উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার উপকূলে শরণার্থী বোঝাই একটি নৌকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, দগ্ধ নৌকাটিতে মোট ৭৫ জন শরণার্থী ছিল। দুর্ঘটনার পর মাত্র ২৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর), এটি প্রথম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে।অভিবাসনপথে নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিয়মিত যাত্রার কারণে এমন দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ২৪ জনকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেছে। সংস্থাটি এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছে,‘সমুদ্রপথে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
এর আগেও এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে ইয়েমেন উপকূলে একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৬৮ শরণার্থী ও অভিবাসী মারা যান এবং নিখোঁজ হন আরও অনেকে।
আইওএমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরেই ভূমধ্যসাগরে অন্তত ২ হাজার ৪৫২ অভিবাসী বা শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। ইউরোপমুখী সমুদ্রপথ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী রুট হিসেবে চিহ্নিত।
২০১১ সালে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দেশটি ইউরোপগামী অভিবাসীদের ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়। বর্তমানে লিবিয়ায় প্রায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার অভিবাসী অবস্থান করছেন। গাদ্দাফির শাসনামলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় কাজ পেতেন কিন্তু তার পতনের পর থেকে দেশটি মিলিশিয়াদের সংঘাতে জর্জরিত।
এই দুর্ঘটনাও আফ্রিকা থেকে ইউরোপগামী শরণার্থীদের বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পাড়ি দেওয়ার সর্বশেষ উদাহরণ। গত আগস্টে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়, আর জুন মাসে লিবিয়া উপকূলে দুটি জাহাজডুবিতে ৬০ জন মারা যান বা নিখোঁজ হন।
অধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলো বলছে, লিবিয়ায় শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিত নির্যাতন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির শিকার হয়।
এদিকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে অভিবাসন ঠেকাতে সরঞ্জাম ও অর্থসহায়তা প্রদান করেছে। তবে কোস্টগার্ডের সঙ্গে নির্যাতন ও অপরাধে জড়িত মিলিশিয়ার সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান ধাপে ধাপে বন্ধ করায় সমুদ্রযাত্রা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দাতব্য সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দমনমূলক পদক্ষেপও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ফলে সংঘাত ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা বহু মানুষ লিবিয়ায় আটকা পড়েছে এবং অমানবিক পরিস্থিতিতে বন্দিশিবিরে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
ডিএস./