১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

মিয়ানমারে ধর্মীয় উৎসবে জান্তার হামলা, নিহত ৪০

ছবি সংগৃহীত

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় এক শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসবে। সেই আয়োজন ভেস্তে দিতে ভয়াবহ এক বোমা হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ৮০ জন। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যার দিকে মধ্যাঞ্চলীয় চাউং উ শহরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব পালনের পাশাপাশি জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির এক নারী সদস্য বলেছেন, সন্ধ্যায় থাদিঙ্গুত পূর্ণিমা উৎসবের জন্য চাউং উ শহরে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় উৎসবে অংশ নেওয়া লোকজন জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। ঠিক সেই সময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে সামরিক বাহিনী।

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উৎসব ও জান্তা-বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে দুটি বোমা ফেলে অন্তত ৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে আরও ৮০ জন আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, কমিটির সদস্যরা লোকজনকে হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। যে কারণে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই একটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার উড়ে এসে অনুষ্ঠানস্থেলে দুটি বোমা নিক্ষেপ করে।

ওই নারী বলেন, বোমার আঘাতে শিশুদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আমরা বিস্ফোরণের স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানবদেহের খণ্ড-বিখণ্ড অংশ, মাংসের টুকরা ও হাত-পা সংগ্রহ করছিলাম।

সোমবারের সেই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন চাউং উ এলাকার আরেক বাসিন্দা। তিনি বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্যারাগ্লাইডারটি মাথার ওপর উড়তে দেখে দৌড়াতে শুরু করে লোকজন। আর ঠিক তখনই দুটি বোমা ফেলা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে তিনি বলেন, আমার দুই সহযোদ্ধা আমার সামনেই মারা গেছেন। আরও অনেকেই আমার চোখের সামনে নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও সামরিক জান্তার হামলায় ৪০ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে এই হামলার বিষয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কোনও মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকেই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। সশস্ত্র বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে দেশটির গণতন্ত্রকামীরা।

এদিকে মিয়ানমারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটির জান্তা সরকার বলেছে, আগামী নির্বাচনই জাতীয় পুনর্মিলনের পথ তৈরি করবে। তবে, মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে সাজানো অভিহিত করে তা ঠেকানোর হুমকি দিয়েছে।

ডিএস./

জনপ্রিয়

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

মিয়ানমারে ধর্মীয় উৎসবে জান্তার হামলা, নিহত ৪০

প্রকাশিত : ১০:২২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় এক শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসবে। সেই আয়োজন ভেস্তে দিতে ভয়াবহ এক বোমা হামলা চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ৮০ জন। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যার দিকে মধ্যাঞ্চলীয় চাউং উ শহরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব পালনের পাশাপাশি জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির এক নারী সদস্য বলেছেন, সন্ধ্যায় থাদিঙ্গুত পূর্ণিমা উৎসবের জন্য চাউং উ শহরে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় উৎসবে অংশ নেওয়া লোকজন জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। ঠিক সেই সময় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে সামরিক বাহিনী।

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উৎসব ও জান্তা-বিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে দুটি বোমা ফেলে অন্তত ৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে আরও ৮০ জন আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, কমিটির সদস্যরা লোকজনকে হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। যে কারণে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই একটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার উড়ে এসে অনুষ্ঠানস্থেলে দুটি বোমা নিক্ষেপ করে।

ওই নারী বলেন, বোমার আঘাতে শিশুদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আমরা বিস্ফোরণের স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানবদেহের খণ্ড-বিখণ্ড অংশ, মাংসের টুকরা ও হাত-পা সংগ্রহ করছিলাম।

সোমবারের সেই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন চাউং উ এলাকার আরেক বাসিন্দা। তিনি বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্যারাগ্লাইডারটি মাথার ওপর উড়তে দেখে দৌড়াতে শুরু করে লোকজন। আর ঠিক তখনই দুটি বোমা ফেলা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে তিনি বলেন, আমার দুই সহযোদ্ধা আমার সামনেই মারা গেছেন। আরও অনেকেই আমার চোখের সামনে নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও সামরিক জান্তার হামলায় ৪০ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে এই হামলার বিষয়ে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কোনও মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকেই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। সশস্ত্র বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বেঁধে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে দেশটির গণতন্ত্রকামীরা।

এদিকে মিয়ানমারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটির জান্তা সরকার বলেছে, আগামী নির্বাচনই জাতীয় পুনর্মিলনের পথ তৈরি করবে। তবে, মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা ইতোমধ্যে আসন্ন নির্বাচনকে সাজানো অভিহিত করে তা ঠেকানোর হুমকি দিয়েছে।

ডিএস./