সংগীতজ্ঞ মোবারক হোসেন খানের মরদেহ গতকাল সকাল ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানেই সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান এই সংগীতব্যক্তিত্বের প্রতি। এরপর বাদ জোহর শাহজাহানপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এ তথ্য জানিয়েছেন মোবারক হোসেন খানের মেয়ে রিনাত ফৌজিয়া খান।
রবিবার ভোর রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মোবারক হোসেন খান। পরে মরদেহ বারডেমের হিমাগারে রাখা হয়। তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী আয়েত আলী খানের ছেলে এবং আলাউদ্দীন খানের ভাতিজা।
রিনাজ ফৌজিয়া খান বলেন, ‘আমার ভাই বিদেশে থাকে, সে গতকাল সকালের মধ্যেই ঢাকায় এসে পৌঁছায়। সকাল ১১টায় শিল্পকলায় শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রামপুরায় আমাদের বাসার পাশের মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শাহজাহানপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। ’
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন মোবারক হোসেন খান। তিনি ১৯৩৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী। মা উমার উননেসা। চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোবারক হোসেন খান সবার ছোট।
পারিবারিকভাবে সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি মাইনর স্কুলে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ গ্রহণ করেন। পরে কুমিল্লা জেলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৫২ সালে মেট্রিক পাস করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে মোবারক হোসেন খানের কর্মজীবন শুরু হয়।
পরে তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশ হয় সংগীতবিষয়ক বই ‘সংগীত প্রসঙ্গ’। বিভিন্ন পত্রিকায় তার সংগীতবিষয়ক লেখা নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় বই ‘বাদ্যযন্ত্র প্রসঙ্গ’। এরপর তিনি রচনা করেন ‘সংগীত মালিকা’।
এই বইটিও প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। পরে তিনি সংগীত ও শিশুবিষয়ক ৫০টি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
মোবারক হোসেন খান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের বড় বোন সংগীতশিল্পী ফৌজিয়া ইয়াসমীনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা রিনাত ফৌজিয়া এবং দুই ছেলে তারিফ হায়াত খান ও তানিম হায়াত খান। তিনি একুশে পদক পেয়েছেন ১৯৮৬ সালে। এ ছাড়া পেয়েছেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৪) ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০২)।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ























