে ঝাউদিয়া বাজার যেতে উজানগ্রাম এলাকার গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে) খালের উপর ২৫ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য সেতু নির্মানের আদেশ দেয়া হয়।

এই ব্রীজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। একই বছরের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ পাওয়া সেতু নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর শেষ করার কথা। নির্ধারিত সময় পার হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০% । ওই সেতু থেকে মাত্র এক কিঃমিঃ দুরে একই সড়কের কুমার নদীর উপর ৮১ মিটার দৈর্ঘের আরেকটি সেতু নির্মানের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই সেতুটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর কার্যাদেশ দেয়ার পর চলতি বছরের ৮মার্চ সেতু নির্মান শেষ হবার কথা। কিন্তু কাজ হয়েছে আনুমানিক মাত্র ৩০%। শুধু মাত্র কয়েকটি পিলার দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ এক বছর কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদার পালিয়ে যাবার পর ঠিকাদার চালাক চতুর হওয়ায় ঈদুল আযহার আগে সামন্য রডের খাচা নির্মাণ করে শুর করে কাজ চলমান দেখিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা অগ্রিম তুলে নেন। সেতু দু’টি নির্মাণের কাজ পান কুষ্টিয়ার সৈয়কত এন্টারপ্রাইজ পরে কাজ পাবনা জেলার এমএনএম এ্্যান্ড এসই (জেভি) নামের যৌথ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার নুরুজ্জামান মিয়া। সোমবার সকালে সরেজমিনে ব্রীজ দু’টি দেখতে গেলে এলাকাবাসী জানায়, কুষ্টিয়া জেলার সঙ্গে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ড ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাকে সরাসরি যুক্ত করেছে এই সড়ক। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও ছোটবড় যানবাহন চলাচল করে ।

সেতু দু’টি নির্ধারিত সময়ে তৈরী না হওয়ায় ওই সব মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে চরম পর্যায়। সেতু দু’টি নির্মানের সময় পার হলেও শুধুমাত্র কয়েকটি পিলার ও রড খাড়া হয়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার আলী আকবর নামের এক চাষীর সাথে কথা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাবারে আপনারাতো স্বচক্ষে দেখচ্ছেন সেতুর কি হাল অবস্থা। প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে কোন কাজই হচ্ছে না। হঠাৎ ২/১জন লেবার আসে কি করে আবার চলে যায়। সেতু নির্মানের কোন কাজই হচ্ছেনা। আব্দুল আলিম নামের এক পথচারী বলেন, ঈদের আগে এসে রডের খাচা একটি তৈরী করে ঠিকাদার পালিয়ে গেছে। আর আসেনি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক নুরুজ্জামান মিয়ার সাথে মুঠো ফোনে কথা বলতে গেলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এলজিইডি সাবেক কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মন্ডল বলেন, কাজ ধীরগতিতে চলছে এটা আমরা জানি। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সমস্যা থাকায় তিনি সময়মত কাজ করতে পারেনি। কাজের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। তবে কাজ বন্ধ হয়নি।

এদিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলী জানান, ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজের মেয়াদ বারানো হয়েছে। দুই এক দিনের মধ্যেই তারা কাজ শুরু করবে। কিন্তু সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেল উল্টো। ঠিকাদার কোন কাজই করছেনা। সবই চলছে চালাকির উপর। আদৌ এই ব্রীজ দুটি নির্মান হবেকি তা নিয়ে সন্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করছে এলজিইডির যোগসাজসেই অধিক টাকা ব্যয়ে এই ব্রীজ পুনরায় টেন্ডার করার পায়তারা হচ্ছে। এতে করে সরকার মোটা অংকের টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই ঠিকাদারকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশী টাকা গচ্ছিত থাকায় এই ৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব