উত্তরের অক্সফোর্ড খ্যাত ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের ১০৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে। শতবর্ষী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে দুই দিনব্যাপী নানা আয়োজনে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।
সোমবার(১০নভেম্বর) সকালে রংপুরের ঐতিহাসিক এই কলেজ চত্বরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল কর্মসূচি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মুহম্মদ রেজাউল হক। তিনি বলেন,“কারমাইকেল কলেজ শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়,এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চিন্তার জগতে অবদান রেখে চলেছে।
উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। কলেজের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ব্যানার, ফেস্টুন ও রঙিন বেলুনে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে।
দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় গোটা ক্যাম্পাস। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর ঐতিহ্যের গর্বে ভরপুর এ আয়োজন যেন স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারমাইকেল কলেজের ইতিহাসে।
এসময় রংপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শামিমা আখতার, কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, উপাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,“কারমাইকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রতিষ্ঠান উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। আমরা চাই আগামী দিনে আধুনিক শিক্ষার প্রযুক্তি ও মানবিক চেতনার সমন্বয়ে এই প্রতিষ্ঠান আরও এগিয়ে যাক।”
দুই দিনব্যাপী আয়োজনে রয়েছে তারুণ্যের মেলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথম দিনের শেষ বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘তারুণ্যের মেলা’, যেখানে বিভিন্ন বিভাগ ও ক্লাব তাদের সৃষ্টিশীল কাজ প্রদর্শন করে। সন্ধ্যায় কলেজের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সংগীত, নৃত্য ও নাটকের পরিবেশনা, যা উপভোগ করেন শত শত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় দর্শক।
অধ্যাপক শামিমা আখতার বলেন, “কারমাইকেল কলেজ উত্তরবঙ্গের শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনন দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব।”
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন পর এমন প্রাণবন্ত আয়োজন তাদের ক্যাম্পাসজীবনে নতুন আনন্দ ও প্রেরণা যোগ করেছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা গর্বিত এই প্রতিষ্ঠানের অংশ হতে পেরে। আমাদের কলেজের ইতিহাসই আমাদের প্রেরণা।
প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. রেজাউল হক আরও বলেন, “এই কলেজের শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞান অর্জনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, তারা সমাজ পরিবর্তন, মানবিকতা ও নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে। নতুন প্রজন্মকে এই ঐতিহ্য রক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে।”
প্রসঙ্গত,১৯১৬ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয় রংপুর কারমাইকেল কলেজ। তৎকালীন বঙ্গ গভর্নর লর্ড টমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেলের নামে এ কলেজের নামকরণ করা হয়। দেশবিভাগ, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই প্রতিষ্ঠান। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এটি উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
ডিএস,.



















