০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টালমাটাল তৈরি পোশাক খাত

  • এ. আর আকাশ
  • প্রকাশিত : ১২:০১:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 22

একদিকে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউÑ দুই চাপে টালমাটাল দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক খাত। মহামারির প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে উঠে দাড়াঁতে শুরু করলেও দ্বিতীয় ঢেউ সামলে উঠতে পারেনি এই খাত। অব্যাহত লোকসানের কারণে এই খাতের অনেক উদ্যোক্তার পথে বসার উপক্রম হয়েছে, এমনটিই জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, করোনা টিকাদান কর্মসূচির সফলতা ও নতুন প্রণোদনা তৈরি পোশাক খাতকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সহায়তা করতে পারে।
দেশে সংক্রমণ শনাক্তের প্রথম মাস মার্চ থেকেই পোশাক রফতানি ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হতে থাকে। এপ্রিলের শুরুতে প্রায় ৩শ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়। জুনের শুরুতে পোশাক কারখানাগুলো সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম চালু করলে স্বস্তি আসে এ খাতে। তবে বৈশ্বিক করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবার বাতিল হতে থাকে অর্ডার। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় গার্মেন্ট খাত অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেটা প্রথম ধাক্কায় হয়নি। কারখানাগুলোতে কার্যাদেশ কমে গেছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় কিছু অর্ডার স্থগিত হয়েছিল, জুন-জুলাইতে ক্রেতারা সেসব আদেশ পুনরায় দেয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর পরিস্থিতি খারাপ আরও হয়ে গেছে। তিনি জানান, তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন ক্ষমতার ন্যূনতম ৯০ শতাংশ কার্যাদেশ না থাকলে লোকসানে চালাতে হয়। এজন্য অনেক কারখানাই সেপ্টেম্বর থেকে লোকসানে চলে গেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সব মিলিয়ে রফতানি কমেছে ৫৭৩ কোটি ডলার বা প্রায় ৪৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পোশাক রফতানি কমে গেছে ৫৬০ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এক হাজার ৫৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ কম। চলতি বছরের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬২১ কোটি ডলার। গত বছর পোশাক খাতের শ্রমিক-কর্মকর্তাদের ছয় মাসের বেতন ভাতা দিতে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। দুই বছরের কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধে গার্মেন্টস মালিকদের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে গত বছরের নভেম্বরে ঋণ পরিশোধে আরও এক বছর সময় চেয়ে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। চিঠিতে তিনি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্তত ছয় মাসের জন্য স্থগিত অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্তত আরও এক বছর বাড়ানোর দাবি জানান। এর আগে গত বছরের আগস্টে ফের প্রণোদনা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বিজিএমইএ।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় বহিস্কৃত যুবদলের দুই নেতা, নিহত জুবায়ের যুবলীগের কর্মী

টালমাটাল তৈরি পোশাক খাত

প্রকাশিত : ১২:০১:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১

একদিকে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউÑ দুই চাপে টালমাটাল দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক খাত। মহামারির প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে উঠে দাড়াঁতে শুরু করলেও দ্বিতীয় ঢেউ সামলে উঠতে পারেনি এই খাত। অব্যাহত লোকসানের কারণে এই খাতের অনেক উদ্যোক্তার পথে বসার উপক্রম হয়েছে, এমনটিই জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, করোনা টিকাদান কর্মসূচির সফলতা ও নতুন প্রণোদনা তৈরি পোশাক খাতকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সহায়তা করতে পারে।
দেশে সংক্রমণ শনাক্তের প্রথম মাস মার্চ থেকেই পোশাক রফতানি ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হতে থাকে। এপ্রিলের শুরুতে প্রায় ৩শ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়। জুনের শুরুতে পোশাক কারখানাগুলো সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম চালু করলে স্বস্তি আসে এ খাতে। তবে বৈশ্বিক করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবার বাতিল হতে থাকে অর্ডার। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় গার্মেন্ট খাত অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেটা প্রথম ধাক্কায় হয়নি। কারখানাগুলোতে কার্যাদেশ কমে গেছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় কিছু অর্ডার স্থগিত হয়েছিল, জুন-জুলাইতে ক্রেতারা সেসব আদেশ পুনরায় দেয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর পরিস্থিতি খারাপ আরও হয়ে গেছে। তিনি জানান, তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন ক্ষমতার ন্যূনতম ৯০ শতাংশ কার্যাদেশ না থাকলে লোকসানে চালাতে হয়। এজন্য অনেক কারখানাই সেপ্টেম্বর থেকে লোকসানে চলে গেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সব মিলিয়ে রফতানি কমেছে ৫৭৩ কোটি ডলার বা প্রায় ৪৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পোশাক রফতানি কমে গেছে ৫৬০ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এক হাজার ৫৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ কম। চলতি বছরের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬২১ কোটি ডলার। গত বছর পোশাক খাতের শ্রমিক-কর্মকর্তাদের ছয় মাসের বেতন ভাতা দিতে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। দুই বছরের কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধে গার্মেন্টস মালিকদের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে গত বছরের নভেম্বরে ঋণ পরিশোধে আরও এক বছর সময় চেয়ে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। চিঠিতে তিনি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্তত ছয় মাসের জন্য স্থগিত অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্তত আরও এক বছর বাড়ানোর দাবি জানান। এর আগে গত বছরের আগস্টে ফের প্রণোদনা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বিজিএমইএ।