দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। সবশেষ দশবার দাম সমন্বয়ের মধ্যে ৯ বারই স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। আর গত তিন বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৮৮ দশমিক ৫১ শতাংশ বা ৬৩ হাজার ৬৯৭ টাকা।
প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচুর্যের অপর নাম স্বর্ণ। একে বলা হয়, অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ। হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়ত সে কারণেই এর মূল্য কখনও শূন্যে নামেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর মূল্য।
চলতি বছরের শুরু থেকেই উত্থান-পতনে টালমাটাল দেশের স্বর্ণের বাজার। ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪০ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাজুস, যার মধ্যে ২৪ বারই বাড়ানো হয়েছে দাম। সবশেষ দাম সমন্বয়েও স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলে সামনে দেশের বাজারে আরও বাড়বে দাম।
সংগঠনটির সবশেষ ৩ বছরের দাম সমন্বয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন বছরের ব্যবধানে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৮৮ দশমিক ৫১ শতাংশ বা ৬৩ হাজার ৬৯৭ টাকা। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমন্বয়কৃত দাম অনুযায়ী সেসময় ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ৭১ হাজার ৯৬৭ টাকায়। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৪ টাকায়।
সম্প্রতি সময় সংবাদের সঙ্গে আলাপকালে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিংয়ের চেয়ারম্যান ও বাজুস সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ওঠানামা করলে দেশের বাজারেও দাম সমন্বয় করা হয়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়ে। আবার বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী থাকলে দেশের বাজারেও দাম কমানো হয়।
স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বমুখীতায় দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্র্যান্ডের বড় বড় দোকানগুলোর বিক্রিও সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে গেছে। আর মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা তো আরও করুণ। ঊর্ধ্বমুখী এই দাম পুরো স্বর্ণ ব্যবসার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
স্বর্ণের দামের এই অস্থিরতার কারণ জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মূলত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ডলারের দাম ও ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর প্রভাবে বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী, যার প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও।
বর্তমানে বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোই ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণ মজুত করছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফার আশায় অধিক পরিমাণে স্বর্ণ কিনছেন। সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারে হু হু করে স্বর্ণের দাম বাড়ছে বলে জানান মাসুদ।
উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৪ টাকায়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ৯১ হাজার ৩৮ টাকায় কেনাবেচা চলছে।
এদিকে, বিশ্ববাজারেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১ আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫০ ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতিবেদন লেখার সময় স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম অবস্থান করছে ২ হাজার ৬৬০ দশমিক ৬৬ ডলারে। প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম একদিনে ৩ দশমিক ৫২ ডলার বা শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে বিশ্ববাজারে কেনাবেচা চলছে।