০৬:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চাষের আওতায় আসছে পতিত জমি

অনাবাদি পতিত ও অব্যবহৃত বসতবাড়ির চারপাশ চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরব্যাপী ৫ লাখ ৩ হাজার ১৬০টি কৃষক পরিবারের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন, এক লাখ ৭৭ হাজার ১২০ জন কৃষক-কৃষাণী ও ৫ হাজার ৭৬০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্প্রসারণের বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এরইমধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বসতবাড়ি, পুকুর পাড়, খালের পাড়, বাড়ির বাউন্ডারি, স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত অব্যবহৃত জমিতে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি বিস্তার ঘটেনি। এ সকল জমি পতিত পড়ে থাকে বছরের পর বছর। এ সব জমিতে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষের আওতায় আনা গেলে পারিবারিক শাক সবজি ও ফলমূলের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের সামগ্রিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অনাবাদি পতিত, অব্যবহৃত জমি চাষের আওতায় এনে শাকসবজি, ফল-মূল জাতীয় ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, চাষ উপযোগী উচ্চ মূল্যের বহুমুখী ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত জাত প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, মানসম্মত নিরাপদ ফসল উৎপাদন, ফসলের সংগ্রহ করে ক্ষতি কমানোর জন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, পাহাড়ি এলাকায় আদিবাসি অধ্যুষিত এলাকায় উৎপাদিত ফল ও সবজির ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাত শিল্প স্থাপনের সহায়তা দেয়া, পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবঙ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে পুষ্টি বাগান সৃজনের মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
প্রদর্শনী স্থাপন: প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লট স্থাপনের মাধ্যমে বছরব্যাপী ৫ লাখ ৩ হাজার ১৬০টি কৃষক পরিবারের পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী স্থাপন, ৭ হাজার ৩৮০টি স্যাঁতসেতে জমিতে কচু জাতীয় সবজি চাষ প্রদর্শনী, ৭ হাজার ৩৮০টি ছায়াযুক্ত স্থান, বসতবাড়িতে আদা, হলুদ চাষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণ: প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ ৭৭ হাজার ১২০ জন কৃষক-কৃষাণী প্রশিক্ষণ, ৫ হাজার ৭৬০ জন এসএএও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এনার্জি কুল চেম্বার স্থাপন: শাক-সবজি সংরক্ষণের জন্য ১২৮টি জিরো এনার্জি কুল চেম্বার স্থাপন করা হবে। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন: ১০০টি কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ: মেকানিক্যাল ভার্মিকম্পোস্ট সেপারেটর মেশিন ১০০টি, ফুট স্প্রেয়ার ৪ হাজার ৫৫৪টি হ্যান্ড স্প্রেয়ার ৯ হাজার ১০৮টি, বাড়িং নাইফ ১৩ হাজার ৬৬২টি, বুশ কাটার ১৩ হাজার ৬৬২টি সরবরাহ করা হবে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে কোনো জায়গায়ই যেন অনাবাদী পড়ে না থাকে। সেই নির্দেশনা মেনেই দেশের অনাবাদি, বসতবাড়ি সংলগ্ন পতিত জমি অর্থাৎ সকল প্রকার ভূমি কৃষি কাজে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। বছরব্যাপী সবজি ও ফল চাষের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এজন্য অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপরিশ করা হয়েছে।’

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

লোহাগাড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দিনমজুরের মৃত্যু, গাছেই ঝুলছিল ম’র’দে’হ

চাষের আওতায় আসছে পতিত জমি

প্রকাশিত : ১২:০১:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

অনাবাদি পতিত ও অব্যবহৃত বসতবাড়ির চারপাশ চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরব্যাপী ৫ লাখ ৩ হাজার ১৬০টি কৃষক পরিবারের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন, এক লাখ ৭৭ হাজার ১২০ জন কৃষক-কৃষাণী ও ৫ হাজার ৭৬০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্প্রসারণের বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এরইমধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বসতবাড়ি, পুকুর পাড়, খালের পাড়, বাড়ির বাউন্ডারি, স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত অব্যবহৃত জমিতে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি বিস্তার ঘটেনি। এ সকল জমি পতিত পড়ে থাকে বছরের পর বছর। এ সব জমিতে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষের আওতায় আনা গেলে পারিবারিক শাক সবজি ও ফলমূলের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের সামগ্রিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অনাবাদি পতিত, অব্যবহৃত জমি চাষের আওতায় এনে শাকসবজি, ফল-মূল জাতীয় ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, চাষ উপযোগী উচ্চ মূল্যের বহুমুখী ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত জাত প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, মানসম্মত নিরাপদ ফসল উৎপাদন, ফসলের সংগ্রহ করে ক্ষতি কমানোর জন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, পাহাড়ি এলাকায় আদিবাসি অধ্যুষিত এলাকায় উৎপাদিত ফল ও সবজির ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাত শিল্প স্থাপনের সহায়তা দেয়া, পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবঙ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে পুষ্টি বাগান সৃজনের মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
প্রদর্শনী স্থাপন: প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লট স্থাপনের মাধ্যমে বছরব্যাপী ৫ লাখ ৩ হাজার ১৬০টি কৃষক পরিবারের পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী স্থাপন, ৭ হাজার ৩৮০টি স্যাঁতসেতে জমিতে কচু জাতীয় সবজি চাষ প্রদর্শনী, ৭ হাজার ৩৮০টি ছায়াযুক্ত স্থান, বসতবাড়িতে আদা, হলুদ চাষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণ: প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ ৭৭ হাজার ১২০ জন কৃষক-কৃষাণী প্রশিক্ষণ, ৫ হাজার ৭৬০ জন এসএএও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এনার্জি কুল চেম্বার স্থাপন: শাক-সবজি সংরক্ষণের জন্য ১২৮টি জিরো এনার্জি কুল চেম্বার স্থাপন করা হবে। ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন: ১০০টি কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ: মেকানিক্যাল ভার্মিকম্পোস্ট সেপারেটর মেশিন ১০০টি, ফুট স্প্রেয়ার ৪ হাজার ৫৫৪টি হ্যান্ড স্প্রেয়ার ৯ হাজার ১০৮টি, বাড়িং নাইফ ১৩ হাজার ৬৬২টি, বুশ কাটার ১৩ হাজার ৬৬২টি সরবরাহ করা হবে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে কোনো জায়গায়ই যেন অনাবাদী পড়ে না থাকে। সেই নির্দেশনা মেনেই দেশের অনাবাদি, বসতবাড়ি সংলগ্ন পতিত জমি অর্থাৎ সকল প্রকার ভূমি কৃষি কাজে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে। বছরব্যাপী সবজি ও ফল চাষের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এজন্য অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপরিশ করা হয়েছে।’