র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৪ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়। এ সকল হত্যাকান্ডের পিছনের হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়। গত ৯ জুলাই ২০২৩ তারিখে মাদক ব্যবসার টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ‘হৃদয় গ্রুপের সদস্যরা ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সদস্য আকাশ মাহমুদ নামক এক যুবককে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এছাড়াও এই গ্রুপের সদস্যরা গত ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামক এক ব্যক্তিকে এবং গত ২১ মার্চ ২০২৪ তারিখ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামক অপর এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। উক্ত হত্যাকান্ডগুলো এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র্যাব-৪ বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূলহোতা হৃদয় গ্রুপের প্রধান মোঃ হৃদয় হোসেন গিয়ার হৃদয় (২৪) অন্যান্য সদস্য মোঃ আরিয়ান আহম্মেদ জয় ড্যাগার আরিয়ান (২৩)নাসির উদ্দিন নাসু বাবা নাসু (৫২)মোঃ আবিরুল হক আবির কাটা আবির (২৪)জোবায়ের হাসান খন্দকার পাইটু জোবায়ের (১৯)মোঃ জাকির হোসেন রনি (৩০)মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহেদ (৩৬) এবং আমির হামজা (২১),সাভার,ঢাকা’দেরকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথর সদৃশ্য মূতি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডগুলোর সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন বলেন গ্রেফতারকৃতরা ঢাকা জেলার সাভার এলাকার ‘হৃদয় গ্রুপ’এর সদস্য। গ্রেফতারকৃতরা এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। তাদের গ্রুপে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। ৪-৫ বছর যাবৎ হৃদয়ের নেতৃত্বে ‘হৃদয় গ্রুপ’ পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃতরা এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকি পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল সাভার এলাকায় নির্মাণ কাজে চাঁদাবাজি করা।
প্রায়ই মাদক সেবন ও মাদক কেনা-বেচাসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো বলে জানা যায়। এই গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। গ্রেফতারকৃতরা আড়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় ডিজি পার্টির আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র মোবাইল চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার জের ধরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভিতর ‘হৃদয় গ্রুপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সংঘর্ষে সময়ে ভিকটিম আকাশকে ধারালো দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। জনশ্রুতি আছে গ্রেফতারকৃতরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ছিনতাইকৃত টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে গত ২২ মার্চ ২০২৪ তারিখ ভিকটিম আমজাদ’কে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে সাভার এলাকার সবুজবাগ পুকুর পাড়ে ফেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রেফতারকৃতরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায় এবং আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতার হয়।গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।





















